পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ն&o ১৫ প্রবাসী ট ఎSBS চোখে কাপড়ের রাশির দিকে চেয়ে নীরবে বসেছিলেন। যসে-ওঁকেই জিজ্ঞেস কর না। আমি কি আর মিছে এখন বললেন, “কেন আর গোলমাল করছ দিদি ? মেরেটার নাম করেই কিনেছি সব, দাও না বাপু ওকেই সব দিয়ে । ভগ্নীপতিকে এত রাখারাখির কথা জিজ্ঞেস করছ কেন ? ও রেখে হবে কি ছাই ? তোমার ভগ্নীপতি কি আবার একটা বেী বিয়ে ক’রে আনবে নাকি যে তাকে দুটো বেনারসী দেবে ?” অমরেন্দ্র বললেন, “কথার সংযোগটা দেখলে দিদি ? তোমার বোন ত লজিক পড়েন নি–কিন্তু দুটি সম্পূর্ণ বিভিন্ন কথাকে একটি স্বত্র দিয়ে যুক্ত ক’রে দেখাবার কি অস্তুত ক্ষমতা দেখলে একবার ? আশ্চৰ্য্য !" গৌরাঙ্গিনীর দিদি হেসে উঠে দাড়ালেন । বললেন, “ওর এখন মন খারাপ হয়ে রয়েছে ভাই—তুমি আর ওকে রাগিও না ---কিন্তু হ্যারে গৌরী, এত মন খারাপই বা কেন বাপু তোঁর ? বিয়ে হ’লেই মেয়ে পরের বাড়ি যাবে, এ ত যেদিন মেয়ে জন্মেছে সেইদিনই জেনেছিল—আজ কি নতুন জনিলি ? আর কই, নমিতার ত দিব্যি হাসিমুখ দেখে এলাম রে—কত মেয়ে কত কান্নাকাটি করে, তোর মেয়ে ত লক্ষ্মী । কুণির বিয়ে হ’ল দেথিস নি ? বাপ, রে, মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না ত, যেন ধ'রে মারছে। এমনি কাও তার! ও বাপু আমার কিন্তু ভাল লাগে না, তা যাই বলিস। করুণাও বিয়ের সময়ে সুরু করেছিল অমনি কান্না—দুই ধমক দিয়ে তখন চুপ করাই ।” গৌরাঙ্গিনী অপ্রসন্ন মুখে বললেন, “আমাদের করুণার একটু মায়াই কম দিদি, তা তুমি যা-ই বল। সব মেয়ের কি আর সমান টান হয় ? নমিতা ষে দিদি 'মা' যগতে অজ্ঞান। মা খাওয়াবে, মা শোওয়াবে, মা ওর সব কাজ ক’রে দেবে এখন অবধি, তবে মেয়ের হবে । আমার কেবল ভয় হয় ও শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কান্নাকাটি ক’রে একটা অসুখে না পড়ে । ছেলেমেয়েরা কত মাসীর বাড়ি, পিঙ্গীর বাড়ি সখ ক’রে বেড়াতে গিয়েও দু-চার দিন মা ছেড়ে থাকে ত ? তা ও মেয়ে তা-ও এক দিনের জন্তে কখনও যেতে চাইত না । উনি বরং কতদিন যলেছেন যে ইস্কুলের ছুটির সময়ে যাক না রাচিতে, হয় তোমার কাছে নয় নদির কাছে, তা কি কিছুতে যেতে চাইত ? এই ত উনি বলছি ?” দিদি বললেন, "মিছে কেন বলবি ? আইবুড় মেয়ে, একটি মোটে মেয়ে – মা-অস্ত-প্রাণ ত হবারই কথা । এতে আশ্চর্য্যির কি আছে ? কিন্তু তা বলে যাই বলিস গৌরী, মাঙ্গী-পিঙ্গীর বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি আমাদের বাঙালীর মেয়ের কথনও এক হয় না । মাসী-পিসীর বাড়ি লোকে দু-দিন পাচ দিন বেড়াতে যায়—সে কারুর ইচ্ছে হ’ল ত গেল, না ইচ্ছে হ’ল ত না-ই গেল—কিন্তু শ্বশুরঘর না ক’রে উপায় করি আছে ? যা করতেই হবে জানে—বড় হয়েছে, বুদ্ধি হয়েছে, লেখাপড়া শিখেছে, তাতে অবুঝের মত কান্নাকাটি করযে কেন ? তুই মিছে ভাবিস নে, দেখি শ্বশুরবাড়ি গিয়ে নমিত দিব্যি থাকবে। সবাইকেই ত দেখছি।---আমি আর একটা বাক্সর জোগাড় দেখি, এতে ত আটল না। অমনি তুইও ওঠ, চলু একটু সরবৎ-টরবৎ কিছু খাবি। মুখটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে।” অমরেন্দ্র বসে পড়েছিলেন, এখন উঠে দাড়িয়ে বললেন, “সবাই এ পৃথিবীতে নিজের নিজের দেখে। ইনি ভাবছেন এর মেয়ের কথা, তুমি ভাবছ তোমার বোনের কথা— আমার ত এখানে মাও নেই, বোনও নেই, আমার কথা আর কে ভাববে বল ? অার এ পৃথিবীর এমনই নিয়ম যে, যে-হতভাগ্যের জন্তে ভাববার কেউ নেই, সে নিজেও নিজের জন্তে ভাবতে ভুলে যায় । দেখ না, আমি বাইরে থেকে এসেইছিলুম ঐ সরবৎ-টরবৎ জাতীয় কিছু একটা চেয়ে খাব য’লে—গরমে, খেটে থেটে, আর সকাল থেকে উপযুপিরি চারবার শুধু শুকনো সন্দেশ গিলে উপোস ক’রে তেষ্টায় আমার গলা শুকিয়ে গেছে। তা তোমাদের দুই ভগ্নীকে এখানে একত্র দেখে নিজের কষ্টের কথা ভুলেই য’সে আছি। তুমিও কেবল তোমার বোনের তৃষ্ণাটাই অনুভব করলে—অথচ খুব সম্ভৰ তিনি তার কস্তার শ্বশুরগৃহযাত্রীরূপ মহা গোলমেলে ঘটনায় উদগ্রাস্ত হয়ে তৃষ্ণা অনুভব করতে ভুলেই গেছেন। কিন্তু আমার বুক, গলা, মুখ, চোখ সব শুকিয়ে উঠেছে তেষ্টায়, তা তোমার চোখেও পড়ল দা । हीं अफ़्छे !”