পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ সুনন্দার বিয়ে {c^9 গৃহিণী সুনন্দার জন্ত মুর্শিদাবাদ-সিস্কের থানের উপর পাড় আঁকাইয়া শাড়ী করাইবার ফরমাস দিলেন । মা-চি গরিবের মেয়ে, লুঙ্গীতে এমব্রয়তরী করিয়া দোকানে বিক্রয় করিয়া অর্থে পার্জন করে । লেখাপড় কিছুই জানে না, তবু করিও গলগ্রহ হয় নাই। বিধবা মা এবং দুই ভাইযের সব খরচ চালায় । মা-চি এক দিন সরলাকে বলিল—ম, তুমি কেন মিঃ সিংয়ের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দাও না ? সে তোমার মেয়েকে বড় ভালবাসে । বিলেত-ফেরৎ সাহেব, পাঁচ-শ টাকা মাইনে পায়, সরকারী ঘর, চাকর-বাকর সব পায়, কত সম্মানও তাঁর । তোমাদের একটিই সস্তান, কাছেও রাখতে পারতে। সরলা বলিলেন -ওম, ও যে পাঞ্জাবী, ভিন্ন জাতে আমরা মেরে বিয়ে দিই না । মা-চি বলিল—তবে ঐ ডাঃ চ্যাটাজ্জাকে দাও না। সেও ত ভাল চাকরি করে । সে তোমাদের জাতের ছেলে, না ? সরল হাসিয়া বলিলেন—ন না, ও বাঙালী বটে কিন্তু ব্ৰাহ্মণ যে, অঙ্গ জাতের । তুমি ওসব বুঝবে না। ওদের সঙ্গে আমাদের বিয়ে চলে না, নইলে আমন সোনার চাদ ছেলে জামাই পেলে আমি খুবই খুশী হতুম। মা-চি বলিল—বাপ রে বাপ ! তোমাদের এতও বাচ-বিচার আছে ! ভাল ছেলে, ভাল রোজগার করে, পছন্দও হয়, তবু বিয়ে দেবে না। এত জাত, জাত কর কেন ? ফায়ার কাছে সবাই সমান । বলিয়া দেয়ালের কুলুঙ্গীস্থিত বুদ্ধমুৰ্ত্তির দিকে উদ্দেশ করিয়া যুক্তকরে নমস্কার করিল। একদিন ইন্দুবাবু অপিস হইতে আসিয়া স্বলন্দাকে ডাকিয়া কাছে বসাইয়া বলিলেন—“মা, সুধীন্দ্র ছেলেটি বেশ ভাল, নয় ? ওর দাদা তোমাকে খুব পছন্দ করেছেন, আমাদেরও ছেলেটি পছন্দ হয়েছে। তুমি এ-বিয়েতে আপত্তি করবে না ত? আমরা কিন্তু ৫ই ফাল্গুন বিয়ের দিন স্থির করেছি, এই দ্ব্যাখ টেলিগ্রাম এসেছে । আর পনের দিন মাত্র সময় আছে। রেজুনে গিয়ে বিয়ে দিতে হবে, ছেলের পক্ষ এখানে আসতে রাঙ্গী নন। বিয়ের পরে একবার তোমাকে ম্যাগুলে গিয়ে দিনকতক থাকতে হবে । তার পর ছেলে বিলেত বাবে, তখন ফুমি আমাদের কাছে চলে আসবে। এব্যবস্থায় ভূমি খুশী নিশ্চয়। স্বনন্দ অনেক ক্ষণ মাথা নীচু করিয়া রহিল, কোন উত্তর দিল না । পিতা বলিলেন—বেশ, তোমার সম্মতি আছে বুঝলাম । সুনন্দ বলিল—বাবা তুমি কি এ-সম্বন্ধে একেবারে কথাবার্তা ঠিক ক’রে ফেলেছ ? ইন্দুবাবু বলিলেন—হ মা, সবই ঠিক । সুনন্দা নীরবে উঠিয়া গেল। নিজের ঘরে এক বলিয়া অনেক ভাবিল। স্বধীন্দ্রকে যতটুকু দেখিয়াছে, মানুষটাকে তাহার ভালই লাগিয়াছে। কিন্তু দুই-এক দিনের দেখায় কি হয় ? একেবারে অপরিচিত একটি যুবকের সঙ্গে আজীবনের অচ্ছেদ্য বন্ধনে বাধা পড়িতে যাইতেছে, অথচ তাহাকে চিনিবার সুযোগও সে পাইল ম' । বিয়ের পরই আবার বিলাত যাইবে, দুই বৎসর পরে যখন ফিরিবে তখন হয়ত আরও কত পরিবর্তন হইবে । এক-এক বার ভাবিল পিতাকে গিয়া বলে, এ বিৰাহ সে করিবে না, অন্ততঃ এখনই না । বরং এত দিন যাহাঁদের সঙ্গে বন্ধুভাবে মিশিয়াছে, তাঁহাদের কাহাকেও বিবাহ করা তাহার পক্ষে সহজ । কিন্তু সে ত হইবে না । মা, বাবা বলেন, স্ববর্ণে ছাড়া বিয়ে হইতে পারে না । আচ্ছ, মিঃ সিং এই সংবাদ পাইয়া খুশী হইবেন কি ? কখনও নয়। আর ডাঃ চ্যাটাজ্জা ? আঃ, কেন যে এসব কল্পিত বাধ৷ আমাদের সমাজের ? সুধীন্দ্ৰ যেন কেমন একটু ভীরুগোছের । সব বলেন, “দাদা যা ঠিক্‌ করবেন।” মোটরের হন কানে অসিতেই মুনঙ্গ চমূকাইয়। উঠিল, এখনও সে পোষাক করে নাই। আজ যেন তাহার থেলায় উৎসাহ নাই। মা আসিয়া বলিলেন, “কি রে হনু, চুল বাধিল নি এখনও ? শুনেছিস সব ? বর পছন্দ হয়েছে ? সুধীন্দ্র ছেলে ভাল, তবে বিলেত পাঠাবার থরচটি বড় কম পড়বে না। অৰ্দ্ধেক খরচ দেব বলেছি, তাতেও যেন দাদাটি সন্তুষ্ট নয়। পারলে সবটুকু আদায় করতেন। আমাদেরও ত খরচ কম নয়, ভাগ্নে-ভাষ্ঠীগুলি যে ঘাড়ে পড়েছে, নইলে কি আর টাকার ভাবনা ? সময়