পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক রোমের সাগরতীরে SRNご লোককে আমি এই সব কথা বলিতে লাগিলাম । তার পর মানের ঘাটে আসিয়া পৌছিলাম। তখন বেল পড়িয়া আসিয়াছে : স্নান করিবার সময় আর নাই, বিশেষত: আমরা মানের জামাও সঙ্গে আনি নাই। তাই সমুদ্রের উপরে স্থিত প্রকাগু রেস্তোরাতে গিয়া বসিলাম । দুই গ্লাস ‘ভিলে’র অর্ডার দিলাম ও সমুদ্র-বায়ু বাজিত হইয়া মানের দৃশ্ব ও ঢেউয়ের খেলা দেখিতে লাগিলাম । ভারতীয় হইয়। ভিনোর আড়ার দিলাম বলিয়া দোয় দিবেন না । ভিনে মদ্য নয় । কবি দশজুচি বলিয়াছেন ভিনে৷ আঙ্গুরের রক্ত । তাছাড়া মনে রাখিবেন ইটালী ব্যাকাস-দেবতার দেশ ; মনে রাখি বন প্রাচীন রোমের নীতিবাগীশ কেটে। নিজেব বুকে তরবরি চালনা করিবার পূৰ্ব্বে চাকরকে ভিনের জন্ত হুকুম করিয়াছিলেন । বেস্তোর লোকে ভরা। শুধু আমরা দুই জন কালে আদমী । কাজেই ক্ষণেকের জন্ত সকলেরই দৃষ্টি আমাদের উপর পড়িল এক জন যুবক ও যুবতী আমাদের পাশের টেবিলে বসিয়াছিলেন । আমাদিগকে দেখিয়া বলিলেন— “ইজিপশিয়ান” । আমি তাহদের ভুল সংশোধন করিবার জন্ত বলিলাম—“না, ভারতীয়” । তার হহাতে একটু সম্প্রস্তুত হইয়া পড়িলেন, কারণ তার যে ভুল করিয়াছেন ও আমি যে তাঁহা সংশোধন করিয়া দিব, একথা তাহারা ভাবেন নাই । যাহা হউক ইহার ফলে তাহারা নিজেদের টেবিল আরও নিকটে আনিয়া আমাদের সঙ্গে আলাপ আরম্ভ করিলেন । ভারতবর্ষ সম্বন্ধে ও গান্ধী সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন । গান্ধীজীর নাম এখানে প্রায় সকলেই জানে । মহিলটি রবি ঠাকুরের কয়েকখানা বই পড়িয়াছেন । তিনি ঠার কবিতা সম্বন্ধে আলোচনা করিতে লাগিলেন। রবিবাবু যখন এখানে আসিয়াছিলেন, তখন মছিলটি নাকি তাহাকে নিকট হইতে দেখিয়াছিলেন । বিশেষতঃ রবিবাবুর চোখের গভীর দৃষ্টি নাকি তাহাকে মুগ্ধ করিয়াছিল। এখন পর্য্যস্ত তিনি সেই চোখের দৃষ্টি ভূলিতে পারেন নাই। আমাদের দেশের দুই জন মনীষীর প্রতি এদের শ্রদ্ধা দেখিয়া আনন্দ অনুভব করিলাম । তবে এই শ্রদ্ধা কতদূর আন্তরিক বলিতে পারি না : হঠাৎ রেস্তের"fত চঞ্চলত দেখা দিল । এক জন বেশী সমুদ্রতরস্থ প্রমোদসৌধ অস্তিয় ভারি চটপটে মহিল ভিতরে ঢুকিলেন । সকলেই ইহাতে একটু উদগ্রীব ও চঞ্চল হইয়া উঠিলেন । আমরা একটু বিস্মিত হইয়া ভাবিতে লাগিলম এই মহিলাটি কে । ইটালিয়ান ভদ্রলোক বলিলেন—ইনি আমেরিকার ছায়াচিত্রের বিখ্যাত অভিনেত্রী—গ্রীষ্মে চিত্তবিনোদনের জন্ত রোমে আসিয়াছেন । একটু যত্নসহকারে তাহার দিকে তাকাইলাম । সিনেমতে বহুবার এই হুন্দর মুখ দেখিয়াছি বটে। প্রজাপতির মত হাল্লা এর কায়িক আন্দোলন সকল সিনেমা-দর্শকের কাছেই পরিচিত । আমাদের পক্ষে এক্ট ছায়াচিত্রের অভিনেত্রীর সঙ্গে পরিচয় করার অীকাঙ্কণ বামনেব চ:দ ধরিবার অকিঞ্জিকারই মত । কাজেই সেদিক হইতে দৃষ্টি ফিরাইয়া আমরা ভিনের শেষ বিন্দু পান করিয়া রেস্তোর হইতে বহির হইয়া আসিলাম । শহরের দক্ষিণে একটি পাইন-বন আছে । এই পাইনবনে “কাস্তেল ফুজানো” নামে সুন্দর পার্ক । এই পার্কে পূৰ্ব্বে কোন সন্ত্রাস্ত রোমান পরিবারের বাগানবাড়ি ছিল। এখন ইহা সরকারী সম্পত্তি । সরকার হইতে ইহার দরজা সাধারণের কাছে খুলিয়া দেওয়া হইয়:ছে । অমরা এই পাইন-বনের দিকে চলিলাম ।