পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুফাইণ্ডন বার্ড কোম্পানীর সাহেব-কৰ্ম্মচারীদের জন্ত আপিস-বাটীর অদূরে তিনখানি বাংলো-বাট নিৰ্ম্মিত হয়। পরে ইহারই একখানি শশীভূষণ বাবু ক্রয় করেন। এখনও ইহা তাহারই অধিকারে রহিয়াছে । বাড়িটির বর্তমান নাম “বারগণ্ডা বাংলো ।” অপর দুইটি বাট ডাক্তার স্যর নীলরতন সরকার ও শ্ৰীযুক্ত সত্যনিনা বস্তু ক্রয় করেন। গিরিডি উচ্চ-ইংরেজী বালিকা-বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতুধর্গের মধ্যে শশীভূষণ বাবু অন্ততম ব্যক্তি ছিলেন । গিরিডিতে ব্রাহ্মউপনিবেশস্থাপনের ইচ্ছা, শুনিয়াছি, প্রথমে ৬ আনন্দমোহন বহু মহাশয়ের মনেই উদিত হয় । তিনি পচন্থায় কিছু জমিও সেই উদ্দেশ্যে বন্দোবস্ত করেন ; কিন্তু যে-কারণেই হউক, শেষ-পর্যন্ত র্তাহীর ইচ্ছা ফলবতী হয় নাই । তিনি পচন্বয়ে “মজিলপুর ভিলা” নামক বাটীত আসিয়া বাস করিতেন । বীরগণ্ডীর পুরাতন অধিবাসীদিগের মধ্যে সাতকড়ি দেব মহাশয় অন্ততম ছিলেন । ইহার আদি নিবাস ছিল কোন্নগর গ্রামে। প্রায় ত্রিশ বৎসর পূৰ্ব্বে ইনি প্রথম এই স্থানে বাড়িঘর নিৰ্ম্মাণ করাইয়া বসবাস করিতে আরম্ভ করেন । ইহার পুত্র শ্ৰীযুক্ত বীরেন্দ্রনাথ দেব মহাশয় সৰ্ব্বপ্রথম এই স্থানে দুইখানি ঘোড়ার গাড়ী আনাইয়া ভাড়া খাটাইতে থাকেন। সেই হইতে এ স্থানে ঘোড়ার গাড়ীর প্রচলন হয় । সেই জন্য এ কথাটির উল্লেখ করিলাম। পিতার স্মৃতিরক্ষার্থ বীরেন্দ্র বাবু গিরিডি উচ্চ-ইংরেজী বালিকা-বিদ্যালয়ের ছাত্রী-আবাস নিৰ্ম্মাণোদেশে দুই সহস্র মুদ্র দান করেন। স্থানীয় শ্মশানসংস্কার কাৰ্য্যেয় জন্তও তিনি পাঁচ শত টাকা দান করিয়াছেন । বীরেন্দ্র বাবু ব্রাহ্মসমাজভূক্ত । উাক্তার স্তর নীলরতন সরকার মহাশয়ের ভ্রাতা ঐযুক্ত যোগীন্দ্রনাথ সরকার মহাশয়ের বারগণ্ডাম নিজ বাট আছে। উত্ৰ নদীর অপর তীবে পড়েডিহি নামক মৌজাখানিও ইহার । উচ্চ-ইংরেজী বালিক-বিদ্যালয়ের ইনি অন্ততম প্রতিষ্ঠাতা । গিরিডির প্রধান খনিজ পণ্য কয়লা ও অত্র । কয়লার খনিগুলি রেল কোম্পানীর অধিকৃত । উপস্থিত বাজার মন্দা হওয়ায় খনিগুলিতে কয়লার চাহিদা হিসাবে সপ্তাহে কয়েক দিন মাত্র কলা উত্ত্বেলিত হয়। গত মহাকরের গিরিডির ঔপনিবেশিক বাঙালী এবং ব্যবসা-বাণিজ্য い。