পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NԶ6 Ն ইহার পর তিনি কয়েকটি শিষ্য সংগ্ৰহ করিয়া পরিব্রাজকরূপে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলেন । এইরূপ পরিত্রাজক ৰোগী সম্প্রদায়ে তেতিপক্ষী-রূপী আত্মার নানা রূপক গল্প প্রচলিত আছে, তিনি ঐগুলি শিথিয়ছিলেন । তাহার কবিতাতে যোগ-সম্বন্ধে হিন্দী ও আরবী উভয় ভাষার পারিভাষিক শব্দ পাওয়া যায় । মহম্মদের হাতের লেখা পাওয়া যায় নাই, বোধ হয় লিখিতে পারিতেন না, অথবা লিখিতে শিথিয়ছিলেন কিন্তু পরিব্রাজক গুরুর সহিত ঘুরিয়া হতে পাকাইবার অবসর পান নাই, কিন্তু কবিতা-রচনায় তাহার ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা ছিল । তিনি ছোট ছোট সুন্দর কবিতা রচনা করিতেন ও ঠাহীর শিষ্যের গ্রামে গ্রামে সেই গান গাহিয়া ভিক্ষা করিত । এক দিন তাহারা জায়স গ্রামে তাহার রচিত এক বারমাসা গাহিতেছিল । এই জায়স গ্রাম মোগলসরাই হইতে ১৩২ মাইল দূরে লখনউর পথে প্রতাপগড় ও রায়বেরেলীর মধ্যে রেলের ধারে অবস্থিত । গ্রামের জমিদার বা রাজ। ঐ গাতে আকৃষ্ট হইয়া বালকদের সম্পূর্ণ বারমাসা গতিতে বলিলেন ও গীত কাহার রচিত জিজ্ঞাসা করিলেন । বালকরণ বলিল, এ গীত আমাদের গুরুর রচনা, তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন কিন্তু তিনি সন্ন্যাসী, কখনও কোন গ্রামে প্রবেশ করেন না । এই কথা শুনিয়া রাজার শ্রদ্ধা বাড়িয়! গেল, তিনি স্বয়ং গ্রামের বাহিরে গিয়া মহম্মদের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন ও অনুনয় করিয়া আপনার এক বড় বাগানে আসিয়া তহিকে বাস করিতে বলিলেন । মহম্মদ উস্তান-বাটীতে বাস করিতে স্বীকৃত হইলেন না, তখন র্তাহার জন্ত বাগানের এক নির্জন অংশে এক খড়ের কুটির বাধা হইল, সেই কুটীরেই তিনি জীবনের শেষ অংশ কাটাইয়াছিলেন। জয়সের রাজার বাটীর কাছেই তাহার গোর এখনও সম্মানিত বা পূজিত হইতেছে । এই রাজার অনেকগুলি সস্তান জন্মিয়াছিল, কিন্তু একটিও বঁাচে নষ্টি । মহম্মদের আসিবার পর (তাহার আশীৰ্ব্বাদের ফলে ) এক পুত্র হইয়। দীর্ঘজীবী হইয়াছিল বলিয়া রাজা, রাজবংশ ও অনেক গ্রামবাসী তাহার ভক্ত হইয়া পড়িলেন। ঐ বাগানে বাসকালে ক্ষে প্রবাসন o ఏరి8S মহম্মদ পদ্মাবৎ রচনা করেন । যোগী-সম্প্রদায়ে আত্মীর পার্থীর সহিত তুলন। অন্ত দেশেও প্রচলিত আছে। ইরানের প্রসিদ্ধ স্বকী সাধু ও কবি ফরীদ-উদ্দীন অত্তারের আত্ম সম্বন্ধে “মনৃতকৃ-উল-ত্যার” [ পার্থীর কথা ] নামক পুস্তক ফার্স সুফী-সাহিত্যে একখানি অতি উচ্চ শ্রেণীর গ্রন্থ। ইংরেজ কবি ফিট্স্জিরাল্ড এই পুস্তকের কয়েকটি কবিতার ভাব লইয়া যে কবিতা রচনা করিয়াছেন তাহা তাহার “ওমর খৈয়াম” নামক কবিতা-পুস্তকে আছে । ভারতের মেণ্টে-সম্প্রদায়েও তোতার গল্প নানা আকারে প্রচলিত আছে, মহম্মদ সেই রূপক বর্ণনা পদ্মবিতে করিয়াছেন, ক্রমে লোকে তাহার রূপককে ইতিহাস ভাবিয়াছে । এরূপ ভ্রম অন্ত স্থানেও হইয়াছে, শুনিয়াছি অনেকে বৰ্দ্ধমানের রাজবাটীর নিকট মালিনীর মালঞ্চ ও সুন্দরের খনিত সুড়ঙ্গের স্থান নির্দেশ করিবার চেষ্টা করিয়া বিফল হইয়াছিলেন । মহম্মদ বোধ হয় রত্নসিংহ ইত্যাদির নাম শুনিয়াছিলেন, সেই নামগুলি আপনার কবিতাতে ব্যবহার করিয়াছেন মাত্র, চিতোর-অবরোধের সময়ে অলাও-উদ্দীন কি কি করিয়াছিলেন তাহার সবিস্তার বর্ণনা মহম্মদ জানিতেন না । সেকালে ইতিহাস কেবল ফার্সী ভাষাতে ছিল, মহম্মদ সে ভাষা জানিতেন না, তাহার সঙ্গীরাও ভিখারী সাধু-সন্ন্যাসী বা বৈরাগীর দল ছিলেন কেহ ফার্স ভাষার ধার ধারিতেন না । তবে অন্ত কোন লোকের মুখে ১৪০ বৎসর পূর্বের যুদ্ধের গল্প শোনা সম্ভব বটে, কিন্তু সে শোনা-গল্পও অত্যুক্তিপুর্ণ হওয়া সম্ভব। সেকালের হাতে লেখা পুস্তকও দুষ্প্রাপ্য ছিল, নানা দিক দিয়া চিন্তা করিলে মহম্মদের মত লোকের বিশ্বাস্য ইতিহাস না-জানাই সম্ভব বোধ হয় । ইহা ছাড়া কবির উদ্দেশ্যও ইতিহাস লেখা নহে, গল্পে যেমন এক রাজা ও তাহার দুয়ো সুয়ো রাণীর কথা বলা হয় সেইরূপ গল্প বলিয়াছেন, কেবল রাজা-রাণীর একটা নাম দিয়াছেন মাত্র। চার শত বৎসর পরে তাহার রাজা ও রাণীর যে জীবনের খোজ করা হইবে তাহা তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নাই, ওরূপ ভাবিলে তিনি হয়ত রাজা-রাণীর নাম দিতেন না । আজকাল পদ্মাবৎ গল্প বা কবিতা দেবনাগর অক্ষরে ও উড় অক্ষরে লিখিত দুই প্রকার পাওয়া যায়, তাহাজের পাঠে