পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tratూ ఎ98ఏu জামগছ পেরিয়ে বঁাশবন পার হয়ে অনেক দূরে চলে গেল, অনেক দূর । তারায় ভরা আকাশ। সুরমা তারা শুনতে লাগল, এক, দুই, তিন—এক, দুই, তিন—তার পরে আর গোণা যায় না । সৰ্ব্বশরীর ধীরে ধীরে স্থির হয়ে আসছে, ঘুম, গভীর ঘুম সুরমাকে যেন জড়িয়ে ধরেছে, সুরমা নিশ্চেতন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল । বীরেশ্বর সেদিন একটু বেশী রাত্রে বাড়ি এসেছিল। ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখ সুরমা ঘুমুচ্ছে। তার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে বীরেশ্বরও ঘুমিয়ে পড়ল পাশেই । রাত্রে খোলা জানালাটা দিয় হু-হু ক’রে হওয়া আসছে ভিতরে । বীরেশ্বর হঠাৎ জেগে উঠে পাশে চেয়ে দেখে সুরমা নেই । সচকিত হয়ে বীরেশ্বর কয়েক বার ডাক্ল, “মুরমা, সুরমা ।” কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে সে তাড়াতাড়ি থাট থেকে নেমে বাইরে ছাদে বেরিয়ে এল । পশ্চিম আকাশের প্রস্তে চাদ অস্ত যাচ্ছে : দোলা লেগ বাশের বন ফুলে ফুলে উঠছে। ক্টাড়িয়ে বীরেশ্বর ডাকল, ‘সুরমা !’ কোন উত্তর নেই! কোথায় গেল সুরমা ? কই, কোনোদিন ত সে রাত্রে এমন সময় বাইরে যায় না। এখনই হয় ত ফিরে আসবে এই মনে ক’রে বীরেশ্বর ছাদের ওপর ঘুরে বেড়াতে লাগল। ঘুরতে ঘুরতে দেখে পূর্বদিকের আলুসের পাশে কে যেন গুয়ে অাছে চাদরমুড়ি দিয়ে। কাছে গিয়ে দেখে সুরমা অকাতরে ঘুমুচ্ছে । চুলগুলো ইতস্ততঃ ছড়িয়ে পড়েছে। পাণ্ডুর, বিবর্ণ। বীরেশ্বরের বুকের ভিতরটায় তখন যেন নিদারুণ যন্ত্রণা হচ্ছে । স্নান টাদের আলোয় তার মনে হ’ল, গেল, গেল সব গেল—আবার তাকে সন্ন্যাসী হতে হবে! আবার সেই গয়া, কাশী, হরিদ্বার । তাড়াতাড়ি সুরমার পাশে বসে সে তার কানের কাছে বfতাসের ছাদের উপর মাথার মুখথনি মৃতের মত মুখ নিয়ে গিয়ে প্রাণপণে ডাকতে লাসূল, ‘সুরমা, সুরমা ? সুরমা ধীরে ধীরে উঠে বসল। অসমৃত বেশ-বাস । দীর্ঘ চুলগুলো মুখের উপর এলোমেলো হয়ে পড়েছে ; চাহনি অদ্ভুত—ধেন স্বপ্নবিষ্টের মত । ধীরে ধীরে তার হাত ধরে বীরেশ্বর তাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে এল । আর এক রীত্রির কথা তার মনে পড়ল । অণিমা ঠিক এইরকম ভাবে এক দিন ঐ পূব দিকের অলিসের পাশে এসে গুয়েছিল । সৰ্ব্বাঙ্গে সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে অণিমা শুয়েছিল। তার ঠিক এক মাস পরেই তার সেই নিদারুণ অসুখ আরম্ভ হ’ল । বীরেশ্বরের সর্বাঙ্গ থর-থর ক’রে কঁপিছে—এমন অলৌকিক ব্যাপার যে ঘটতে পারে, এ তার স্বপ্নেরও অগোচর । কি জানি এর পরে কি আছে ? আশঙ্কায় বীরেশ্বরের মন যেন মুৰ্দ্ধাহত । খাটের উপর সুরমকে বসিয়ে বীরেশ্বর নিজে তার পাশে বসে তার একখানি হাত হাতের মধ্যে নিয়ে ধীরে ধীরে বলল, ‘সুরমা, হঠাৎ ছাদে গিয়েছিলে কেন ? তড়িৎ-পৃষ্টের মত সুরমা উঠে দাড়াল, খাট থেকে নেমে ঠিক বীরেশ্বরের সম্মুখে দ্বাড়িয়ে সে বলল, “আমি সুরমা নই, আমি অণিমা—ভাল ক’রে চেয়ে দেখ, দেখ, তুমি I' বীরেশ্বর নির্বক বিস্ময়ে সুরমার দিকে চেয়ে রইল । মৃতের মত পাণ্ডুর, বিবর্ণ বিশ্ৰী-কপালের পাশে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিয়েছে। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্য্যন্ত সমস্ত শরীরটা তার বেতসলতার মত কম্পমান। আর, সব চেয়ে আশ্চর্য, মৃত্যুর দুল্লঙ্ঘ্য ব্যবধান পার হয়ে অণিমার দুটি দীপ্ততার চোধু যেন সুরমার দুটি স্নিগ্ধ চোখের মধ্যে আবিভূত হয়েছে। ছুটি বড় শুকতারা যেন জল-জঙ্গ, ক’রে জল্‌ছে। বীরেশ্বর স্থিরদৃষ্টিতে সুরমার দিকে চেয়ে বলল, ‘তুমি অণিমা—তুমি সুরমা নও ? তেমনি দৃঢ় কণ্ঠে সুরমা উত্তর দিল, না, সুরমা মরেছে, আমি অণিমা ”ি বীরেশ্বরের ভয় হ’তে লাগল, কিন্তু সে কাউকে জাগাল না । সেই নিদ্রিত পুরীর মধ্যে বীরেশ্বর তজ্ঞাহীন চোথে প্রহর জাগতে লাগল ।