পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্রনাথের কাব্যে শ্রেয়োবোধ ও আনন্দ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  • ांछिनिएकाठम কল্যাণীয়েষ্ণু—

তোমার “রবিদীপিতা” বইখানিতে আমার গৰ্ব্ব করবার যথেষ্ট বিষয় আছে—কিন্তু আমার কাছে ওর মূল্য কেবল সে জন্যে নয়। নিজের কবিতার মধ্যে নিজের অন্তরতম যে পরিচয় স্বত উদ্ভাবিত হয়, নানা ভাববৈচিত্রের মধ্য থেকে তার ঐক্যটিকে আবিষ্কার করা কবির পক্ষে, এমন কি অধিকাংশ পাঠকের পক্ষেই, অসাধা । যে চিত্তদপণে নিজের স্বরূপ প্রতিফলিত হ’লে নিজেকে প্রত্যক্ষ দেখতে পাওয়া সম্ভবপর হয়, সেই স্বচ্ছ দৃপণ দুলভ । তোমার বইখানি পড়তে পড়তে তোমার উপলব্ধির মধ্যে আমার কবি-প্রকৃতিকে অনুভব করে আনন্দ পেয়েছি। ইতিপূৰ্ব্বে কোন কোন গ্রন্থে আমার কাব্যের ব্যাখ্যা দেখেছি, কিন্তু সে যেন শরীরতত্ত্বগত দেহের বিশ্লেষণ, তাতে মৰ্ম্মগত প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায় নি। তুমি সেই প্রাণ-রহস্য উদঘাটিত করেছ ব’লে বনে করি। তাতে অনেক জায়গায় আমার নিজেকে ভাবতে হয়েছে। তার একটা দৃষ্টান্ত, যথা, তুমি লিখেছ আমার কাব্যে শ্রেয়োবোধের প্রাধান্ত নেই। যদিও তার কোন কোন ব্যতিক্রম পাওয়া যায়, তবু আমার মনে হ’ল মোটের উপরে তোমার কথাটা সত্য। আমার বোধ হয় এ-কথাটা সাধারণতঃ ভারতবর্যের প্রকৃতি সম্বন্ধে খাটে। যুরোপীয় খৃষ্টান ধৰ্ম্মে ভাল মন পাপ পুণ্য ঘটিত দ্বন্ধের সংঘাত সবচেয়ে প্রবণরূপে দেখা যায়। এই জন্যে সে ধৰ্ম্ম শ্রেয়োবুদ্ধিপ্রধান। ভারতীয় আৰ্য্যধৰ্ম্ম আধ্যাত্মিক, সে ধৰ্ম্ম দ্বন্দ্বাতীত পরিপূর্ণতার জন্ত প্রয়াসী । কৰ্ত্তবাবুদ্ধির প্রেরণা নিঃসন্দেহ আমার নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে । সম্ভবত তার আদর্শ যুরোপীয় শিক্ষা থেকেই আমার মনের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। এই আদর্শ স্থাসাধ্য প্রলে আমাকে কঠোর ভাবেই প্রবর্তিত করেছে। কিন্তু আমার কাব্যের মধ্যে জামার চিত্তে যে গৃঢ় লক্ষ্য দেখা যায়, সে কর্তব্যসিদ্ধির অভিমুখে মর তাতে দেখতে পাই কৰ্ম্মকে অতিক্রম করে ষে অমৃতম অবকাশ দেবভোগ্য, তারই জন্ত জামার যথার্থ উৎকণ্ঠা। এই নৈষ্কৰ্ম্ম অক্রিয় নয়। এর গভীরতার মধ্যে যে-ক্রিয়া আ৷ে তা স্বাভাবিকী, তা স্বষ্টিসংকল্পের সহজ আনঙ্গে ৰেগবর্তী প্রকৃতির সৌন্দৰ্য্য এই জন্তই শিশুকাল থেকে আমাকে এমন নিবিড় আননা দিয়েছে। সে আনন্দ ইস্কুল-পালানে ছেলের ছুটির আননা আমার কাব্যে আমার ছুটি, আমার ছবি আঁকাতেও তাই । আমি শাস্তিনিকেতনে যে আশ্রম রচনা করতে নামলেম, তার প্রবর্তন তপোবনের আদর্শে । আনন্দের দ্বারা সৌন্দর্যের দ্বারা শিক্ষার সাধনাকে অবকাশের মধ্যে ফলবতী ক’রে তুলব, এই কল্পনার আনন্দই একদ অামাকে এই কাজে আকর্ষণ করেছে—যে-অসীম অবকাশের মধ্যে চন্দ্রস্বর্য্যগ্ৰহতারকার নিরস্তুর উদ্যম দীপালি উৎসবের মত প্রকাশ পেয়েছে, যে অবকাশের মধ্যে ফুল ফুটুচে, ফল ফলচে, শস্ত উঠচে পেকে, তাদের প্রাণের চেষ্টাকে নেপথ্যগত ক’রে তাদের প্রাণের প্রকাশ বিশ্বের কাছে উৎস্থ হচ্চে—সেই অস্তগূঢ় প্রাণপুর্ণ অবকাশকেই আমার কৰ্ম্মের মধ্যে কামনা করেছি। এ-কথা স্বীকার করতেই হবে যে জাতীয় অনুষ্ঠান নানা স্বভাবের নানা লোককে নিয়ে সম্পন্ন করতে হয়, সেখানে “আনজান্ধোৰ গত্ত্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে” মন্ত্রটি চাপা পড়ে, সেখানে প্রকাশ হতে থাকে “স তপস্তপ্ত, সৰ্ব্বমস্বল্পত যদিদংকিঞ্চ " অর্থাৎ সেখানে শ্ৰেয়োবুদ্ধিই দ্বন্দ্বের সমাধানে সৰ্ব্বদাই উদ্যত হয়ে থাকে। এই নিরস্তুর সংগ্রামের মাহাত্মবোধ জামরা যুরোপের কাছে পেয়েছি। সুতরাং এই সংগ্রামে নানা ক্ষেত্রেই আমাদের নামতে হয়েছে । তবুও কর্ণের মধ্যে ভার প্রয়াসটাই যদি প্রধান হয়ে ওঠে তৰে আমার মন বলতে থাকে বিপুল ক্ষুধাশালী গল্পক্ষ যে জন্মেছিল সে কেবল খাদ্য ও আশ্রয়