পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&B উদ্ধবএই মাঠের মধ্যে হয় নি। তুমি একা এখানে কি করবে বল ? বাবাজীও চিরকাল থাকবেন না । আখড়ায় চিরজীবন কাটাবে এক এক ? মালতী মুখ নীচু ক’রেই আস্তে আস্তে নরম সুরে বললে— বাবা মরণকালে এর ভার সঁপে দিয়েছিলেন উদ্ধবজ্যাঠার ওপর নয়, আমারই ওপর । বাবার বিষ্ণুমন্দির আমায় শেষ ক’রে তুলতে হবে। উদ্ধব-বাবাজী চিরদিন থাকবেন না বলেই ত আমার এথানে আরও থাকা দরকার। বাবার ধানের জমি পাঁচ জনে লুটেপুটে খাবে অথচ আখড়ার দোর থেকে অতিথ বেষ্টম গরিব লোকে ফিরে বাবে খেতে না পেয়ে, এ আমি বেচে থেকে দেখতে পারব না। তাতে কোথাও গিয়ে আমার শান্তি হবে ? মালতীর মুথে এ-ধরণের গম্ভীর কথা—বিশেষ ক’রে ওর নিজের জীবন নিয়ে—এই প্রথম শুনলাম। সব জিনিয নিয়ে ও হালকা হাসি-ঠাট্টা ক’রে উড়িয়ে দেয়, এই ওর স্বভাব । ও এ-ধরণের কথা বলতে পারে তা আমি ভাবি নি । বললাম—মালতী, এটা কি তোমার মনের কথা ? জীবনট এই ক'রে কাটাবে ? এতেই শাস্তি পাবে? আমি যে প্রস্তাব করেছি, তাতে তুমি তহ’লে রাজি নও? কারণ আমি এথানে থাকতে পারব না চিরকাল এটা নিশ্চয় । শেষ কথাটা বলতে আমার বুক বেদনায় টনটন ক’রে উঠল, তবুও বলতে হ’ল । মালতী অনেক ক্ষণ বিমুখী হয়ে বসে রইল। কাপড়ের একটা আঁচল পাকিয়ে অন্তমনস্ক ভাবে ছেলেমানুষের মত সেটা নিয়ে নাড়া-চাড়া করলে অনেক ক্ষণ । আমার মনে হ’ল ও হয়ত কঁদিছে, নয়ত কান্না চেপে রাখবার চেষ্টা করছে তার পরে আমার দিকে একবার চেয়েই আবার অন্ত দিকে মুখ ফিরিয়ে বললে—কি করব বলুন, আমার অদৃষ্টে ভগবান এই লিখেছেন, এই আমায় করতে হবে । আমার কেমন একটা অভিমান হ’ল, বললাম—এই তাহ’লে তোমার শেব কথা ? বেশ মালতী । মালতী কথার উত্তর না-দিয়ে চুপ ক’রে রইল মুখ নীচু ক’রে। “আধীর আমার মনে হ’ল ও কঁদিছে, কিংবা কান্না চেপে রাখবার চেষ্টা করছে—একবার মনে হ’ল ওর ডাগর চোখ 3. వనిరిసి দুটি জলে ভ’রে এসেছে—কিন্তু অভিমানের আবেগে আমি সেদিকে ফিরেও চাইলাম না । রাত্রে বাইরে বসে ভাবলুম । সারারাত্রিই ভাবলুম মালতীকে ছেড়েই যেতে হ’ল শেষ-পৰ্য্যস্ত ? ও না এক দিন আমায় বলেছিল--"আখড়ার কত কাজ বাকী আছে মনে নেই ? - আমার ওপর কিসের দাবিতে একথা বলেছিল ও : সে-দাবি অগ্রাহ ক’রে নিষ্ঠুর ভাবে যাব চলে ? যদি না যাই—তবে এখানে আখড়ার মোহান্ত সে৪ে চিরকাল থাকতে হবে। এই গ্রাম্য বৈষ্ণবদের সঙ্কীর্ণ গণ্ডী ও আচার-সংস্কারের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে হবে । নিস্তব্ধ তীরভরা রীত্রি । দীঘির পার থেকে হু-হু হাওয়া বইছে । নীল আকাশের দেবতা, ধীর ছবি এই বিশাল মারে মধ্যে সন্ধ্যার মেঘে, কালবৈশাখীর ঝেড়ো হাওয়ায়, এই বকম তারাভর অন্ধকার আকাশের তলে কতবার আমার মনে, এসেছে তাকে পাওয়া আমার হঠাৎ ফুরিয়ে না যায়-মেদেবতা সকল ধৰ্ম্মের অতীত, দেশ কালের অতীত-••যার বের্দী যেমন এই পৃথিবীতে মানুযের বুকে, তেমনি ওই শাশ্বত নীলাকাশে, অনন্ত নক্ষত্রদলের মধ্যে•••মর্ত্য ও অমৰ্ত্তা র্তার স্বষ্টি-বীণার দুই তার---আমার মনে হোমের আগুন তিনি প্ৰজলিত রাখুন সুদীর্ঘ যুগসমূহের মধ্যে-শাশ্বত সময় বোপে । আমার যা-কিছু মনের শক্তি, যা-কিছু বড়, তাই দিয়ে তাকে বুঝতে চাই। গওঁীর মধ্যে তিনি থাকেন না x পরদিন খুব ভোরে—আখড়ার কেউ তখনও বিছানা থেকে উঠে নি—কাউকে কিছু না-জানিয়ে আমি দ্বারবাসিনীর আখড়া থেকে বেরিয়ে পড়লুম। কিসের সন্ধানে বেরিয়েছি তা আমি জানি নে—আমার সে সন্ধানের আশা আলেয়ার মত হয়ত আমাকে পথভ্রান্ত ক’রে পথ থেকে বিপথে নিয়ে গিয়ে ফেলবে—শুধু আমি এইটুকু বুঝি যে, যে-কোন গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকলে আমার চোখের অশ্বচ্ছ দৃষ্টির সামনে তার প্রবুদ্ধমান রূপ ক্ষীণ হয়ে আলবে—আমার কাছে সেই সন্ধানই সত্য--আর সব মিথ্যে, সব ছায়া । + ( ক্রমশঃ }.