পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ ভারতে মনঃসমীক্ষা Վ)Ե-Հ) মনোবিজ্ঞান-বিভাগের কর্তৃত্বে মানসিক রোগীদের পরীক্ষা করবার ব্যবস্থা হয়েছিল। ঐযুক্ত হরিপদ মাইতি ও শ্ৰীযুক্ত মন্মথনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ ভাবে উক্ত কার্য্যে সাহায্য করেছেন । আজ পর্য্যস্ত অনেক রোগী এই ‘ক্লিনিক’-এর দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। বাংলা-সরকার তরুণ অপরাধীদের অপরাবনির্ণয়ে এবং তাদের স্বাভাবিক মানুষে পরিণত করবার জন্তে এই চিকিৎসাগরের সাহায্য নিয়ে মনোবিজ্ঞানের প্রযোজ্যতাকে স্বীকার করেছেন। যদিও এই রোগীদের প্রতি সমীক্ষণের যথার্থ রীতি প্রয়োগ করা হয় নি, তবুও বলা যায় মনঃসমীক্ষার জ্ঞানের সাহায্যে রোগকে বিচার করবার চেষ্টা হয়েছে । মনঃসমীক্ষার প্রচারের জন্ত ভারতের মনঃসমীক্ষকগণ সাধারণ সভাসমিতেতে বক্তৃতা ও প্রবন্ধ পাঠ করেছেন । ডা: বার্কলে হিল, ডাঃ বহু, মন্মথ বাবু ও ডাঃ সুহৃৎ চন্দ্র মিত্রের নাম সেই সম্পর্কে উল্লেথযোগ । ভারতবর্ষে মনঃসমীক্ষার ওপর নিন্দ বা কটুক্তি বৰ্ষিত হয় নি, এমন কি মনঃসমীক্ষার নেতাকে বিদ্রুপ পর্য্যস্ত সহঁতে হয় নি। মনঃসমীক্ষার বিরুদ্ধে আজ পর্য্যস্ত কোন ংবাদপত্র বা সাময়িক পত্রিকায় লেখা হয় নি । তাই ব’লে বলা যায় না, এদেশে মনঃসমীক্ষণ যথেষ্ট আদৃত হয়েছে। ভারতবর্ষে অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তার মধ্যে মাত্র কলিকাতা-বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় মনঃসমীক্ষা অপমনোবিদ্যার অধীনে অধীত হয়ে থাকে । ভারতবর্ষের অন্তান্ত দেশ থেকে এখানে শিক্ষার্থী আসছে এবং আশা করা যায় কিছু দিনের মধ্যে এই বিজ্ঞান সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার পাঠ্যবস্তুগুলির মধ্যে স্থান পাবে। বাংলা-সাহিত্যে অনেক সময় মনঃসমীক্ষার জ্ঞানকে ভুল বুঝে ব্যবহার করতে দেখা যায়। আগেই বলেছি, নিজে সমীক্ষক না-হ’লে সমীক্ষার জ্ঞান সম্যকরূপে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। অনেক সময় দেখা গেছে কোন কোন লেখক ফ্রয়ডের মতকে বোঝবার চেষ্টা না-ক’রে বিরুদ্ধমতপোষক কোন ইংরেজ লেখকের বই পড়ে মনঃসমীক্ষার প্রতি অযথা বক্রবৃষ্টি দিয়েছেন। কোন কোন উপন্যাস পড়ে মনে হয়, লেখক নায়ক-নায়িকার চরিত্র-অঙ্কনে মনঃসমীক্ষাকে ভ্রান্তভাবে ব্যবহার করেছেন। বিজ্ঞানের ধারা হচ্ছে কতকগুলি বিশেষ শব্দ ব্যবহার ক’রে সংজ্ঞা তৈয়ার করা । মনঃসমীক্ষার সেরূপ সংজ্ঞাপূর্ণ শব্দ আছে। তাহদের ব্যবহার এবং অর্থ বিশেষ নিয়ম অনুযায়ী, তাই বিশেযজ্ঞ ব্যতীত অন্ত লেখকের সেগুলি প্রয়োগ করবার সময়ে যথেষ্ট সতর্ক হওয়া উচিত । আগেই বলেছি, ডা: গিরীন্দ্রশেখর বসুর সঙ্গে ডাঃ সিগমুণ্ড ফ্রয়ডের কিছু পার্থক্য আছে। ডাঃ গিরীন্দ্রশেখর ভারতে মনঃসমীক্ষা-আন্দোলনের নেতা, এই কারণে র্তার স্বাতন্ত্র্যের কিছু আভাস দেওয়া দরকার । ফ্রয়ডের মতে সমাজ, যশ, অচিার, ধৰ্ম্মের রীতিনীতি, ভয়, ঘৃণা, ইত্যাদি মানসিক বৃত্তির অনুশাসন আমাদের মনের ইচ্ছার প্রকাশে বাধা দেয় । বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আমাদের রুদ্ধ ইচ্ছা নিঞ্জনি মনে স্থিতি লাভ করে। ডাঃ বসুর মতে ভয়, ঘৃণা ইত্যাদি ইচ্ছানিরোধের ফল,—কারণ নয়। এই ইচ্ছানিরোধ ( Repression ) সম্বন্ধে ডাঃ বহু বলেন, যতক্ষণ-ন! দুইটি ইচ্ছা বিপরীতগামী হয়, ততক্ষণ তাদের মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা নেই। পদার্থবিজ্ঞানে শুনে থাকি দুইটি গতি একই ক্ষেত্রে অবস্থিত হ’লে এবং তাদের গতিদিগ্‌রেখা ( Line of Force) সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী না-হ’লে সম্পূর্ণ বিরোধ অসম্ভব। ইচ্ছার ব্যাপারে সেই সত্য আছে । ধরুন, আমার মনে ইচ্ছা আছে, আমি রামকে মারতে চাই । এ ক্ষেত্রে, ( ১ ) আমি শুমকে মারতে চাই । ( ২ ) শু্যাম রামকে মারতে চায় । ( ৩ ) শুমি আমাকে মীরতে চায় । ( 4 ) রাম খামকে মারতে চায়—এর একটিও ‘আমি রামকে মারতে চাই ইচ্ছার বিপরীতমুখী হ’ল না । এদের যেকোন একটি এবং প্রোথমিক ইচ্ছাটি একসঙ্গে মনে বিনাবিরোধে থাকতে পfরে। এমন কি, 'আমি রামকে মারতে চাই না’ প্রাথমিক ইচ্ছার বিপরীত হ’ল না, মাত্র এক্ষেত্রে ইচ্ছার বিরোধ অজানা রইল। কিন্তু মনে যদি ইচ্ছা থাকে আমি রামের দ্বারা প্রহৃত হ’তে চাই তবেই বিরোধের সৃষ্টি হ’ল এবং এক্ষেত্রে যথার্থ নিরোধ সম্ভব। ডাঃ বনুর মতে এই ধরণের যুগ্ম ইচ্ছা আমাদের মনে দেথা দিচ্ছে। শিশুর ক্রমোন্নতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কি উপায়ে তার মন তৈরি হয়। মনঃসমীক্ষা-সম্বন্ধে ডাঃ বহু ফ্ৰয়ড প্রভৃতির চেয়েকিছু পৃথক । তিনি রোগীর কথাবলীর ওপর ক্টোক α