N○な সময়ে যখন অভ্রের মুল্য অতাধিক ছিল, তখন স্থানীয় বহু লোক ও প্রবাসী বাঙালী অভ্র-ব্যবসায়ীরা অনেকেই বিশেষ বিত্তশালী হইয়া উঠিয়ছিলেন । এমন কি সে সময়ে অভ্র-ব্যবসায়ের সহিত সংশ্লিষ্ট সাধারণ দিনমজুররা অবধি প্রত্যহ গড়ে তিন চারি টাকা পৰ্য্যন্ত উপার্জন করিত। কিন্তু পরে অভ্রের দর অসম্ভব রকম হ্রাস হওয়ার সঙ্গেই উক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশেরই আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়াছে। ঠিক গিরিডিতে কোন অলের খনি না-থাকিলেও, কোদাৰ্ম্ম, গাওয়া প্রভৃতি নিকটবৰ্ত্তী স্থানসমূহের খনিগুলি হইতে প্রচুর উৎকৃষ্ট অল পাওয়া যায়। ঐ সকল স্থান হইতে অভ্রের পুরু স্তবক সংগ্ৰহ করিয়া গিরিডিতে আনীত হয় । এই স্থানে তাহা হইত অনতিস্থল তক্তি প্রস্তুত হয় ও পরে তাহার মধ্য হইতে উৎকৃষ্ট অপকৃষ্ট হিসাবে শ্রেণীবিভাগ হইলে ছুরির সাহায্যে স্তর বিচ্ছেদ করিয়া খুব হন্ম অভ্রপত্র প্রস্তুত হয়। গিরিডির বহু বাঙালী মধ্যবিত্ত গৃহস্থ অভ্রের স্থানীয় কারখানা হইতে অভ্রতক্তি আনিয়া নিজ বাটীতে বসিয়া উপরিউক্ত প্রথায় কাটিয়া-ছাটিয়া অভ্রপত্র প্রস্তুত করিয়া পুনরায় ঐ কারখানায় দিয়া আসেন। এই কার্য্যেই বহু পরিবারের জীবিকা নিৰ্ব্বাহ হয় । ইহার পর কারখানায় এই অভ্রপত্রগুলি হইতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন আকার ও স্থূলতা বিশিষ্ট অভ্রের তক্ত প্রস্তুত হইয়া বিদেশে রপ্তানী হয়। অভ্র-ব্যবসায়ের সামরিক অবসাদ হেতু গিরিডিতে উপস্থিত অন্নাভাব প্রকট হইয়াছে। বাঙালী অভ্র-ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রথমেই শ্রযুক্ত কুমারকৃষ্ণ মিত্রের নাম উল্লেখযোগ্য । ইনি এককালে “মত্রের রাজা” ( Mica Prince ) নামে পরিচিত ছিলেন । গিরিডিতে ইহার বাড়িঘর ও অভ্রের প্রকাণ্ড কারখানা-বাট অবস্থিত । শ্ৰীযুক্ত শরৎ চন্দ্র ঘোষের পচম্বাস্থিত বসতবাটী ও কারখান। বাট৷ ইহারও ব্যবসায়ে উন্নতির পরিচয় প্রদান করে । ব্যবসায়ক্ষেত্রে সাফল্যলাভ হেতু অতি দীন অবস্থা হইতে ইনি লক্ষপতি হইয়াছেন এবং এখনও এই ব্যবসায়ে লিপ্ত আছেন। ইনি স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার। শ্ৰীযুত জিতেন্দ্রনাথ দে মহাশয় এক সময়ে অভ্র-ব্যবসায়ে লক্ষপতি হইয়াছিলেন। উত্ৰ নদীর তীরে ‘কপারফীল্ড’, নামক মুন্দর দ্বিতল অট্টালিকাখানির ইনিই অধিকারী। ।