পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وفي وفياتية লেখনীকে বাধা দান করে। কেবল তাই নয়, এক-এক সময়ে অক্ষরগুলি হঠাৎ বন্ধুভাস্থত্রে আবদ্ধ হয়ে এমন ভাবে রূপান্তরিত হয়ে বায় যে তাদের আর পৃথক ভাবে চেনা যায় না। রসায়নে যেমন "হাইড্রোজেন" এবং “অক্সিজেন" মিলিয়ে দিলে “জল” উৎপন্ন হয়, কিন্তু চৰ্ম্মচক্ষে ঐ উপাদানগুলিকে আর দেখা যায় না, তেমনি আমাদের বর্ণমালার কোন এক অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় ছুটি বা তিনটি অক্ষর মিলে এমন একটি নুতন অক্ষর উৎপন্ন হয় যে তাতে মূল অক্ষরগুলির পরিচয় আর চৰ্ম্মচক্ষে পাওয়া যায় না । বাংলা লিপিতে তার অনেক উদাহরণ পাওয়া যেতে পারে, ষেমন, ক+ত=ক্ত ; ক+র=ক্র ; も研+q3=g;&+河=和;卒+s=5F;a+マ+S=高I আবার একই অক্ষর অন্ত অন্য অক্ষরের সঙ্গে মিলিত হয়ে নানা রূপ ধারণ করে, যেমন, ধ+৭=ফ ; হ+৭=তু । কোন কোন স্বরবর্ণের সময় অবস্থাটা আরও বিস্ময়কর হয়ে দাড়ায়, দৃষ্টান্তস্থলে “উ” যখন অন্ত অক্ষরের সঙ্গে মিলিত হয় তখন চারটি বিভিন্ন রূপ ধারণ করে—কু, রু, গু, হু । এই রূপান্তরের আবার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম পাওয়া যায় না। এই সকল কারণে দেথা যায় যে এক বাংল; লিপিতেই প্রায় ৫৫০টি পৃথক পৃথক অক্ষর সম্ভব এবং মুদ্রণে অতগুলি অক্ষর বা টাইপের প্রয়োজন হয় । এই অক্ষরবিভ্রাটে মুদ্রণ যে কত কঠিন ও জটিল ব্যাপার হয়ে বাড়িয়েছে তা ১৩৩৯ সনের পৌষ-মাঘ ও চৈত্র মাসের ‘প্রবাসী’তে “বাঙ্গল টাইপ ও কেস” শীর্ষক প্রবন্ধ পড়লেই সহজে হৃদয়ঙ্গম হবে। এই অক্ষরবীহুল্যের বিড়ম্বন যে কেবল বাংলা লিপিতেই আছে তা নয়, দেবনাগরীসভূত সমস্ত লিপিতেই এটা পাওয়া যায় এবং যদি এই অনুপাতে অক্ষরের সংখ্যা নির্ণয় করা হয় তবে দেখা যাবে যে কেবল দেবনাগরীলঙ্কৃত ভাষাগুলিতেই “প্রায় চার বা পাঁচ হাজার অক্ষর (type) লেখার এবং মুদ্রণে ব্যবহৃত হয় । * সহজেই এখন আমরা এই সিদ্ধাস্তে উপস্থিত হতে পারি যে দেবনাগরী বা দেবনাগরীলঙ্কৃত কোনও লিপিই আদর্শলিপি বলে গ্রাহ হতে পারে না, কেননা, আদর্শলিপির যে-সকল লক্ষণ বা গুণগুণ উচিত এগুলিতে ఎ98S তা নেই। এ-কথা যদি সত্য হয়, তবে যদি কোন আদর্শলিপি পাওয়া যায় আমরা তা গ্রহণ করব ন! কেন, এবং সেটা গ্রহণ করা যদি উচিত মনে করি তবে ভারতের সকল ভাষা ও উপভাষা এই আদর্শলিপি গ্রহণ করবে না কেন ? এ-পর্য্যস্ত যা বলা হয়েছে তাতে এ দেশের লিপির অক্ষর-পরিচয় কত কঠিন ও দুঃসাধ্য ব্যাপার তা সহজেই অনুমেয় ; আমাদের দেশের প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে অন্ততঃ পক্ষে এই প্রায় ৫৫০টি অক্ষর পৃথক পৃথক ক’রে শিখিতে হয় এবং বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয় স্তরের জটিল ও বহুরূপী বর্ণমালার ভীষণ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তা ছাড়া এই লিপি-বিভ্রাটের আর একটি দিক ভাববার আছে । ভারতের প্রত্যেক ভাষা ও উপভাষার লিপি প্রণালী ক্রমশঃ এত পৃথক হয়ে পড়েছে যে ভাষার সাদৃশু সত্বেও বিভিন্ন প্রদেশের লোক পরস্পরের নিকট অপরিচিত ও বিদেশী ব’লে গণ্য হচ্ছে । এক প্রদেশের লোক অন্ত প্রদেশের লিখিত ভাষা শিক্ষা করতে গেলেই তাকে এই অসংযুক্ত এবং সংযুক্তাক্ষরের বিরাট বাহিনীর সন্মুখীন হ’তে হয় ; একে জয় না-করতে পারলে তার পক্ষে আর অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয় না । কাজেই নিতান্ত দায়ে ন; পড়লে কেহ অন্ত প্রদেশের ভাষা বা সাহিত্যের সহিত পরিচিত হ’তে প্রবৃত্ত হয় না। এই কারণে নানা প্রকারের “অক্ষর” ভারতের বিভিন্ন ভাষা ও জাতির মধ্যে একটা প্রাচীর বা কৃত্রিম ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। বিশেষতঃ উত্তর-ভারতে আমরা সকলেই মুলতঃ একই ভাষা বলি, অনেক সময়ে পরস্পরের কথিত ভাষা বুঝতে পারি, কিন্তু সেই কথাগুলিই লিখিত হ’লে আর বুঝতে পারি না । এক প্রদেশের সাহিত্য বা সংবাদপত্র বা পত্রিকা অন্ত প্রদেশ বুঝতে পারে না, ভাবের বা আদর্শের আদান-প্রদান হয় না, জ্ঞানপ্রসারে বাধা হয় । ফলে যদিও আমরা সকলে নিজেদের ভারতীয় বলি তবু আমরা নিজেদের এক জাতি ব'লে অসুভব করতে পারি না, সকল বিষয়ে নিজেদের পৃথক বলে মনে করি, অথচ অধিকাংশ সময়ে পরম্পরের কথিত ভাষা বুঝতে পারি। একই বিষয়, একই বিদ্যা, একই জ্ঞান আমাদের প্রত্যেক পৃথক লিপিতে’