পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ কলরব জুড়িয়া দিয়াছে—ইহাদের মধ্যে বসিয়া বনমালী আর আশা সীমাহীন কাল হইতে খসিয়া পড়া এক একটি মুহূৰ্ত্ত কুড়াইয়া সঞ্চয় করিতে লাগিল। জোয়ার আসিবে রাত্রি ফুটায়—সেই জোয়ারে নৌকা ছাড়া হইবে। মাথাভাঙার উত্তর দিকে খালের ভিতর দিয়া বড় নদীতে পড়িবে—সেখান দিয়া গিয়া বাবুইঘাটার ঙ্গেটিতে ষ্টীমার ধরিতে হইবে। চিড়া মুড়ি বাহির করিয়া মাঝির খাওয়া শেষ করিয়াছে—বনমালীও সঙ্গে করিয়া খাবার আনিয়াছিল, দু-জনে মিলিয়া শেষ করিল। খাওয়ার শেষে এক জন মাঝি সুর করিয়া গান ধরিয়াছে— ...কোন বন্ধুকে লক্ষ্য করিয়া কে যেন বলিতেছে— তোমার লাগিয়া আমার চক্ষের পানি আর বক্ষের ব্যথা বাধা মানে না—তোমার আশায় সারা জীবন আমি পথের পাশে বসিয়া আছি—তুমি বারেক আসিয়া আমার দরদ জুড়াও••• স্বরে কথায় গানটি বনমালীর ভারী চমৎকার লাগিল। আশাও তন্ময় হইয়া গিয়াছে। এই পরিপূর্ণ উন্মুক্ত আবৃহাওয়ায় আর মনের এই অতি-পরিচিত প্রতিবেশে গানটি বনমালীকে অবশ করিয়া দিল । আশা পাশে বসিয়াছিল। আরও পাশে আসিয়া বলিল--তুমি তো বাশী বাজাতে এককালে, না ? বনমালী বলিল—কে বললে তোমায় ? —কে আবার বলবে ! সবাই ত জানে। পাড়ার সবাই বলে—সেদিন তঞ্জদের বড়ধেী বলছিল—যাত্রায় নাকি তুমি কেষ্ট সেজে বাণী বাজাতে, মা’র কাছে শুনিছি—এইটুকু বেলা থেকে বঁাশীর সখ ছিল তোমার—একবার বাশী কেড়ে নিয়েছিল বলে কি কান্না তোমার—ভাত খাও নি কিছু না—আচ্ছ অত সখ, এখন আর বাজাও না কেন ? বনমালী কথা কহিল না । —ধ্য গো সে বঁাশীটা গেল কোথায় ?•••আমার বিয়ের পরে ত দেখতে পাই নি—তুমি নাকি বঁাশী বাজালে পার্থীরা ডেকে উঠত—সত্যি সত্যি এক.দিন শুনিও আমাকে, বাণী শুনতে আমি ভারী ভালবালি-সে বঁাশী রেখেছ কোথায় বল ত ? ...” কনালী বাল—এই গঞ্জে লেভানি ब्रि-ि রঙ্গিল" নায়ের মাঝি లిపి আশার বিশ্বাস হয় না। বলিল—আহা, সব কথাতেই তোমার ঠাট্টা, সাধের বাণীটা জলে ফেলে দিলে ?•••কার ওপর রাগ করেছিলে, শুনি ? —তোমার দিদির ওপর— আশা বুঝিতে পারে নাই। বলিল—দিদি কে ? —ম্যম। - কথাটা বলিয়াই বনমালী বুঝিল মিথ্যা কথাটা বলা তাহার উচিত হয় নাই । সত্য সত্যই সুষমার উপর রাগ ত সে করে নাই । রাগ হইয়াছিল বঁাশীর ওপর—সেই রাগেই সে বাণী বাজান ছাড়িয়া দিয়াছে। নিশীথ রাত্রে একএক দিন বনমালীর যখন ঘুম আসে না—বন-তুলসীর গন্ধে বাতাস উন্মত্ত হইয় ওঠে—তখন সেই সময়ে ছাদে উঠিয়া বশি বাজাইতে তাহার ইচ্ছা করে। ইচ্ছ করে—বাশীর ফুটা দিয়া প্রাণের সমস্ত গোপন কথা আকাশে এবং আকাশের তারকালোকে ছড়াইয়া দেয়। যেখানে মৰ্ত্ত্যলোকের বাণী পৌছায় না, সেই গ্রহ হইতে গ্রহাস্তরে তাহার বাণী কাদিয়া কাদিয়া মাথা কুটিয়া মরুক !... আশা বলিল--চুপ ক’রে রইলে যে বড়—বললে না ত ? —কি বলব ? আশা বলিল—কেন দিদির ওপর রাগ করেছিলে••• —সে অনেক কথা— আশা বলিল—হৌক অনেক কথা, বলতেই হবে—‘না’ বললে শুনছিনে•••আমাকে বলতে তোমার কি হয়েছে— আমি ত তোমার পর নই— সে আজ চার বছর আগের কথা । গ্রীষ্মকাল । জমিদারীর কাজে বনমালীকে শহরে আপিতে হইবে ! অনেক বুঝাইয়া-মুজাইয়া সুষমাকে ধনমালী শাস্তু করিয়াছিল। বাহিরে গরুর গাড়ী ছাড়াইয়াছিল—পোটলাপুষ্টুলি লইয়া বনমালী উঠতে যাইবে এমন সময় বলা নাই কওয়া-নাই এক গলা ঘোমটা দিয়া সুষম সরাসরি গাড়ীতে আসিয়া বসিল । তখন আর কেইবা বোধে-জার কেইবা বোঝা সে সম নাই তখন। - কামালী ও বলিয়াছিল—কোথায় বাৰে তুমি ?