পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\లిy=; জুলাই মধ্যভাগ-১৫৩৮ । শের খুঁ। গৌড় পরিত্যাগ করিলেন এবং অব্যবহিত পরেই হুমায়ুন গৌড়ে প্রবেশ করিলেন । মার্চ-১৫৩৯। হুমায়ুন গৌড়ে এক দল সৈন্ত রাখিয়া আগ্রার দিকে অগ্রসর হইলেন । ( ১৮, পৃ: ) জুন ২৭, ১৭৩৯ চীেসার ক্ষেত্রে শেরের হস্তে হুমায়ুনের সম্পূর্ণ পরাজয় । শের শাহের সিংহাসনারোহণ-প্রসঙ্গে ডক্টর কানুনগো মন্তব্য করিয়াছেন যে, শের শাহের রাজত্বকালের বিবরণলেখক আব্বাস শারওয়ানী, কখন এবং কোথায় শের শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন তাহ পরিষ্কার করিয়া বলেন নাই। এই কথা ঠিক বলিয়া মনে হয় না। আববাস শীরওয়ানীর পুস্তক এলিয়ট ( Elliot ) এবং ডাউসন ( Dowson ) সাহেবদ্ধয়ের সম্পাদিত History of India by own Historians নামক অষ্টখণ্ডাত্মক গ্র স্বর চতুর্থ খণ্ডে অনুদিত আছে। শারওয়ানী-প্রদত্ত শের শাহের সিংহাসনারোহণের বর্ণনা উহার ৩৭৬-৭৭ পৃষ্ঠায় প্রাপ্তব্য। তাহাতে দেখা যায়, শারওয়ানীর মতে এই ঘটনা ৯৪৬ হিজরীয় চৌসার যুদ্ধের ( ১০ই সফর, ৯৪৬ হিজরা—২৭শে জুন, ১৫৩৯ খ্ৰীষ্টাব্দ ) অব্যববহিত পরে সম্ভবতঃ যুদ্ধক্ষেত্রের নিকটেই কোথাও ঘটিয়াছিল । কাজেই দেখা যাইতেছে, শারওয়ানী স্থান এবং কাল ফুই-ই দিয়াছেন বা তাহার বর্ণন হইত ধরিয়া লওয়া যায়,—এবং এই বিষয়ে আববাস শারওয়ানী বিশ্বাসযোগ্য নহেন। তারিখ-ই-দাউর্দী মতেও (শের শাহ – ২•৭ পৃঃ) চৌসার যুদ্ধের পরেই সিংহাসনারোহণ এবং সিন্ধা-প্রচার ও খুত্ব-প্রচলন সভাটিত হইয়াছিল— কাজেই তারিখ-ই-দাউদীর গ্রন্থকারও অবিবাস শারওয়ানীর মতই ভুল খবর লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন । কিন্তু শের শাহ যে বাংলা দেশে সিংহাসনারোহণ করিয়াছিলেন, অনেক গ্রন্থেই তাহ'র সমর্থন আছে । ডক্টর কানুনগো বলেন, তাহার নিকটে মঞ্চজান-ই-আফুখানা’ নামক ইতিহাসখানির যে হাতে-লেখা পুথি আছে, তাহাতে দেখা যায়, শের শাহ বাংলা দেশে সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন । তিনি আরও বলেন যে, its పాన98ు নিজামুদিন-প্রণীত তবকাৎ-ই-আকবরী, ফেরিস্তা-প্রণীত ইতিহাস এবং বদাওনী-গ্ৰণীত মুস্তাখাব-উৎ-তওয়ারিখ মতে শের শাহের সিংহাসনে আরোহণ বাংলা দেশেই সঙ্ঘটিত হইয়াছিল । এ-যাবৎ সারা উত্তর-ভীরতময় শের শাহের বহু সহস্র মুদ্র আবিষ্কৃত হইয়াছে, কিন্তু অন্ত কোথাও আর ৯৪৫ হিজরার মুদ্রা পাওয়া যায় নাই। এখন বাংলা দেশ হইতেই ৯৪৫ হিজরার তিনটি মুদ্র বাহির হইল দেখিয়া বাংলা দেশেই প্রথম শের শাহের মুদ্র প্রচারিত হইয়াছিল বলিয়া ধরা যুক্তিসঙ্গত ; কাজেই বাংলা দেশেই অর্থাৎ গৌড়েই শের শাহ সিংহাসন আরোহণ করিয়াছিলেন, ইহাই সত্য বলিয়া মনে হয়। তাহা হইলে কোন মাসের কোন তারিখ হইতে কোন তারিখের মধ্যে শের শাহ সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন, তাহাও নির্দিষ্ট করিয়া সহজেই বলা যায়। পূর্বেই দেখিয়াছি, ৯৪৫ হিং, ১৫৩৮ খ্ৰীষ্টাব্দের ৩০শে মে আরব্ধ হইয়। ১৫৩৯-এর ১৮ই মে শেষ হইয়াছিল। পূৰ্ব্বসঙ্কলিত ঘটনা-পত্নী হইতে দেখা যাইবে, এই দুই তারিখের মধ্যবৰ্ত্তী অধিকাংশ সময়েই শের শাহ সৈন্ত লইয়া অথবা অন্ত উদ্দেশ্যে নানা স্থানে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলেন। ১৫৩৮ খ্ৰীষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে গৌড়ের পতন হইলেও তিনি তৎক্ষণেই গৌড়ে যাইতে পারেন নাই । জুন—১৫৩৮ খ্ৰীষ্টাব্যে চুণারের পতনের পর হুমায়ুন যখন বাংলা দেশের দিকে অগ্রসর হইলেন, তখন তেলিয়াখরিসঙ্কটে তাহাকে বাধা দিয়া আটকাইয়া রাথিবীর ব্যবস্থা করিয়া শের দ্রুতগামী নৌকাযোগে গৌড় পৌছিলেন। জুনের শেষে শের গৌড়ে পৌছিলেন এবং জুলাইয়ের মাঝামাঝি তিনি গৌড় পরিত্যাগ করিয়া গেলেন । এই এক পক্ষকাল সময়ের মধ্যেই, অর্থাৎ ১৫৩৮-এর জুলাই মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই, তিনি গৌড়ে সিংহাসনে অভিষিক্ত হইয়া ৯৪৫ হিজরায় মুদ্রাবলি প্রচারিত করিয়া থাকিবেন। এই সময় ৯৪৫ হিজরির দ্বিতীয় মাস সফর চলিতেছিল। কাজেই দেখা যাইতেছে, ১৫৩৮ খ্ৰীষ্টাব্দের জুলাই মাসের মধ্যভাগে এবং ৯৪৫ হিজরির সফর মাসের মধ্যভাগে শের শাহ সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন। .