পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\こか○o SS8S দেখা-সাক্ষাৎ হয় নাই, এত দিন যে এত স্রোত বহিয়া গেল, সে-সমস্ত যেন তাহার জীবনে কোন চাঞ্চলাই আনে নাই। যামিনী মুগ্ধ হইয়া তাহার দিকে চাহিল। তাহার সমস্ত মন উদ্বেলিত হইয়া উঠিল । মনে হইতে লাগিল, তাহার একটা হাত চাপিয়া ধরে, দুই হাতে জড়াইয়া ধরিয়া অনুতাপের বিগলিত অশ্রুতে তাঁহাকে ভাসাইয়া দেয় । কিন্তু সেই শান্ত বিষাদগুতিমার দিকে চাহিলে সমস্ত উচ্ছ্বাস আপনা-আপনি শাস্ত হইয় আসে। মনে হয় যেন তাহার কাছে যাইবার উপায় নাই। নিজের চারিদিকে সে কোন এক মুদূরতার বেষ্টন দিয়া আপনাকে সকলের কাছ হইতে সরাইয়া রাখিয়াছে। যামিনী তখনও তাহার দিকে নিৰ্ণিমেষ দৃষ্টিতে চাহিয়াছিল। নিৰ্ম্মল! আবার কহিল, ‘তুমি একটু বসে। আমি এখনই আসছি ।” সে চলিয়া গেল। নিখিল কিছুক্ষণ পরে ছাদ হইতে আসিয়া যামিনীকে উদ্দেশ করিয়া কহিল, ‘তুমি তাহ’লে রাত্রিটা এখানেই থাকবে ত? আমি একবার চন্দ্রকাস্তবাবুর খবর নিয়ে বাড়ি যাই ।” ‘থাকব ? যামিনী তন্ময় হইয়া কি যেন ভাবিতেছিল । চমকাইয়া উঠিয়া কহিল, থাকব ? না না, আজ থাক্‌, নিখিল । আজ আমার কেমন যেন ভয় করছে।’

  • ভয় কিসের ? পাগলের মত কি যা-ত বলছ ? আসবে আর চলে যাবে ? নিজের তুচ্ছ খেয়ালের জঙ্গে তুমি অনর্থক কত লোকের মনে কষ্ট দাও 1’

‘ন না, খেয়াল নয়। আজ আমি কিছুতেই থাকতে পারব, না নিখিল ।” তাহার কণ্ঠস্বরে অত্যন্ত ব্যাকুলত, ছেলেমানুষের মত একটা অবুঝ ভাব। নিখিল অবাক হইয় তাহার দিকে চাহিল । যামিনী তাহার একটা হাত ধরিয়া টানিয়া কহিল, চল |’ - ‘ীড়াও । অন্ততঃ খবর নিয়ে আসি চন্দ্রকাস্তবাবু কমন আছেন । ডাক্তারে কি ব’লে গেল |’ ‘তবে তুমি যাও। ভালই আছেন নিশ্চয় । আমি ঠতক্ষণ রাস্তায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি ।--নিখিল, তোমার কেটে এলাচ আছে ? ছোট এলাচ ?”

  • এলাচ I’ ‘ইn, এলাচ । তুমি বুঝতে পারছ না, আজও যে আমি সন্ধোয়“এখনও যে আমার মনে হচ্ছে মুখে গন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় ওর সামনে । না না, আজ নয় আজ নয়। অল্প দিন ? যামিনী অত্যন্ত দ্রুতপদে সিড়ি দিয়া নামিয়া নীচে চলিয়া গেল ।

বিমূঢ়ের মত ক্ষণকাল সেইদিকে চাহিয়া থাকিয় নিখিল একটা নিঃশ্বাস ফেলিল । নিৰ্ম্মল বাবার বুকে মালিশ করিতেছিল। চন্দ্রকান্ত অত্যস্ত বাস্ত হইয়া বারংবার বলিতে লাগিলেন, “নিৰ্ম্মল মা, এবারে তুমি ওঘরে যাও মা । রাত হয়ে যাচ্ছে।’

  • ই্যা, এখনই যাব বাবা ।” মুরলী তাহার ঘরের ঘড়ীত দম দিতে আসিয়াছিল। চন্দ্রকান্ত জিজ্ঞাসা করিলেন, “কটা বাজ লো ? যামিনীর খাওয়া-দাওয়া হয়েছে ত : আজ তাকে এঘরে আসতে বারণ ক’রে । রাত অনেক হয়েছে । সে নিশ্চয় ক্লাস্ত ?

মুরলী কহিল, ‘কে, জামাইবাবু ? তিনি ত তখনই চলে গেছেন । সে যে অনেক ক্ষণ হ’ল । চা ক’রে নিয়ে গিয়ে তাকে কত ডাকাডাকি করলুম। নিখিলবাবু বললেন, "তার বিশেষ জরুরি কি কাজ ছিল । আর এক মিনিটও বসবার সময় নেই । আবfর কাল আসবেন ।” চন্দ্রকান্ত কিছুক্ষণ অসাড়ের মত পড়িয়া থাকিয় তাহার পর বলিলেন, “নিৰ্ম্মলা ! এবারে তুমি যাও । আর আমাকে মালিশ করবার দরকার নাই।’ নিৰ্ম্মলার কোনরূপ ভাবাস্তর দেখা গেল না । সে সযত্বে ধীরে ধীরে তাহার বুকের বোতাম বন্ধ করিয়া দিয়া কহিল, ‘বাবা, তুমি কিছু ভাবনা ক’রো না । সমস্ত ঠিক হয়ে যাবে ? ‘সত্যি বলছ ? হা, ঠিক হয়ে যাবে। আমি জানি ঠিক হবে । তার আর বড় বেশী দেরিও নেই। আমি যেদিন তোমায় মুক্তি দিয়ে যাব সেদিন থেকেই সমস্ত ঠিক হয়ে যাবে।” অৰ্দ্ধেক তন্ত্রাচ্ছল্পের মত বিজড়িত স্বরে তিনি একই কথা বারংবার বলিতে লাগিলেন । নিৰ্ম্মলা তহিকে আর বেশী উত্তেজিত করিবার ভয়ে আস্তে-আস্তে প। টিপিয়া টিপিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। যাইবার সময় আলোটা কমাইয়া দিয়া গেল।