পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ আশা, আকাজল, মতামত গড়ে ওঠে, কিন্তু সে-সব কি আর পূর্ণ হয় কোনদিন ? ছেলেবয়সে মানুষ কত স্বপ্ন দেখে, কত অাদর্শের পুজা করে, বাস্তব-জগতে যখন জেগে ওঠে, তখন সেসব কোথায় মিলিয়ে যায়, ভেঙে-চুরে যায় ! মেয়েমানুষের নিজস্ব বলে কি কিছু বজায় থাকে ? কিছু না—কিছু না ) স্বননা, তুই ভাই বিয়ের কনে, ও-রকম গোমূড়া-মুখ ক’রে থাকলে চলবে না । ও কি, চোখে জল কেন ? চন্দনের কোটা মুছে বাবে যে ? ঐ বুঝি বর এল—শ"ক বীজছে, চলু সবাই বারগুীয় গিয়ে দেখে আসি । সুনন্দ কঁদিস না কিন্তু । আর হাসি ফুটতে দেরি হবে না, বরের মুখ দেখলে। 鬱 鬱 籌 অনারর শান-বাধীনে উঠানে বরকে দাড় করান হইয়াছে । চারি দিকে মেয়ের ভিড়, স্ত্রী-আচারের গল্প এয়াস্ত্রীর ডালা-কুলো-হাতে দাড়াইয়া আছেন । এমন সময় এক জন মহিল চীৎকার করিয়া উঠিলেন, “ওম! কনে কেন এখানে ? যাও যাও তুমি ঘরের ভিতর, একি সব বেহায়া কাগু ” সুনন্দা সকলকে ঠেলিয়া সোজা বরের নিকটে আসিয়া বলিল, “মিঃ দাস, একবার এই দিকের ঘরে আসবেন ? বিশেষ কথা আছে।” সুধীন্দ্র হতবুদ্ধি হইয়া চারি দিকে চাহিয়া বলিল—এখন কি কথা ? আপনি ঘরে যান, পরে হবে। সুননা কঠিন স্বরে বলিল, “পরে নয়, এখনই প্রয়োজন, আপনি না-গেলে আমি এথানেই বলছি শুনুন— আপনি আমার বাবার কাছে একটি পয়সাও দাবি না-ক’রে আমাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত কি না, আমি এখনই জানতে চাই ।” স্বধীন্দ্র বলিল-ওসব বিষয়ে আমার কোন স্বাধীন মতামত নেই, সব অামার দাদা জানেন । আপনি কি পাগলামী করছেন, সকলে কি ভাবছেন বলুন ত! সুননা বলিল, “আমি আবার বলছি—আপনি যদি বিনা-পণে আমাকে আপনার জীবনের সহযাক্রিণী ক’রে নিতে সন্মত থাকেন, তবেই আমাদের বিয়ে সম্ভব, নইলে আমি এ-বিয়েতে প্রস্তুত লই ।” স্কুলনগর ৰিয়ে 豪の位 সুধীন্দ্র বলিল-আমার দাদার অনুমতি ব্যতীত আমি কোন কাজ করতে পারি না, আপনি আমায় ক্ষমা করুন । “তবে আমায়ও ক্ষমা করবেন আপনারা” বলিয়া হননা সবেগে বিবাহ-সভার মধ্য দিয়া চুটিয়া রাস্তায় বাহির হইয়া গেল । সুধীন্দ্র মাথায় হাত দিয়া উঠানে বসিয়া পড়িল । বর্ষীয়সী মহিলাগণ “আহ আহা ! পুরুষমানুষের একি অপমান গে ! অন্ত ছেলে হ’লে লাথি মেরে মেয়েটাকে দূর করে দিয়ে চলে যেত” ইত্যাদি সাত্মনা-বাক্য বলিয়া মৃধীন্দ্রের পিঠে হাত বুলাইতে লাগিলেন। যুবতী মেয়ের দল মুখে কাপড় দিয়া হাসিতে লাগিল, বলিল—“বাবা মেয়ের কি তেজ !” শুননীর মা ভাড়ার-ঘরে বাস্ত ছিলেন, খবর পাইয়। উঠানে আছড়াইয়া পড়িয়া আৰ্ত্তনাদ করিতে লাগিলেন । সভায় তত ক্ষণে সকল সংবাদ পৌছিয়াছে । ইদুবাবু এবং তাহার বন্ধুবান্ধব ক্ষিপ্ত বরাত্রীদের শাস্ত করিতে ব্যস্ত ! রমনাথ বধূ সুধীন্দ্রের হাত ধরিয়া টানিতে টানিতে গাড়ীতে উঠাইয়া বসাইলেন । যাইবার সময় ইন্দুবাবুকে অভদ্র ভাষায় কিছু শুনাইয়া যাইতে ক্রটি করিলেন না । মৃননীর দিকে কাহারও দৃষ্টি পড়ে নাই । সে বিবাহআসরে প্রবেশ করিয়াই পিতাকে খুজিয়া না-পাইয়া পাগলের মত রাস্তায় বাহির হইয়া গিয়ছে! দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্ত হইয়া ভিড়ের মধ্য দিয়া সে কোথায় চলিয়াছে, তাহা সে নিজেই জানে না । পিছন হইতে কে যেন বলিল-“কোথায় যাচ্ছেন মিস দে, বলুন কোথায় যাবেন, আমি পৌছে দেব ”ি হননা ফিরিয়া বলিল—সুবিমল বাবু! আপনি আমায় রক্ষা করুন, অামার আর কোথাও স্থান নেই ; কোথায় যাব বলুন। আমি যা করেছি, এর পর আমার বাবা, ম, আত্মীয়স্বজন, সমাজ, কেউ আমাকে ক্ষমা করবেন না, জানি । সুবিমল সম্মুখে একখানি গাড়ী দেখিয়া ডাকিয়া সুনন্দাকে হাত ধরিয়া গাড়ীতে বসাইল । তারপর বলিল, “ আপনি এখন এত উত্তেজিত, এখন কোন কথা বলা চলে না । কাজটা উত্তেজনার বশে ক’রে ফেলেছেন এমনই,