পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ ভদ্রতায় ভাঙা ঘড়িটি গ্রহণ করিয়া নটুর শাসনের ভার তাহার হাতেই দিয়াছে তবু তাহাদের দাসীর কণ্ঠ ভিতর হইতেই তাঁহাকে শুনাইয়া বলিয়াছে, তখুনি বলেছিলুম– নিৰ্দ্দমীর হয়রান শুধু ওদের পেটে পেটে এত। ঐটুকুন ছেলে, কে জানে ওদের শিক্ষা কেমন ? নিজে থেকে কি আর অত কাও মাথায় আসে | কেন যে অনিল স্ত্রীকে খুশী করিতে নটুকে আনিয়াছিল ! নিৰ্ব্বোধ, নইলে অজানা একটা ছেলের ভার লইতে দায় ? কম্পিত কণ্ঠে বলিতে বলিতে সে নটুকে দুই-চার ঘা প্রহার দিতে লাগিল । এ অপমানের জাল তাঁহাকে চিরদিন বহিতে হইবে । শচী সমস্ত শুনিল—শরীর মন তাহার স্তন্ধ হইয়া গিয়াছে। নটুর আর্ত রোদনেও সে নিম্পদ হইয়া বসিয়া রহিল। নটু কাদিতে কাদিতে সেখানেই ধূমাইলে অনেক রাত্রে অনিলকে দুটি খাইতে দিয়া শচী হাড়িতে জল ঢালিয়া দিল । যেমন আনিয়াছিল সেইরূপ অনুনয়ে শচী আবার নটুকে পঠাইল দেশে । এবার যাওয়ার খরচ দিতে তার কানের মাকড়ীজোড়া শচী বিক্ৰী করিয়াছে। আবার সেই নিঃসঙ্গ দিনযাপন । ভাইকে মানুষ করা দূরে থাক শচীর জীবনে ঘুণ ধরিয়াছে যেন কোন কাজে উৎসাহ নাই, দিনব্যাপী অবসাদ শুধু তাহাকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখে। সে আর উঠানে দাড়ায় না । ইন্দ্রাণীর দিকে চোখ পড়িলে তখনি চোখ ফিরাইয়া নেয়। ইন্দ্রাণীর চোখেও ইহা এড়ায় না। সনিশ্বাসে সে ভাবে কিছু ত বলি جنسي8b क्रिक्रिङ्ग झुङ्गेश्व ७११ নি আমি। সর্থীর ভাব দেখিয়া তারও কেমন সঙ্কোচ আসে । শচীর কাজ এমনই অগোছাল হইয়াছে, কে বলিবে আগেকার সেই শচী । নানাবিধ রন্ধনে সে আর অনিলকে তৃপ্ত করে না । কুমড়ালতায় ফুল ধরিয়া আপনিই শুকায়, তিল পিঠালি মুড়িয়া ভাজিতে শচী ভুলিয়া গিয়াছে । অনিলের খাওয়া শেষ হইলে আর নড়িবার লক্ষণ দেখা যায় না। তবে পুরাতন সার্থী সেই ব্ৰহ্মপুত্র, তাহার দিকে চোখ রাখিয়া কি যে ভাবে শচী ! গত দিনগুলির সুখের চিত্র কল্পনায় ঘুরাইয়া ফিরাইয়া দেখে কখনও, মনে জাগে মমতাময়ী ইন্দ্রাণীর করুণাসহাস হাসি। সেইখানে বসিয়াই বেলা শেষ হইয়া যায়। অনিল তাহার স্নান মুখ দেখিয়া কাজের ক্রটিগুলি মার্জনা করিয়াই চলে। সন্ধ্যার অন্ধকার না ছাইলে শচীর উঠিবার তাড়া দেখা যায় না আর । শচীর ভাই যদি মরিয়া যায়। শচী ভাবে যারা খেতে পায় না মরণ নাকি তাদের সহজ, ওরা যেন মরে যায় ঠাকুর । ভাবিতে ভাবিতে অজ্ঞাতে কথন শচীর চোখে জল ঝরিতে থাকে—পাহাড়ের অন্ত দিকে নরসিংহ-বাড়ির আরতির কাসর-ঘণ্টা বাঞ্জিয় উঠে, শচীর তখন ষ্ট্রস হয় । অশ্রুসিক্ত আঁখি অঞ্চল প্রান্তে বার-বার মুছিয়া করজোড়ে সে দেবতার উদ্দেশে প্রণাম করিয়া বলেআমায় ক্ষমা কর ঠাকুর, ক্ষমা কর। ভাইদের অকল্যাণ-কামনার গ্লানিতে অনুতপ্ত চিত্তে সেখানে বার-বার মার্জন ভিক্ষা করিয়া পুনরায় বলে—তাদের সুমতি দিও ঠাকুর, কুমতি দিও শুধু।