পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

UB\! যাও না বাইরে জ্যাঠামশাইয়ের কাছে একবার—বকুনি খাবে” ইত্যাদি মেয়েদের কলরবে এবং ছেলেদের “ওরে আন, ওরে ডাক, ওরে তোল,” ইত্যাদি ইকোছাকি ডাকাডাকিতে বাড়ি একেবারে সরগরম | সকলেরই কাজ আলাদা, প্রয়োজন বিভিন্ন এবং সকলেই সব গোলমাল ছাপিয়ে নিজের দরকারী কথাটি অপরকে শুনিয়ে দিতে চায়। একটি ঘরে চারি পাশে বিছানার স্ত,প এবং কাপড়-চোপড়ের স্ত,পের মধ্যে একটুখানি স্থান ক’রে নিয়ে বসে কয়েকটি ছোট ছোট ছেলে একটি বক্স-হারমোনিয়ামের সাহায্যে সঙ্গীত-চর্চা করছিল । ওরই মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় বয়সের একটি ছেলে প্রাণপণ চেচিয়ে গান ধরেছিল “যদি গোকুলচন্দ্র ব্ৰজে না এল, সখি গে।” যথাসম্ভব মুখ ব্যাদান ক’রে এবং গলার জোরে সুরের ক্রটি ঢেকে নেবার চেষ্টার অভাব ছিল না এবং অন্ত ছেলেগুলি নিজেরাও অল্পবিস্তর ই৷ ক’রে গায়কের মুখের দিকে তাকিয়েছিল, এমন সময়ে করুণা ঘরে ঢুকল । করুণার চাবি হারিয়েছে। তারই বাক্সে কনের নূতন বাজুবন্ধ আছে, একটু পরেই কনে সাজাতে হবে, গয়নাটা চাই, কিন্তু চাবি পাওয়া যাচ্ছে না । করুণ ঘরে প্রবেশ করতেই সখি গো’র বিকট টান এক মুহূর্তে থেমে গেল । করুণা বললে, “ওরে, বাপু রে, এই গরমে গলা ফাটিয়ে আর ভুল সুরে কীৰ্ত্তন গাস নে বাবা—থামৃ সব। কান গেল । একেই ত গোলমালে বাড়িতে টেক দায় হয়েছে ---ওরে ওই ছেলেরা, লক্ষী বাবা সব—অামার চাবিটা খুঁজে দে না । পয়সা পাবে যে আমার চাবি খুজে দেবে-চার আনা পয়সা । সেই যে লম্বা চকচকে চেনেবাধা চাবির গোছ—একটা মস্ত লথ লোহার সিন্দুকের চাবি ঝোলান আছে তাতে—মনে নেই, সেই যে রে, ভানু, তুই যে আমার চাবি কাল নিয়েছিলি আমার বাক্স খুলতে, মনে নেই আবার কেন ? দরকারের সময়ে বুঝি ভুলে গেলি ? নে, নে, খোজ, সব পয়সা পাবি খুজে দিলে।” ছেলেরা লোহার সিন্দুকের লম্বা চাবি ঝোলান ঝকঝকে চেনে বাধা চাবির গোছা এই রিয়েবাড়িতে যে কতগুলো দেখেছে তা-গুণে উঠতে পারলে না—ঠক কোন চাবিটা ষে তাদের খুজে বার করতে হবে তাও বুঝলে না; কিন্তু এসব তুচ্ছ কারণে তাদের খোজ আটকাল না। কে ফান্তন প্রথমে খুঁজে পাবে এবং খুজতে পারলে চার আন পয়সা অধিপতি হয়ে সে প্রথমে সেই পয়সায় কি করবে, তার ঘোর গবেষণা করতে করতে কেউ থাটের তলায়, কেউ কাপড়ের আলনায়, কেউ খোলা বাক্সের মধ্যে চাবি খুজনে লেগে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাপড়ে-চোপড়ে জিনিষ পত্রে ঘরের গোছান জিনিষ সব হারিয়ে গেল, কিন্তু হারান চাবির সন্ধান পাওয়া গেল ন । ভ"াড়ার-ঘরের সামনের চওড়া বারান্দীয় সারি সারি বা পড়েছে, এবং তারই পাশে পাশে বস্ত বস্তা আলু, ঝুড়ি ঝুড়ি বেগুন এবং রশীিকৃত পটল রয়েছে । অল্পবয়সী মেয়ের এদিকে কেউ ঘেষে নি ; এখানে কনের মাসী পিলী খুড়ী জ্যেঠার দল। কালিয়ার আলু কোটার সঙ্গে সঙ্গে সকলে মুখে কথারও বিরাম নেই। বিরাজ-পিলী বলছিলেন, “তুমি আর বোক না মেজ বেী, রেণুর বয়েস আর আমি জানি নে! তোমার যখন বিয়ে হ’ল, তখন তোমার ঐ ভাইঝি ত মেজে থেকে হাত-দেড়েক উচুতে শূন্তে হাত রেখে মেয়েটিং উচ্চতার পরিমাপ দেখিয়ে বললেন, “এই এত বড় মেয়েটি। আমার ইদুত তখন মোটে মাস-আষ্টেকের মেয়ে। তা হ’লেই হিসেব ক’রে দেথ না রেণুর বন্ধুে কত হ’ল—ইন্দুর চেয়ে অন্ততঃ চার-পাঁচ বছরের বড় হ’ল কি না । তোমার দাদা মেয়ের বিয়ে না-দিয়ে আইবুড় ক’রে রেখেছেন বলেই ত আর মেয়ের বয়েসটিও তাই থেমে থাকবে না । আমার ইন্টু যে দু-ছেলের মা হ’ল।” মেজবোঁ ব’ললে, “না ঠাকুরবি, রেণু ত আমার বিয়ের সময়ে অতবড় মেয়ে ছিল না ; ও ত তখন হাটতেই পারত না । ও ইন্দুর চেয়ে মাস-কয়েকের বড় যদি হয়। এই ত মোটে সতেরোয় প দিয়েছে।” - সই-মা বললেন, “তোমাদের ভাই কেমন বয়েস ভাড়ান স্বভাব। রেণুর সতেরো যে কোন কালে পেরিরেছে—এখন আবার নতুন ক'রে সে সতেরোয় পা দেবে কেমন করে লা f এই আমি যেদিনই ছিলেৰ ক’রে দেখছিলুম ষে আমার স্বরমার চেয়ে, রেণু তৰে গিয়ে ঐ ইন্ধু, সকলেই বড়। সেই আমার শাশুড়ী ষে বছর মারা গেলেন, সেই বছরেই সুরমা হ'ল কি না-তাই হিসেবে ত ভুল হবার জো নেই। সবাই বললে, আমার শাহুড়ীই আমার মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছেন