পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মায় রূপাত্তর 位之气 ইজিচেয়ার ছেড়ে উঠে আবার ছাদে পায়চারি করতে আরম্ভ করুল । সুরমার মনটা আজ ভাল নেই। চেঞ্জে যাওয়ার কথা বলেছিলেন, সে সময়টায় ও-রকম হাসা তার উচিত হয় নি, আর সেই কথাটা বলা একেবারেই ঠিক হয় নি—কেমন যেন হ’ল তা’র সেই সময়ে, নিজেকে সে সামূলাতে পারল না। তার যে ঠিক কি হয়েছে, সে বুঝতে পারে না, শুধু শুধু সকলের উপর সে অকারণে বিরক্ত হ’য়ে ওঠে। দিদির নাম ওঁর করেন, তাতে এমনি কি হয়েছে ;–কিন্তু বড় বেশী বার সেই নাম তাকে শুনতে হয়, তাতেই মনটা থারাপ হয় কি না ! অtছা, এবার যদি চেয়ে যাওয়ার কথা বলেন, তা হ’লে বেশ ভাল হয়। এক কথাতেই সুরমা রাজি হ’য়ে যাবে। উঃ, মাথাটা তার বডড ধরেছে, একটুও বসে থাকা যtয় না । এই সময়টায় যদি তিনি আসতেন একবার ! বলতেন, তোমাকে ক্ষমা করেছি সুরমা, মনে আমার কোনো গ্লানি নেই, তা হ’লে বেশ হ’ত, না ? এই রকম ভাবুতে ভাবৃতে কখন যে সুরমা তার সুন্দর বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়েছে, তার নিজেরই সে খেয়াল নেই। মা এসে কতবার ডাক্লেন থাওয়ার জন্ত, কুরমার তখন গভীর তন্দ্রা । গায়ে মাথায় হাত দিয়ে মা বললেন, না বাপু, কিছুই ভাল বুঝছি নে আমি । বীরেশ্বরকে বললাম এক-শ বার, ডাক্তার নিয়ে এসে দেখাও, আমার কথা কি ও শুনবে ?—এই বলে তিনি নীচ চলে গেলেন । মুরমার বিছানার পাশে তারই মত আর একটি মেয়ে এসে বসল। এক রাশ এলো চুল তার মাথায়, অপরূপ তার চোথের চাহনি ! সুরমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল সেই মেয়েটি । “কি হয়েছে তোমার সুরমা ? সুরমা তার মুখের দিকে চেয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে। কথা কইতে পারে না। "মল্লখ করেছে তোমার ? আমি ত ছিলাম এইখানেই, আমাকে ডাক নি কেন ? সুরমা স্থির হয়ে তার কথা শোনে। গভীর জ্যোৎস্না রাত্রে যে পার্থী ডাকে, সেই পার্থীর সুরের মত তার কণ্ঠস্বর ! কত অরণ্য, কত পৰ্ব্বত, কত স্বচ্ছসলিল নদীর পরপার থেকে সেই সুর যেন ভেসে আসছে। অজ্ঞাত বিস্ময়ে সৰ্ব্বশরীর রোমাঞ্চিত অবস্থায় সুরমা সেই স্থর শুনতে থাকে, মুখে তার ভাষা জোগায় না ! ‘আমাকে ডাকলেই ত পারতে সুরম , আমি তোমার অসুখ সারিয়ে দিতাম। কিন্তু আমার কেষ্ট কোথায় ? তাকে ত দেথতে পাচ্ছিনে আমি ? “কি বললে ? এইখানেই আছে, ভাল আছে । অনেক দিন তাকে দেখি নি আমি,—ত তোমার কাছে আছে, ভাল আছে শুনেও মুথ। কিন্তু তোমার অসুখ আমি সরিয়ে দেব স্বরমা ! তুমি উঠে এস আমার সঙ্গে ”ি সুরমা যন্ত্রচালিতের মত উঠে দাড়াল। তার সৰ্ব্ব শরীর তখন একটি লতার মত কঁপিছে । ‘র্কাপছ কেন ? এস, আমার সঙ্গে—ভয় কি ? আমাকে চিন্‌তে পার্ছ না তুমি, আমি যে অণিমা, দেখ না আমার দিকে চেয়ে ! দেথ ।” সুরমা চেয়ে দেখল, গভীর দুটি কালে চোখের দৃষ্টি । সেদিন কেষ্টকে সে যে তারা দেখিয়েছিল, অশ্বখগাছের ওপারের সেই বড় তারাটি—সেই তারার দীপ্তি যেন তার দুই চোখে জল জল করছে। খোলা দরজার বাইরে ছাদ, সেই ছাঁদের উপর থেকে অণিমা ডাক্‌ছে যেন কুরমকে, “এস, এস—বাইরে বেরিয়ে এস, দেখ, এখানে কত আলো, ঘরের মধ্যে থেক না ।” সুরমা নিঃশব্দে ছাদে এসে দাঁড়াল । একটি বড় প্রজাপতি যেন তার সম্মুখে ভেসে বেড়াচ্ছে । সাদা, স্বচ্ছ, লঘু এবং সুন্দর প্রজাপতি । “দেখ, আর রেশী দূর এস না ! এই আলসের পাশে চুপ ক’রে শুয়ে থাক। গায়ের কাপড়টা দিয়ে পা দুটা ঢেকে ফেল। জ্যোৎস্না এসে পড়ক তোমার শরীরে, হাওয়া এসে লাণ্ডক । সব অমুখ সেরে যাবে।’ সুরমা বড় আলসের পাশে পা ছুটি ঢেকে গুয়ে পড়ল। গুয়ে গুয়ে লে দেখল সেই বড় প্রজাপতিটি ছাদ পেরিয়ে