পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8్సo একাদশ পরিচ্ছেদ > শ্রাবণ মাসের প্রথমে আমার পাঠশালা গেল উঠে । আর আমার এখানে শুধুহাতে থাকা অসম্ভব। মালতীকে এক দিন বললাম—শোন, আমি চলে যাচ্ছি মালতী— সে অবাক হয়ে বললে—কেন চলে যাবেন ? —কতদিন এসেছি ভাবে ত এখানে ? প্রায় দশ মাস ठू'ठा মালতী চুপ ক’রে থেকে বললে—ঘুরে আবার আসবেন কবে ? —ভগবান জানেন । নাও আসতে পারি। মালতীর মুখের স্বাভাবিক হাসি-হাসি ভাবটা যেন হঠাৎ নিবে গেল। বললে—কেন আসবেন না ? আখড়ার কত কাজ বাকী আছে মনে নেই? ওর মুখ দেখে আমার আবার মনে হ’ল ওর কেউ নেই, এথানে ও একেবারে এক । ওকে বুঝবার মানুষ এই গ্রাম্য অশিক্ষিত বৈষ্ণববৈষ্ণবীদের মধ্যে কে আছে ? আমার কাছেই ওর যা-কিছু অভিমান আবদার থাটে—ওর মধ্যে যে লীলাময়ী কিশোরী আছে, সে তার নারীত্বের দর্প, গৰ্ব্ব ও অভিমান প্রকাশ ক’রে সুখ পায় একমাত্র আমার কাছে—আমি তা জানি। তা ছাড়া, ও এখনও বালিকা, ওর ওপর আমার মনে কি যে একট অনুকম্প জাগে---ওকে সকল দুঃখ, বিপদ থেকে আড়াল ক’রে রাখি ইচ্ছা হয় । শ্রাবণ মাসে নীল মেঘের রাশি দ্বারবাসিনীর চারি ধারের দিগন্তবিস্তৃত তালীবনশোভী মাঠের ওপর দিয়ে উড়ে যায় রোজ রোজ...আমি দীঘির ধারে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখি, দেখে দেখে মনে কত কি অনির্দিষ্ট অস্পষ্ট আকাঙ্ক্ষণ জাগে—মনে হয় ছোট কোন কলম্বন গ্ৰাম্য নদীতীরে খড়ের ঘরে মালতীকে নিয়ে ছোট্ট সংসার পাতবো...আমরা দু-জনে এম্নি সব বর্ষা-মেদুর শ্রাবণদিনে বসে-ব'সে কত কথা বলব, কত আলোচনা করব, ওকে র"tধতে দেব না, কাজ করতে দেব না, আমার কাছ থেকে উঠতে দেব না-কত বিশ্বাসের কথা, ভক্তির কথা, জ্ঞানের কথা, ভগবানের কথা, সাধু-মোহস্তদের কথা, আকাশের তারাদের কথা-ও আমার বুঝবে, আমি ওকে বুঝবো । কিন্তু তা হবার না। শালউী ওর বাপের বোমী, ఏనD8S আখড়া ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না-আমি অনেকবার ঘুরিয়ে প্রশ্ন ক’রে ওর মনের ইচ্ছা বুঝেছি। আমি ওকে চাই একস্তি আমার নিজস্ব-ভাবে—এখানে থাকলে ও দিনে রাতে কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে ওকে সে-ভাবে পাওয়| অসম্ভব । এই আখড়াই হয়েছে ওর আর আমার মধ্যে ব্যবধান । আমি এখান থেকে ওকে নিয়ে যেতে চাই । আমিও এখানে থাকতে পারব না চিরকাল । মালতীকে ভালবাসি, কিন্তু ওকে বিবাহ ক’রে এই রাঢ়-অঞ্চলের এক গ্রাম্য আখড়ায় চিরকাল কি ক’রে কাটাবো বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী সেজে ? আমি ওকে নিয়ে যাব এখান থেকে । এক দিনের একটা ব্যাপারে মালতীকে আরও ভাল ক’রে চিনলুম। দ্বারবাসিনী গ্রামের বৃদ্ধ শস্তু বাড়,য্যে চার-পাঁচ দিনের জরে মারা গেলেন । তিনি এখানকার সমাজে একঘরে ছিলেন—এটা আমি আগেই জানতাম । তার একমাত্র বিধবা কল্পকে নিয়ে কি-সব কথা নাকি উঠেছিল—তাই থেকেই গ্রামে শভু বাড়ধ্যে একঘরে হন । শস্তু বাড়,য্যে কোথাও যেতেন না, কারও সঙ্গে মিশতেন না, তার হাতেও দু-পয়সা ছিল—সবাহ বলত টাকার গুমর । বেলা পাচটার সময় মালতী এসে বললে—শুনেছেন ব্যাপার ? শম্ভু বাড়,যেকে এখনও বের করা হয় নি— আমি এতক্ষণ ছিলাম সেখানে । সেই দুপুর থেকে এক জe লোকও ওদের বাড়ির উঠোন মাড়ায় নি। মড়া-কোলে মেয়েটা ছুপুর থেকে বসে আছে—ওর মা ত বাতে পলু, উঠতে পারে না। আপনি আয়ন, দু-জনে মড়া ত দোতলা থেকে নামাই—তার পর উদ্ধব-জ্যাঠাকে বলেছি আখড়ার লোকজন নিয়ে আমাদের সঙ্গে যাবে—ব্রাহ্মণের মড়া অপর জাতে ছুলে ওদের মনে কষ্ট হবে—তাই চলুন আপনি আর আমি আগে নামাই - তার পর আমাদেরই নিয়ে যেতে হবে অজয়ের ধীরে-পারবেন ত ? তিন জনে ধরাধরি করে সেই ঘোরানো ও সঙ্কীর্ণ সিড়ি দিয়ে মড়া, নামানে—ও সে এক কাণ্ড আর কি ! মালতী আঁর শম্ভু বাড়,ঘোর মেয়ে নীরদ এক দিকে—আমি অন্ত দিকে। নীরদা দেখলুম খুব শক্ত মেয়ে—বয়সে মালতীর চেয়ে বড়— বছর বাইশ হবে ওর বয়েল, মালতীর মত মেয়েলী-গড়নের মেয়ে নয়, শক্ত, জোরালো হাত-প, একটু পুরুষ-ধরণের ৪ ।