পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মলন্তম এত দিনে অস্ততঃ ডজনখানেক হজম ক’রে একটা বোকা বশ্ব-এর কাধে জে'কে বসে নি ?—” সঙ্গে সঙ্গে লকক্‌-এর কানে গেল সকলের একট চাপা হাসির শব্দ। “থামো শুয়ার!” চীৎকার করে হঠাৎ সে বা-হাত দিয়ে ছাপর মুখ চেপে ধরল, “এই রিভলভারের বাট দিয়ে তোমার মুখ থেতলে দেব—তোমাকে—” তার ডান হাত খাপ থেকে রিভলভার টেনে বার করল, তৎক্ষণাৎ সকলে তার দুই হাত চেপে ধরল। “ছেড়ে দাও—ওকে খুন করষ—” কয়েক জন তার রিভলভার ছিনিয়ে নিল। এখন ল্যককু-এর উত্তেজনা সীমা অতিক্রম করেছে, তার সর্বশরীর থর থর ক’রে কঁপিছে, সকলে ভয়ে তার হাত ছেড়ে দিল, সে তার বিছানার ওপর উপুড় হ’য়ে শুয়ে পড়ে ডুকরে কেঁদে উঠল। সকলে হতভম্ব ! এর চেয়ে কত মজার কথা তাদের মধ্যে রাতদিন চলে, সবাই তাতে প্রাণ খুলে হাসে— এ কি ? আর ল্যকক্-এর এত উত্তেজনা ? সেই ল্যকক, যাকে সকলে জানত দৃঢ়চেতা, স্বল্পভাষী ! অনেকে অবশু সন্দেহ করত তার জীবনে কোন রহস্য আছে, সে হয়ত একটা দারুণ ব্যথা চেপে রাখে, কারণ তার মুখে নিরস্তর লেগে থাকত বিষাদের গভীর রেখা ! এমন কি রণক্ষেত্রের চরম উত্তেজনায় তার মুখে এই বিষ্ণতার সুস্পষ্ট ছায়া স্থানচ্যুত হ’ত না । হেতু জিজ্ঞাসার খোচা দিয়ে তার হৃদয়ে এই গভীর ব্যথার কঠিন আবরণ উন্মোচন করতে কারও কোন দিন সাহস হয় নি । কিন্তু আজ এ কি হ’ল ? ফরাসী-সৈন্ত ডুসেলডর্ফ দখল করেছে। সদাহান্তময়ী নগরী অাজ বিষাদের কুজুটিকায় আচ্ছন্ন। ফরাসী কর্তৃক পাশবিক শক্তির এমন অসঙ্কোচ অপপ্রয়োগ জাৰ্ম্মান জাতির বক্ষে শেল বিদ্ধ করেছে। নিরুপায় জাৰ্ম্মান সরকার এই জুলুমের একমাত্র প্রতিকার-স্বরূপ অসহযোগ ঘোষণা করেছে। তাই কল-কারখানা কম্মিশুষ্ঠ, রাস্তাঘাট জনশূন্ত, আনন্দভবন সব নিরানন-শহর যেন শোকাতুর । এমন কি যে-সব সশস্ত্র ফরাসী-সৈন্ত চমক্‌দার পোষাক প'রে বুদ্ধ ফুলিয়ে চলা-ফেরা করছিল, তাদেরও মুখে কিসের একটা শঙ্কা ! এই তীৰ্ষণ পুরীর মধ্যে শুধু এক ব্যক্তি পরম উৎসাহে বৈরীম శ్రీtyā চলেছে রাস্তার ওপর শুপীকৃত বরফ ভেঙে—লে আমাদের সার্ভেন্ট-মেজর লাকক। এতক্ষণে ছুটি পেয়ে, সে তার উৎকৃষ্ট পোষাক আর চকচকে সখের জুতা-জোড়াটি পরে, কঁচাপাকা চুলের বাহারে টেরির ওপর কায়দা ক’রে টুপিটি চড়িয়ে, হাতে একটা সেখীন ছড়ি নিয়ে বার হয়েছে । ছুটে গিয়ে হাজির হ’ল তার সেই চিরপরিচিত রাস্তায়, কিন্তু অবাক হয়ে দেখল তার দু-ধারে নতুন নতুন অট্টালিকার সারি উঠেছে আর তার চালু ছাদের ওপর জমাটবাধা বরফের চাই ভেঙে ভেঙে ফুটপাতে পড়ছে—রাস্তা জনশূন্ত ! তার বুকের মধ্যে ধড়াস ধড়াস ক’রে উঠল। কিন্তু বিশ বছর একটি মুখ ধ্যান করার সঙ্গে সঙ্গে ষে-বাড়ির ছবিটাও তার মনের পটে খোদা হ’য়ে গেছে তার কি কখনও ভুল হয়? অল্প সন্ধানের পরই তার সামনে এল সেই বাড়ি । হ্যা, এই ত সেই ! শুধু একটু পুরনো হয়েছে। সেই একতালীয় কেক আর চকোলেটের দোকান, তার সকল দেওয়াল কঁচের, তার পাশ দিয়ে উঠেছে সেই সিড়ি তেতলায় ! তেতলায় রাস্তার দিকে সেই জানাল এখনও ঠিক তেমনই রয়েছে, সেই রঙ, সেই কাজ, সেই পর্দা । এমন কি তার ওপর বরফও জমেছে ঠিক পূর্বের মত ৷ ফটকের ফ্রেমে তেতলার রঙবেলের বোতামটা সে তাড়াতাড়ি টিপল—একবার দু-বার আড়াইবার —ঠক পূর্বের সঙ্কেতমত। আশা এখুনি ঐ রঙীন পর্দা সরে যাবে, ঐ জানালীর কঁচি ধীরে ধীরে খুলে যাবে, ঐ বাতায়নে এখুনি ফুটে উঠবে সেই স্মিত সুচারু অনিন, সেই ভীত কুরঙ্গনয়নের চকিত বিলোল চাহনি—তার কানে সুধা ঢালৰে সেই মিষ্ট মদির সম্বোধন—তার শিরায় শিরায় উত্ত্বেলিত হবে সেই উন্মত্ত জাগরণ । তার সারা সভায় লীলায়িত হবে রূপ-রস-শবা-গন্ধ-স্পৰ্শ-প্রাণের সেই উদাম আলোড়ন । কিন্তু এ কি ? কি হ’ল ? সাড়া নেই কেন ? ঐ পর্দা ত কই সরছে না, ঐ জানাল ত কই খুলছে না— অনেক ক্ষণ ষে কেটে গেল ! আবার ঠিক সেই রকম ক’রে খোতাম টিপল—অনেক ক্ষ৭ জানালার দিকে চেয়ে রইলতবু কোন সাড়া নেই ?