পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা ছোট যাত্রদল, বোধ হয় বালেশ্বর হতে, নিয়ে এসেছিলেন। তারা সেখানেই ছিল । কিন্তু কে তাদের অভিনয় দেখে, রাজার সহিত বাক্যালাপ কর্যে অধিক মনোরঞ্জন হ’চ্ছিল । একটু পরে রাজ উঠে দাঁড়িয়ে সকলকে ভোজনের আসনে যেতে আহবান করলেন । ঘরের পেছু, মহানদীর দিকে বারাণ্ডায় আসন । আসন, ভোজ্য-পাত্র, আচমন-পাত্র প্রভৃতি দেখে বুঝলাম রাজা সে-সব গড় হ’তে আনিয়েছেন, পাচক পরিচারক গড় হ’তে এসেছে । ভোজন সমাপন ও আচমন হ’য়ে গেল । একে একে উঠতে লাগলেন । দেখলাম পাশের এক ঘর দিয়ে পথ । রাজার পরণে কেঁচোন ধুতি, গায়ে শাদা কোট, বা কাধে কেঁচোনা উড়ানী । তিনি দ্বারে দাড়িয়ে, পাশে এক পরিচারকের হাতে একটা বড় থালায় বেলফুলের মালা, আর এক পরিচারকের হাতে চন্দনের বাটি ধিনি বেরিয়ে যাচ্ছেন, রাজা তার কপালে চন্দনের তিলক, গলীয় মালা দিয়ে করমদন ক’রছেন । আমির পাল পড়েল । আমি ভাবছি, দেখি শ্রীরাম কি করেন । তিনি ক্ষণমাত্র স্থির থেকে ব’ললেন, “আমরা awa o' (We now meet as friends ), wife coi ব’ললাম, ‘নিশ্চয়’ ( certainly ) | তথাপি হাত বাড়াতে পারলেন না, আমাকেই বাড়াতে হ’ল। তার এই ব্যবহার স্মরণ হ’লে আজিও আমার আনন্দ হয় । কি বা পরিচয়, কিছুই নয়। কলেজ-ঘরে চল্লিশ-পঞ্চাশ ছাত্রের সঙ্গে তিনি Pসতেন, ব্যাখ্যান শুনতেন, চল্যে যেতেন । ঘরের বাইরে এক দিন দু-তিন মিনিটের কথা হয়েছিল। এইটুকু আলাপ । ঠখন আমার বয়স ত্রিশ, গুরু মীনাবার বয়স নয় । আমাদের দশের গুরুভক্তির তুলনা নাই । সেকালের একটা শিষ্টাচার এখন বাংলা দেশ হ’তে লুপ্ত 'তে বলেছে। উত্তরীয় বিনা রাজা ছ’ন, প্রজা হ’ল, কেহ কনি ভদ্রলোকের সহিত দেখা করতেন না । গায়ে কিছু tাই, কিন্তু কঁধে উত্তরীয় থাকত। নিজের বাড়ীতে উত্তরীয় বনা দেখা দিতেন না। ওড়িষ্যায় এই রীতি সর্বদা দেখতে পতাম, প্রশংসাও করতাম, রাজার গায়ে কোট ছিল, কন্তু সে কোট পর্যাপ্ত নয়, উড়ানী না থাকলে সত্ৰলোকদিকে অসন্মান করা হত । . - রাজা রামচন্দ্ৰ ভঞ্জ দেও ՀՏ কয়েক বছর পরের কথা । এক দিন বিকালবেলা আমি বেড়াতে বেড়াতে মধুসূদন দাস-মশায়ের বাড়ীর সম্মুখের পথ দিয়ে পূর্বমুখে যাচ্ছিলাম। দেখি, রাজা সে পথে হেঁটে কোথায় আসছেন । পেছুতে এক চাকর ৷ কেঁচোন ধুতি, গায়ে শাদা কোট, বা কঁধে কেঁচোনা উড়ানী । কাছে এলে তিনি ডীন হাত তুলে নমস্কার করলেন, আমিও ক’রলাম । ‘কবে এলেন’ জিজ্ঞাস ক’রতে যাচ্ছি, তার কোটের দিকে চোখ পড়ল। শাদা ছ-আনা গজের জিনের কোট, তারও স্থানে স্থানে স্থত বেরিয়ে পড়েছে । বা পাশের পকেটের কাছে মনে হ’ল তালি দেওয়া ? আমি বিস্মিত হ’য়ে কুশল প্রশ্ন করতে ভুলে গেলাম। বললাম, ‘রাজা, আপনার কোটটি পুরান হয়ে গেছে । দেখলে লোকে কি ব’লবে ।’ তিনি একটু হেসে পকেটের দিকে দৃষ্টি রেথে বললেন, ‘নাঃ । তত পুরানা হয় নি। পথে দাড়িয়ে অপর কথা হ’ল না, তিনি চলে গেলেন। আমি ভাবলাম, রাজা কি কৃপণ হয়েছেন, জীর্ণ কোটকে বলছেন জীর্ণ হয় নি ! বোধ হয় তিন মাইল দূরে রেল ষ্টেশন হ’তে হেঁটে আসছিলেন । কথাটা মনে রইল । এর বছর-থানেক পরে রাজা তার কয়েক জন উচ্চ কমচারী সঙ্গে ল’য়ে কটক এসেছিলেন । আমার জানবার সম্ভাবনা ছিল না । সে সময় এক দিন সন্ধ্যার পর মোহিনীবাবু ও আর এক উচ্চ কমচারী দেখা ক’রতে আমার বাসায় এসেছিলেন। অনেক কাল পরে দেখা, এ-কথা সে-কথা নানা কথা হ’তে লাগল। হঠাৎ সে কোটের দশ মনে পড়ল । আমি মোহিনীবাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনি রাজাকে অনেক দিন দেখছেন, মানুষটি কেমন ?” তারা দুজনেই বল্য উঠলেন, “মানুষ কেমন আর কি ? আমরা প্রভু, কি তিনি প্রভু, আমরা বুঝতে পারি না ।” 姆 “রাজা বুঝি অলস, আপনাদের কাজ দেখেন না ।” “অলস একটুকু নন, ঘড়ির কঁটি । কাজকম সব দেখেন, লৰ বুঝেন। কিন্তু কিছু বলেন না । আমাদের বিপদ এই ! প্রাণপণে যথাসাধা ক’রতে হয় ।” “মোহিনী বাবু, আপনি ষাই বলুন, রাজটি দারুণ ফুপঞ্জ ’ - -