পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ দর্শ করিবার অধিকার পর্যন্ত র্তাহার ছিল না। স্থাকে লুকাইয়া ব্ৰজদাসী মাঝে মাঝে ছেলেকে তাহার কোলে বসাইয়া দিত, কিন্তু কৰ্ত্তা একথা জানিতে পরিলে কি অনর্থ ঘটিবে সেই আশঙ্কাতেই তিনি এত কাকূল হইয় উঠতেন যে, ছেলেকে আদর করিতে ভরসা পাইতেন না, এক মুহূর্তের জন্ত তাহাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়াই ব্ৰজদাসীর কাছে ফিরাইয়া দিতেন । সেই পৌত্র আজ বড় হইয়াছে । ভৈরব রায় পৌত্রের নাম দিয়াছিলেন কীৰ্ত্তিনারায়ণ । বাহির মহলে কাছারীবাড়ির দক্ষিণে যে বৈঠকখানা দালানে ভৈরব রায় থাকিতেন তাহার সম্মুখে ছিল এক প্রশস্ত, বাধানে আঙ্গিন । বৈঠকখানা দালানের রকের উপরে যেখানে দুই ঝাড় জুই ফুলে শাদা হইয়া চারিদিকে মুগন্ধ ছড়াইত ও বড় বড় পদ্মকরবীর গাছ দুইটিতে গুচ্ছ গুচ্ছ লাল ফুল দুটিয়া থাকিত সেখানে একথান শ্বেত পাথরের জলচৌকির উপর বসিয়া ভৈরব রায় পৌত্রের শিক্ষাবিধান করিতেন । প্রকাগু বাড়ির মধ্যে একমাত্র এই বৈঠকখানার লোনটিই অক্ষত দেহে দাড়াইয়াছিল। অন্দরমহলের ত্রি কয়েকটি কোঠ ব্যবহারযোগ্য ছিল, বাকী সব রিত্যক্ত বিশাল ভগ্নস্ত,পে পরিণত হইয়াছিল। ছোটড় নানা আকারের অশ্বথগাছ ভগ্নস্ত,পের মধ্যে মাথা ড়িা করিয়াছিল, সেই সকল গাছ বাহিয়া উঠিয়াছিল না জাতির কণ্টকলতা । অন্দরের সীমানার মধ্যে ছল কালীদহ নামে পুকুরটি—চারিদিক ভগ্নস্ত,পে পরিবৃত ধন একখানি স্বচ্ছ কাচখণ্ড । সান-বাধানে ঘাট ও উচ্চ পাড়ের নীচে স্ফটিকের মত জল টল টল করিত । কালীদহের চারিটি পাড় জঙ্গলে ঢাকিয়া গিয়াছিল, শুধু iানবাধানে ঘাটগুলি সেই জঙ্গলের আক্রমণ হইতে অব্যাহতি iাইয়াছিল। উত্তর দিকের ঘাটের ডানপাশে একটা মদ্ভুত গম্বুজাকৃতি কোঠ, চুড়ায় একখানি লোহার ত্ৰিশূল দfখয়া বোঝা যায় যে এককালে শিবমন্দির ছিল। কালীদহের জল কাকচক্ষুবৎ পরিষ্কার হইলেও সে জলে কহ স্নান করিত না, একমাত্র পরিচারিক ব্রজদাগী ছাড়া । তাহার এই বিশেষ . . অধিকারে কেহ কোনও প্রশ্ন করিত না । .*. - কীৰ্ত্তিনারায়ণ Nご8ふ অনারের সঙ্গে ভৈরব রায়ের কোন সম্পর্ক ছিল না, র্তাহার হাতীর দাতের খড়মের শব্দ অনারের সীমানার মধ্যে কখনও প্রতিধ্বনিত হইত না । তাহার স্নান, ভোজন, শয়ন বহিৰ্ব্বাটতে সম্পন্ন হইত, সন্ধ্যাহিকও বহিৰ্ব্বাটীর মধ্যে অবস্থিত ভগ্নপ্রায় মন্দিরের একাংশে চলিত। বৈঠকখানা দালানে বাহিরের লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ইহার একদিকে পাশাপাশি রক্ষিত দুইটি পালঙ্কে পৌত্র ও পিতামহ শয়ন করিতেন। পালঙ্কের শিয়রে দেয়ালের গায়ে সারি সারি নানা আকারের তরবারি ও ছোরা সজ্জিত ছিল, কোনখানির বাট সোনার, কোনটি রৌপ্যের পায়ার দিকে বহুসংখ্যক বল্লম হুক দিয়া দেয়ালের গায়ে আবদ্ধ ছিল, ইহাদের কোনটির মাথা দুইদিকে করাতের দাতের মত, কোনটির মাথা টাঙ্গির মত, কোনটি দু-ফলা, কোনটি এক ফল । ঘরের অন্তদিকে গোলাকার একটি শ্বেত পাথরের প্রকাণ্ড টেবিল, তাহার দুই দিকে দুইটি প্রকাও আলমারী। একটির মধ্যে নানা আকারের সেকালের তৈয়ারী বন্দুক— কয়েকটি তাহদের দৈর্ঘ্যের জন্ত দৃষ্টি আকর্ষণ করিত। দেখিলে বিশ্বাস করা কঠিন হইত যে, এত লম্বা ও এত ভারী বদুক সাধারণ মানুষ কোনকালে ব্যবহার করিত। অপর আলমারীতে ছিল ছোটবড় নানা আকারের খানকয়েক খাপখোলা তরবারি ও ছোরা, মরিচ পড়িয়া একেবারে অব্যবহার্য হইয়া গিয়াছে, আর গুটি তিনেক অদ্ভুত চেহারার বেঁটে কন্দুক—রিভলভারের মত কতকটা । লোকে বলিত এইগুলির প্রত্যেকটি নররক্তরঞ্জিত, এজন্ত আলাদা করিয়৷ রাখা হইয়াছিল । ছুইটি আলমারীর পাশে অনেকগুলি চামড়া-বাধানো ঢাল দেওয়ালে আবদ্ধ । শ্বেতপাথরের টেবিলের উপরে গম্বুজাকৃতি কাচের আবরণে ঢাকা কয়েকটি বড় বড় সেকেলে ঘড়ি, একটি বাদে বাকী সবগুলি বদ্ধ। যে ঘড়িটি চলিতেছিল সেট একটু অদ্ভুত রকমের। একটি পরীমূৰ্ত্তি হাতে একটি ছোট হাতুড়ী লইয়া দাড়াইয়া । বাজিবার সময় হইলে পৰীটি হাত তুলিয়া সম্মুখের একটি কাসীয় মত্ত বস্তুক্তে স্নাঘাত করিত আর জলতরঙ্গের বাজনা বাজিল উঠিত, সঙ্গে সঙ্গে নারীকণ্ঠের গান শোনা যাৱত। টেবিলের এক পাশে ছোট A: