পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NDRYo S38షి একটি দামামা, পিতলের দেহ, কতকটা বড় বাটীর আকারের । তাহার একধারে দুইটি পিতলের ডাণ্ডা, মাথা গোল বলের মত। এই অভূত দামামা সম্বন্ধে নানারকম কিংবদন্তী প্রচলিত ছিল । এই সকল কিংবদন্তীর মধ্যে কিছু সত্য ছিল কিনা বলিতে পারি না । লোকে বলিত মাঝে মাঝে দ্বিপ্রহর রাত্রে পুথিবী যখন নিবিড় সূচীভেদ্য অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইয়া যাইত, হঠাৎ গুমগুম শব্দ করিয়া দামামা বাজিয়া উঠিত, কেমন একটা অস্বাভাবিক, অশুভ ধ্বনি অন্ধকারের বুক চিরিয়া পল্লীবাসীদের কানে আঘাত করিত—আর এক অজানা আতঙ্কে তাহারা শিহরিয়া উঠিত । এই দামামা বাজিয়া উঠিলেই নাকি এক জন বিশালকায় বুদ্ধ কুস্তিগীরের মত লাঙটপরা, বাদ্ধক্যের ভারে কুক্তদেহ, প্রকাণ্ড শাদা গোফে মুখের অৰ্দ্ধেক আবৃত ও লম্বা শাদ দাড়ির অগ্রভাগটি দুইদিকে টানিয়া দুই কানের সঙ্গে বাধা, বা-কেমিরে একথানি বাকানো তরবারি, পিঠের দিকে একখানি ছোরা, ডান হাতে একগাছা সুতীক্ষ বল্লম লহয়—ছায়ামূর্তির মত ধীরে ধীরে বৈঠকখানার রকের উপর অসিয়া দাড়াইত । দাড়াইয়া লোহা-বাধানে। বল্লমের গোড়ার দিকটা ব্লকের উপর তিনবার ঠুকিত, সঙ্গে সঙ্গে দামামীর চীৎকার হঠাৎ থামিয়া যাইত আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, সেই বিশালকায় বৃদ্ধটি রকের উপর উঠিয়া শব্দ করিবার পর যে-মুহূৰ্ত্তে দামামার শব্দ থামিয়া যাইত তার ঠিক পরমুহূর্তে একটা চাপা কান্নার শবদ শোনা যাইত । লোকে বলিত ষে, রকের নীচে আঙ্গিনীর প্রাস্তে পশ্চিমদেশীয় স্ত্রীলোকের পোষাকে একটি স্ত্রীলোক মুখটি সুদীর্ঘ ঘোমটায় আবৃত করিয়া বৃদ্ধের পিছনে পিছনে আসিয়া দাড়াইত, এবং তাহারই সুদীর্ঘ ঘোমটার মধ্য হইতে চাপা কান্নার শব্দ আসিত । এই স্ত্রীলোকটি কয়েক বৎসর আগে মারা গিয়াছে । সে ছিল বিশালকায় বৃদ্ধটির স্ত্রী আর বৃদ্ধটি ছিল ভৈরব রায়ের দেহরক্ষী ও লাঠিয়ালবাহিনীর সর্দার লাল সিং । অনেক কাল এই দম্পতি সুখে ঘরকন্না করিয়াছিল । তার পর হঠাৎ কি এক কাগু হইয়া গেল—তাহীদের একমাত্র সন্তান বয়স্থা মেয়েটি গেল মারা । কি অপরূপ সুন্দরীই সে ছিল। আর সেই সঙ্গে সঙ্গে দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী রায়-পরিবারের ংশম্প্রদীপ, বৃদ্ধ ভৈরব রায়ের জ্যেষ্ঠপুত্রটিও হঠাৎ মার গেলেন । এই শোচনীয় দুর্ঘটনার কাহিনী আজিও এক রহস্তজালে আবৃত রহিয়াছে, সে রহস্তজাল লোকে কোন কালে ভেদ করিতে পারে নাই, পরিবেও না । কস্তাকে হীরাইয়া লাল সিংহের স্ত্রী দীর্ঘকাল জীবিত ছিল না । কিন্তু এতদিন পরেও যখনই গুম-গুম শব্দ করিয়া দামামা গভীর রাত্রে, স্থচীভেদ্য অন্ধকারের বুক চিরিয়া বাজিয়া উঠিত তখনই তাহার ক্ৰন্দনরত ছায়ামুৰ্ত্তি স্বামীর পিছনে পিছনে কি যেন অকথিত অভিযোগ লইয়া ভৈরব রায়ের বৈঠক থানীর রকের নীচে অসিয়া উপস্থিত হইত । দামামার শব্দ থামিয়া গেলে ভৈরব রায় বৈঠকখানার দরজা খুলিয়া বাহিরে আসিতেন। ঋজু, দীর্ঘ, মেদবর্জিত দেহ,-উজ্জ্বল গৌরবর্ণ, দড়িগোফ পরিষ্কার করিয়া কামানো, শুক্লকেশ ও ঘন যুগ্মভ্র, গলায় যজ্ঞোপবীত দক্ষিণ বহুতে সোনার তাগ, বামহস্তের মণিবন্ধে একীি অষ্টধাতুর সরু বালা, পায়ে হাতীর র্দাতের খড়ম। দেখিহে মনে হয় যে বয়স অনেক হইয়াছে, কিন্তু দাড়াইবার ও চলিবার কঠিন দৃপ্ত ভঙ্গী ও শুক্লবর্ণের বিশাল যুগ্মভ্র দ্বারা অৰ্দ্ধ আচ্ছাদিত দুই চোথের উজ্জ্বল অস্তর্ভেদী দৃ;ি দেখিয়া বয়সের পরিমাণ অনুমান করা সহজ হইত না । কণ্ঠ স্বরের সতেজ গাম্ভীর্যাও মধ্যবয়স্ক শক্তিশালী পুরুষের মত হাতীর দীতের খড়মের ঠকঠক শব্দ করিয়া ভৈরব রী: রকের উপর আসিলে কি যেন মন্ত্রবলে সেই কুঞ্জদেহ বৃদ্ধ হঠাৎ সোঁজ হইয়া দাড়াইত, দাড়াইয়া বিদ্যুৎগতিতে কোমরের বাকানো তরবারি খাপ হইতে খুলিয়া সামরিব কায়দায় অভিবাদন করিত। সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গিনার স্ত্রী মুর্তিটিও মাটিতে পড়িয়া সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিত। তার পর ভৈরব রায় নিম্নকণ্ঠে কি যেন আদেশ করিতেন, প্রভূভক্ত বৃদ্ধ নিৰ্ব্বাক ভাবে শুনিত । প্রভুর বক্তব্য শেষ হইলে আবার অভিবাদন করিয়া বল্লমের দ্বারা রকে ঠক্‌ করিয়া একবার শৰ করিত। সঙ্গে সঙ্গে যেন উহার প্রত্যুত্তরেই গুম করিয়া দমামার একবাং গম্ভীর প্রতিধ্বনি হইত। রক হইতে নামিয়া কুজদেৱ বৃদ্ধ ধীরে ধীরে আঙ্গিনা পার হইয়! যাইত, পিছনে পিছঃ