পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক রেশমের সাগরতীরে ১২১ ছাড়ে ছাড়ে। ছুটিয়া গিয়া একটা কামরায় ঢুকিলাম। কিন্তু বসিবার পূৰ্ব্বেই ট্রেন চলিতে আরম্ভ করিল। কামরাট। লোকে ভরা—সকল বয়সের লোক, ছেলে, মেয়ে, পুরুষ, নারী—প্রায় সকলেরই সেইরূপ সুন্দর মুথের গঠন যা আলাপ আমরা প্রাচীন গ্রীস ও রোমের প্রস্তর-মূৰ্ত্তিতে দেখিতে পাই । এ-দেশের শিল্পে কেন যে দেহবাদ এত বেশ উন্নতি লাভ করিয়াছে তাঙ্কা এখানে বাস না করিলে বুঝা যায় না । ইটালীয়ান শিল্পীদের দেহ-প্রতি বুঝিতে হইলে ইটালিয়ান নরনারীর সৌন্দর্য পান করা দরকার । মাডোনারা এখানে আপনার চারিপাশে ঘুরিয়া বেড়ায় । মন সংস্কারবর্জিত ও খোলা রাখুন, আর এই সকল চলন্ত মাডোনাদের সৌন্দর্যের প্রভাব মনের ভিতর চুপি চুপি প্রবেশ করিতে দিন, তারপর গ্যালারীগুলি দেখিতে যান। তখন আপনি পেরুজিনো ও র্যাফয়েলের বিস্ময়প্রদ মূৰ্ত্তিগুলি আরও দরদের সহিত বুঝিতে পারি:বন, ঘে-প্রেরণা ফ্রা লিপ্পো লিপ্পি দোনাতেল্লো, বত্তিচেল্লি, তিশিয়ান ও অন্তান্ত অসংখ্য শিল্পীকে অনুপ্রাণিত করিয়াছে, তাহা আপনার কাছে স্পষ্টতররূপে পরিস্ফুট হইবে । ইটালীয়ান শিল্পের প্রাণ দুইটি জিনিষে— ক্যাথলিক চার্চের আধ্যাত্মিকতায় আর ইটালীয়ানদের— বিশেষ করিয়া ইটালীয়ান নারীর—মদালস সৌন্দর্যে । আমি সবেমাত্র একটু জায়গা খুজিয়া বসিয়াছি এমন সময় আমার নিকটবৰ্ত্তী একটি বেঞ্চ হইতে কে এক জন ডাকিয়া বলিল—ভারতীয় ? যে-দিক হইতে ডাক আসিল সেই দিকে চাহিয়া দেখিলাম আর এক জন ভারতীয় সেখানে বসিয়া । মধ্যবয়সী অল্প দাড়িওয়ালা লম্বী চেহারা, বেশ হৃষ্টপুষ্ট, মুখ দেখিয়া বুঝা যায় জীবনযাত্রা বেশ সুথেই সম্পন্ন করিতেছেন। ইনি আমাদের গভর্ণমেণ্টের এক জন উচ্চপদস্থ কৰ্ম্মচারী। আট মাসের ছুটি লইয়া ইউরোপ ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন । কুইরোতে ছিলেন, বাগদাদ, জেরুজালেম, ইস্তামূল ও এথেন্স হইয়া আসিয়াছেন । په لاَ عجم .L. ভদ্রলোকের সঙ্গে কথোপকথন আরম্ভ করিলাম । কি কথোপকথন হইল তাহা এখানে আগাগোড়া তুলিয়া দেওয়া নিম্প্রয়োজন । নানাবিধ বিষয়েই করিতে লাগিলাম—ইনি যে-সব দেশ অস্তিয়ার সমুদ্র-স্নানের দৃশ্য দেখিয়াছেন সেখানকার অধিবাসী ও তাহদের রীতিনীতি, সেখানকার জলবায়ু, সেখানকার ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বৃত্তান্ত ইত্যাদি। ভদ্রলোক ঠহার হাতব্যাগ খুলিলেন ও তাহার ভিতর হইতে আর একটি ছোট খলে বহির করিয়া বলিলেন, “আপনি ত অনেক কাল পান-সুপারি কিছুই খান নি, নিন একটু।” এই বলিয়া তিনি আমাকে কিছু সুপারি দিলেন । ট্রেন চলিতে লাগিল । কমরার ভিতর জনতার বচিালত । বাহিরে উজ্জ্বল রৌদ্রলোকিত শস্যভর ক্ষেত। এখানে-সেখানে দু-একটা কৃষকের কুটির। এখানেসেখানে দু-একটা গরু চরিতেছে। মাঝে মাঝে শস্তগন্ধ বহন করিয়া হঠাৎ বিকালবেলার হাওয়ার প্রবাহ কামরার ভিতর প্রবেশ করিতেছে । পথ ফুরাইয়াছে। আমরা অস্তিয়াতে পৌছিয়াছি। নবপরিচিতকে সঙ্গে করিয়া গাড়ী হইতে নামিলাম । ষ্টেশনের বাহিরে আসিলাম। সম্মুখে আনন্দ ফুৰ্বি হাসি কোলাহল ও জনতায় ভরা নূতন শহর; সুন্দর ঘরবাড়ি, স্বনার রাস্তাঘাট। দশ বৎসর আগে এখানে এই শহরের চিহ্নও