পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মায়া T♥ তাঁর মন যে তারাক্রান্ত হ’য়ে উঠেছে এরই মধ্যে ! যে এখানে ছিল, সে অণিমা ! তার সেই শূন্তস্থানে দাড়িয়ে সুরমার আজ অবলম্বন কোথায় ? ঘরের দেওয়ালে অণিমার আঙুলের দাগ, পুরানো বাক্সের একদিকে অণিমার অজস্র চিঠিপত্র-বীরেশ্বরকে লেখা ! শেলুফের এক দিকে চুল-বধবার একটা ফিতেয় । কতকগুলি মাথার কাটা জড়ানো । অণিমার দেহ-গন্ধ যেন আজও নিঃশেষ হয়ে যায় নি—ছোটখাট বহু তুচ্ছ জিনিষে তার আভাস যেন আজও পাওয়া যাচ্ছে। সুরমা ভাবলে, তার স্থান এর মধ্যে কোথায় হবে ? নির্জন ধরের মধ্যে জানালার শিকগুলিতে মাথা রেখে সুরমা ভাবতে লাগল, “বেী ম’রে গেলে, মানুষ কেন আবার বেী নিয়ে আসে ?” সেই অবস্থায় সুরমা অনেক ক্ষণ দাড়িয়ে রইল। বাইরের বারীন্দী থেকে শাশুড়ীর কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “বেীমা, এক এক চুপ্‌টি ক’রে ঘরের মধ্যে থেক না ! রান্নাঘরে এস— আমীর কাছে এসে ব’স মা ? সুরমা তবু সেই অবস্থায় অনেক ক্ষণ ঘরের মধ্যে দাড়িয়ে রইল । চৈত্র মাসের শেষ, আমের মুকুলের গন্ধ ভেসে আসছে বাতাসে ! ঘরের মধ্যে প্রবলবেগে সেই হাওয়া প্রবেশ ক’রে ছোটখাট হাল্কা জিনিষ এখানে-ওখানে সরিয়ে দিচ্ছে । সন্ধ্যার অন্ধকারে সুরমার মনে হ’ল ঘরের মধ্যে কে যেন নিঃশবে ঘুরে বেড়াচ্ছে । হঠাৎ কে যেন কান্নার দুরে ডেকে উঠল, 'মা, ও মা ! সুরমা সচকিত হ’য়ে পিছন ফিরে দেখে,—কেষ্ট দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে দু-হাত দিয়ে চোথ রগড়াচ্ছে । ঐ মা-ডাকটির মধ্যে এমন কিছু আছে, যা হঠাৎ অবহেলা করা যায় না । স্বরম তাড়াতাড়ি জানালার কাছ থেকে স’য়ে এসে কেষ্টকে কোলে তুলে নিল । তার চোখ মুছিয়ে কোলের কাছে টেনে নিয়ে সুরমা বলল, “কেষ্ট, আমি ত তোমার মা নই ? কেষ্ট সেই অন্ধকারের মধ্যে প্রাণপণ শক্তিতে সুরমার মুখের দিকে চেয়ে বলে উঠল, “যা, তুমিই ত মী, মামা-বাড়ি ছিলে তুমি, ঠাকুমা বলেছে।’ স্বরমার মন মুহূর্তে বিদ্রোহ করে বসল। কেষ্টকে কোল থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল, “ঠাকুমা বলেছে, ঠাকমা কি বলেছে—ঠাকমা বলেছে আমি তোর মা ! কথখনো না, রূপাত্তর &RNరి আমি তোর মা নই— । তারপর কণ্ঠস্বর একটু নামিয়ে সুরমা বলল, “ভাল ক’রে দেখো ত কেষ্ট, আমি তোমার মা কি না P ক্ষুদ্র শিশু অনাদরের কারণ বুঝতে পারে না, কিছু ক্ষণ শূন্তদৃষ্টিতে সুরমার দিকে চেয়ে থাকে, তার পর উচ্চ চীৎকারে ঘর ভরিয়ে তোলে । তখন বাধ্য হ’য়ে স্বরম তাকে কোলে নিয়ে আfদর করতে থাকে। বলে, না বাবা, লক্ষ্মী মাণিক আমার, চুপ করে, চুপ করে—আমি তোমার মা, তোমার মা, তোমার মা ! কেষ্ট এততেও শান্ত হ’ল ব’লে মনে হ’ল না । অন্ধকারের মধ্যে মায়ের হাত বুলিয়ে সে দেখ ল যে, এখানে কিছু ফাকি নেই ; তখন সে সন্তুষ্ট হ’য়ে বলল, মা, চাদ দেখব ।’ এই চাঁদ দেখাটি তার অভ্যাস । অণিমার সন্ধ্যার একটি কাজই ছিল কেষ্টকে চাদ-দেখানে । অশ্বখ আর বঁাশ গাছের মাথার ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে চাঁদ উঠ ছে-এই কেষ্টর দেখা চাই । 塾 সুরমা বলল, ‘চল, চাঁদ দেখে আসি ।’ কেষ্টকে সঙ্গে নিয়ে সুরমা ছাদে উঠছে, দালানের মধ্য দিয়ে খানিকট হেঁটে গিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। যেতে যেতে সুরমা শুনতে পেল কে যেন বলছে, বৌদিদির আমাদের হেঁটে যাওয়ার ঢংটাও তারই মত—আহা বেঁচেবৰ্ত্তে থাক। একটি লঘু নিঃশ্বাসের শব্দও সুরমার কানে এল । না আর ভাল লাগে না বাপু ! কেবলই সে, আর সে ! মানুষের সঙ্গে মানুষের কখনও কি মিল হয় ? এরা কেন তার পিছনে লেগেছে এমন ক’রে ? বি-চাকর পর্য্যন্ত সেই একই মন্তব্য করছে—মনের বিরক্তি মুখে প্রকাশ হ’য়ে গেল—“ছেলে যেন বাহাদুর ! আবার চাদ দেখবার সথ, কেন হ’ল রে বাপু ? - ও মা, তা বুঝি জানেন না বৌদিদিমণি । ওর মা যে ওকে রোজ কোলে ক’রে নিয়ে ঐ কাও করতেন ?— ক্ষান্তমণি প্রদীপের স্বল্পালোকে দালানের এক কোণ থেকে এই মন্তব্যটি ক’রে বসল। চাদ-দেখানোর মধ্যেও সেই অণিমা ! অাছা দেখা যাক,