পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহায়ণ অনুর কথার স্বত্র ধরিয়া মামীম বলিতে সুরু করিলেন, “ই বাবা, এ রকম ছন্নছাড়া দিন কাটান একটুও ভাল দেখায় না । বিয়ে কর, সংসারী হও, ছেলে-পুলে নিয়ে ঘর সংসার কর । আমরা দেথে শুনে মরি।” মুখ-দুঃখের প্রসঙ্গ সঙ্গে করিয়া, ক্লস্তি দেহ-মন লইয়া আসিলীম শুইতে । কিন্তু ঘুম যেন আসিয়'ও আসে না । প্রদীপের অনুস্থল আলোয় অনুর মুখখান সম্পূর্ণ করিয়া দেখিতে পাই নাই, তবুও যেটুকু দেখিয়াছিলাম তাঁহাতেই মনে হইয়াছিল, বৈধবার কঠিন কৃচ্ছতায় ওর বর্ণের ঔজ্জ্বল্য হইয়া উঠিয়ছে মান ও রুক্ষ,–ছ’ই-চাপা স্তিমিত অগুনের মতই। ওর হাসি-খুর্ণ, ওর গতিচাঞ্চল সৰ্ব্বক্ষণই যেন চাপ, উথলাইলেও কখনও দু-কুল ছাপাইয়া উচ্ছসিত হইয়া ওঠে না । মন মনে অনুশোচনা হইতে লাগিল, ওকে দাসী-পর্যায়ে ফেলা আমার সঙ্গত হয় নাই, আর ওর স্বাভাবিক প্রশ্নে অতটা বিরক্তিবোধের কোন সঙ্গত হেতুও ছিল না । কাঠের জানালা খুলিয়া দিতেই তার ভরা নিশীথ আকাশখানির নিঃশব্দ সঞ্চরণ অনুভব করিলাম । দেখিলাম, এই সমাহিত নিস্তব্ধতার জনশুঠ মহারণ্যে আমিই এক জাগিয়া বসিয়া রহিয়াছি। এই শাস্ত নীরবতার প্রতিবেশের অবসরে হঠাৎ আমার এই মনটা বন্ধন-ছিন্ন পাগুলা বেড়িার মত দিক্‌বিদিক জ্ঞানশূন্ত হইয়া দিল ছুটু। তারপর রামায়ণ-যুগের মুখপোড়া হনুমানের মত বিশাল বিস্তুত অতীতের সাগর fডঙাইয়া সেই মোল বছরের বয়সটায় গিয়া হাজির হইল । মানুষের মন শুধু অভূতই নয়, তার নিলজ্জতারও তুলনা নাই। কারণ সে দেখা মুরু করিয়াছে, আমার মা প্রচুর চোখের জল খরচ করিতেছেন, “ঐ মেয়ের সঙ্গেই—” বাবা গত্যন্তর নাই দেখিয়া রাজী হইলেন । এবং আমার ক’নে ঐ নয়-দশ বছরের মেয়ে অনু-এক হাতে এক মুণ লবণ এবং কোচড় ভরিয়া কঁচা কুল লইয়া সঙ্গিনী:দর ডাক দিতেছে, “আয়ু না ভাই, আমগাছতলায় বসে কুল খাই গে—” - - কিংবা ૧ા স্বাঞ্ছ, আমার কনে আমার হাত ধরিয়া ক্ষণিকের মায়ণ RRS টানাটনি সুরু করিয়াছে, “জীবন-দা ভাই, ফুটো কঁচা আমি পেড়ে দাও না ভাই ।” মন্দ নয়। ঘোমটা টানিয়া এই অন্ন আমায় ইসারায় ডাকিবে,-মন্দ কি ? এই ছোট্ট অনুর মনোরঞ্জনের ভাবনায় আমার মাথায় দেশোদ্ধারের স্বপ্ন স্থান পাইত না । ছোট থাট শাস্তিঅশাস্তির জালায় মন সৰ্ব্বদাই ব্যাপৃত থাকিলে এই মুক্তি ক,মনার প্রচণ্ড স্বপ্ন-ক্ষুধার হাত এড়ান ঘাইত । মনকে শাসাইতে লাগিলাম, এ বড় অন্তায় । দেশ-মায়ের অশ্রুসিক্ত মুগ, শৃঙ্খলের নিদারুণ বেদনা—এ ছাড়া আর কিছু ভাবার তোমার অধিকার নাই । যে কাজের জন্ত আমি আছুত, সে কাজ সাফল্যমণ্ডিত বলা যায়। ছেলের কাজের জন্ত এক টুকরা জমি সংগ্ৰহ করিতে পারিয়াছে এবং গ্রাম গ্রামে ঘুরিয়া অর্থসংগ্রহও মন্দ হয় নাই । তাই ছেলেদের ঐকাস্তিক ইচ্ছা, আমি তাহদের সঙ্ষের কর্ণধার হইয়া বসি । আমার ভবঘুরে জীবন, কোন স্থানে স্থায়ী হইয়া বসিয়া জীবনযাত্রা নিৰ্ব্বাহ করা অদৃষ্ট লেখা নাই। কিন্তু হইলে ভালই হইত। পল্লীমতীর স্নেহচ্ছায়ায় বলিয়া কাজ করা দেশ-দেশাস্তরে শুধু বস্তৃতাবাজি করিয়া বেড়ানোর চেয়ে ঢের ভাল । এতে তৰুঘরের মায়ার কিছু আস্বাদ পাওয়া যায়। তই বিদায়-দিবসে অনুভব করিতেছি, আমার উৎসাহ যেন নিস্তেজ হইয়া আসিয়াছে, একটা অলস ক্লাস্তিতে আমার সৰ্ব্ব দেহমন যেন আচ্ছন্ন হইয়া আসিতে ছ । দেখিতেছি, এই অপরাহের অবসন্ন রৌদ্র ও ছায়ার লীলার প্রতিবেশে মানুষ ও মাটির মধ্য একটা অতি অদ্ভুত ময়র স্নেহনীড় গড়িয়া উঠিয়াছে, তাহার বাধন কাটানো কম কঠিন নয়। ত ই বোধ করি, পল্লীম'য়ের ছেলে বৃহত্তর জীবনের সদ্ধfম বহির হইতে গেলেই দেখে মায়ের জলভরা চোখের নীরব হাতছানি, আর শুমল তরুলতার পিছুটানে তাহার গতি হয় বারে বরে প্রতিহত । এই ক'দিনই মামীম যে-কথাটার প্রতি অস্পষ্ট আভাস দিবার চেষ্টা করিয়া ছন, আজ তাঁহা হইল একটু স্পষ্ট । জানাইলেন, অম্বর সৎ-মেয়ে পাত্ৰী হিসাবে মন্দ নয়, বয়স অল্প হইলও খুব বড়স্ত গড়নের মেয় এবং তার ওপর