পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\LH8 "প্রবাসীস্ট ఏనుదఎt ছিল না । প্রৌঢ়া ব্ৰজদাসীকে সে ডাকিত দাদী বলিয়, নিজের পৌত্রের মতই তাহার অমৃগতও ছিল । কিন্তু কালীদহে স্নান করিয়া সেদিনকার সেই অদ্ভুত অভিজ্ঞত লাভ করিবার পর হইতে কেমন করিয়া যেন র্তাহার চিত্তের ধারা বদলাইয়া গেল ! কি এক অদম্য তৃণ৷ ও ভয়ের বশে ব্রজদাসীর প্রতি সকল ভালবাসা মুছিয়া গিয়া ক্রুদ্ধ, ব্যর্থ আক্ৰোশে তাহার চিত্ত আলোড়িত হইতে লাগিল । নিজের মনের এই অদ্ভুত অবস্থাস্তর অনুভব করিয়া তিনি ভীত হইয়া উঠিতেন। আত্মসংযম করিবার সকল প্রয়াস ব্যর্থ হইতে দেখিয়া অসহায়ভাবে বিলাপ করিতেন । ক্রমে রায়-পরিবারের হিংস্র রক্ত র্তাহার ধমনীতে ধমনীতে কি যেন এক ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত বহিয়া চঞ্চল হইয়া ছুটিতে লাগিল । বৃদ্ধ ভৈরব রায় সন্ধ্যা-বনানা সারিয়া বৈঠকখানার দালানের রকে বসিয়া আছেন—দুই ঝাড় জুই গাছ ফুলে শাদা হইয়া গিয়াছে, গন্ধে চারিদিক আমোদিত । সেই গন্ধের প্রভাবে তাহার চিত্ত আজি নিৰ্ম্মল, উদার, প্রশাস্ত হইয়া উঠিয়াছে। বৈশাখী পূর্ণিমার পূর্ণচন্দ্র চারি দিকে অজস্র রূপালী আলো ছড়াইয়া দিয়াছে, সুদূর অতীতে লুম্বিনী উদ্যানে এমনই দিনে এক মানবশিশু শোকতাপব্যাধিক্লিষ্ট ধরণীর সাস্তুনার জন্ত শাস্তিবার্তা বহিয়া জননীজঠর হইতে ভূমিষ্ট হইয়াছিলেন। আত্মসমাহিত ভাবে কতক্ষণ তিনি বসিয়াছিলেন থেয়াল নাই। হঠাৎ একটা দূরাগত, অস্পষ্ট আৰ্ত্তনাদ শুনিয়া তিনি সচকিত হইয়া উঠিলেন । শব্দ গুনিয়া সচকিত হইয়া ভৈরব রায় দাড়াইয়া উঠিলেন, এক অজানা আতঙ্কে তাহার দীর্ঘ দেহ শিহরিয়া উঠিল। উত্তেজিত ভাবে তিনি রকে পায়চারী করিতে লাগিলেন, হাতীর র্দীতের খড়ম ঠকঠক ঠকঠক করিয়া শবা করিতে লাগিল। কতক্ষণ এইভাবে কাটিয়া গেলে হঠাৎ তিনি দেখিতে পাইলেন জ্যোৎস্নাধৌত প্রশস্ত প্রাঙ্গণ পার হইয়া একটি ছায়ামুৰ্বি ফুলিতে দুলিতে র্তাহার দিকে অগ্রসর হইতেছে। গম্ভীর কণ্ঠে তিনি ডাকিলেন, কে ? ছায়ামূৰ্ত্তি আরও অগ্রসর হইল, আরও নিকটে আসিল, তার পর রকের সিড়ির নীচে স্থির হইয়া দাড়াইল । ভৈরব রায় দেখিলেন ব্রজদাসী । ব্ৰজদাসী মাটিতে না ধাড়াইয়া একটু উপরে স্থির হইয়া আছে, ব্ৰজদাসীর মাথা বুকের উপর ঝুলিয়া পড়িয়ছে, ব্ৰজদাসীর অঙ্গে অসংখ্য আঘাত-চিহ্ন, তীক্ষধার অস্ত্ৰ দিয়া সৰ্ব্বাঙ্গে কে যেন খোচাইয়াছে, দেহ বাহিয়া রক্তধারা নীচে পড়িতেছে। ভৈরব রায়ের সকল অঙ্গ হিম হইয়া গেল ! কয়েক মুহূৰ্ত্ত তিনি স্থির হইয়া দাড়াইয়া রহিলেন, দুই চক্ষু ফাটিয়া প্রাণ যেন বাহির হইয়া আসিতে চাহিতেছিল। তার পর চমক ভাঙিল। হঠাৎ পল্লীবাসী সকলে উৎকর্ণ হইয়া শুনিল গুম-গুম, গুম-গুম শব্দ করিয়া ভৈরব রায়ের দামামা কৰ্কশ কণ্ঠে বাজিয়া উঠিল। পূর্ণচন্দ্র ঘনকৃষ্ণ মেনের অন্তরালে লুকাইল, ছাই-রঙের অসংখ্য মেঘখণ্ড মাথার উপরে ছুটাছুটি করিতে লাগিল, ঘন ঘন বিদ্যুৎরেখা সমস্ত নভস্তল চিরিয়া ফেলিতে লাগিল। তখনও গুম-গুম করিয়া কর্কশ কণ্ঠে ভৈরব রায়ের পাগলা দামামা বাজিতেছে। কুক্তদেহ বৃদ্ধ লালা সিং কখন তাহার বাঁকানো তরবারি কোমরে বাধিয়া রকের নীচে আসিয়া দাড়াইল, প্রভুর আদেশ বহন করিয়া কখন সে চলিয়া গেল, ভৈরব রায়ের হাতীর দাতের খড়মের ঠক্ঠক্ ঠকৃঠক্ শব্দের তখনও বিরাম নাই । দেখিতে দেখিতে পূৰ্ব্বকাশ লাল হইয়া উঠিল, মনে হইল কালীদহের পাড়ে যেন আগুন লাগিয়ছে। লক্ লক্ করিয়া ণে অগ্নির লোলশিখা আকাশে যেন ধাইয়া উঠিল। মনে হইল শত শত শিবা অশুভ চীৎকার করিয়া উঠিল। মনে হইল বহু কণ্ঠের করুণ ক্রনীনের রোলে চরাচর মূৰ্ছিত হইয়া পড়িল । শুভ্র বস্ত্ৰে সৰ্ব্বদেহ আচ্ছাদিত করিয়া স্বল্পভাষিণী, শাস্তু, মৃদুস্বভাব। ব্ৰজদাসী আর ফিরিল না, স্কন্দোপম উজ্জ্বল রূপ লইয়া রায়-বংশের শেষপুরুষ যুবক কীৰ্ত্তিনারায়ণ আর ফিরিলেন না, বাকানো তরবারি কোমরে বাধিয়া নিমকহালাল কুক্তদেহ বৃদ্ধ ভূত্য লাল সিং আর ফিরিল না । পাগলা দামামা নিস্তব্ধ হইয়াছিল, কালীদহের পাড়ে