পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ- বিবিধ প্রসঙ্গ—“cহ মোর দুর্ভাগ দেশ” (*Եա: আমাদের দুর্বলতার জন্য আমরা দায়ী করেন না, এবং স্বীয় আচরণ দ্বারা "অস্পৃশ্যতা” ও আমরা যে সঙ্গবন্ধ সংহত অখণ্ড জাতি নহি, তাহার “অনাচরণীয়তা”র প্রতিবাদ করিয়াছেন। কিন্তু বিশাল জন্ত আমরা দায়ী। আমরা আগে কতকগুলি লোককে "নীচ জা’ত” ও “ছোট লোক” ভাবিয়ছি, বলিয়াছি ও তদ্রুপ ব্যবহার করিয়াছি, তবে বিদেশীরা হিন্দু সমাজকে হট শ্রেণীতে ভাগ করিতে পারিয়াছে । সরকারী যে “তপশীলভুক্ত জাতিসমুহের তালিকা” বাহির হইয়াছে, তাহার সমালোচনা আমরা করিয়াছি, অপরেরাও করিবেন। কিন্তু তাহার একমাত্র প্রকৃত ও ফলপ্রদ উত্তর হিন্দুসমাজ হইতে “অস্পৃশ্বতা” ও অন্নজল সম্বন্ধে সামাজিক “অনাচরণীয়তা” উঠাইয়া দেওয়া। হিন্দুসমাজে প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণত, প্রাণবজ্ঞা ও শক্তিমত্তা এবং তদনুযায়ী দ্যায়পরায়ণতা ও সাহস থাকিলে ইহা অচিরে করা যাইত । আমরা অনেকেই জাপানের অভু্যদয়ের কথা ভাবি ও বলি, কিন্তু সব সময় মনে রাখি না যে, জাপান প্রাণবত্তা ও শক্তিমত্তা এবং সামাজিক ন্তায়পরায়ণতা ও সাহস দ্বার স্বীয় অভু্যদয় আনয়ন করিয়াছে। জাতীয় কল্যাণের জন্য যখন আবগুক হইল, যখন মানবতার ও স্বাজাতিকতার আহবান আসিল, তখন সামুরাই নামক জাপানী অভিজাত সম্প্রদায় অচিরে আপনাদের সমুদয় বিশেষ অধিকার পরিত্যাগ করিলেন, র্তাহীদের ও জাপানের “এতা” নামক অস্পৃষ্ঠ লোকদের মধ্যে সামাজিক মর্য্যাদার কোন পার্থক্য রহিল না। আমাদের সমাজে এরূপ ন্যায়পরায়ণতা, সাহস, মহাপ্রাণত ও বুদ্ধিমত্তা থাকিলে বা কখন জন্মিলে তবে আমরা টিকিয়া থাকিতে ও বড় হইতে পারিষ, নতুবা হিন্দুসমাজের আরও ক্ষয় এবং বর্তমান প্রকারের হিন্দুত্বের লোপ অবগুম্ভাবী। সাম্প্রদায়িক ভাগবাটোয়ারার বহু প্রতিবাদ হইয়াছে, আরও হইবে । পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয় প্রভৃতি বড় ; নেতারা তাহার আয়োজন করিতেছেন। কিৰ ৰনত শ্রেণী সকলকে গবষ্মেন্ট যাহা দিয়াছেন ও দিবেন বলিয়াছেন, তাহ তাহারা ছাড়িবেন কেন ? আমরা বলি, আমরা তাহদের বন্ধু ও হিতৈষী । কিন্তু তাহর কাৰ্য্যগত প্রমাণ কোথায় ? সামান্ত প্রমাণ সেইসব অল্পসংখ্যক লোকেরা বহুবৎসর ধরিয়া দিয়া আসিতেছেন যাহারা কোন জাতিরই লোককে হীন মনে করেন না, অবজ্ঞা ৭৪=১৭ হিন্দুসমাজের তুলনায় তাহারা সংখ্যায় কয় জন ? সকলের সহিত সামাজিক সাম্য স্থাপন ব্যতিরেকে সাম্প্রদায়িক ভাগবাটোয়ারার সম্পূর্ণ উচ্ছেদ সাধিত হই.ষ না । সমগ্র হিন্দুসমাজ জাগ্রত হউন । বিশেষ করিয়া জাগ্রত হউন র্যাহারা আপনাদিগকে সনাতনী বলিয়া থাকেন । র্তাহীদের অনেকে আমদের চেয়ে ভাল করিয়াই জানেন, যে, শাস্ত্র অনুসারে র্যাহারা মুনি ঋষি বলিয়া পূজনীয় ও পুঞ্জিত তাহাদের মধ্যে অনেকে সেইরূপ পিতা বা মাতার সস্তান যাহাঁদের স্বজাতিদিগকে এখন সনাতনীরা অনাচরণীয় মনে করেন । আধুনিক সনাতনী মত ও আচার বাস্তবিক সনাতনী মতও আচার লহে । “হে মোর দুর্ভাগা দেশ” অল্প প্রাতে “গীতাঞ্জলি” খুলিতেই রবীন্দ্রনাথের “হে মোর দুর্ভাগ দেশ” শীর্ষক কবিতাটি চোখে পড়িল । কবিতাটি ভারতীয় মহাজাতির বর্তমান প্রধান কৰ্ত্তব্যের শ্রেষ্ঠ স্মারক বলিয়া সকলের পড়িবার সুবিধার জন্ত উদ্ধত করিয়া দিতেছি । হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান অপমান হতে হবে তাঁহাদের সবার সমান। মামুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছ যারে, সম্মুখে দাড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান, অপমালে হতে হবে তাহাঁদের সবার সমান । মানুষের পরশোর প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে ঘূর্ণ করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে । বিধাতার রুদ্র রোষে দুর্ভিক্ষের স্বারে বসে ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অপমান ; অপমানে হতে হবে তাঁহাদের সবার সমান । তোমার আসন হতে যেখায় তাদের দিলে ঠেলে সেখায় শক্তিরে তব নিৰ্ব্বাসন মিলে অবহেলে । চরণে দলিত হয়ে ধূলায় সে ধায় বয়ে, সেই নিয়ে নেমে এস লছিলে মাছিয়ে পরিত্রাণ । অপমানে হতে হৰে আজি তোয়ে সবার সমান ।