পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*oo ব’লে ফেলি। কাল রাতে তোমার শাগুড়ী-ঠাকরুণ হঠাৎ বললেন,—অনেক দিন জামাই বেড়াতে আসে নি । তাকে একবার আনাও না । আমি বললাম, সে কি করে হতে পারে ? সে এখন নুতন চার্জ পেয়েছে। কাজের যে ক্ষতি হবে। দেখ আমার মতে ছুটি-ফুটি ওসব ঐ গোরাদের জন্তে । সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে ওর আসে আর আমরা ত ধর না এই বাড়ি বসেই চাকরি করি। এই কত বছর জজের সেরেঙ্গদারী করছি। ছুটি নিয়ে বসে থাকলে ত ওরা সবাই যা পারে লুটে নেবে। অসমর্থ হ’লে ত ওঁরাই আমাকে একেষারে ছুটি দিয়ে দেবেন। যত দিন শক্তি আছে—এই এসে পড়ল যে—রজনী তোর স্বাকে খবর দে—আমরা এসে পড়েছি । শ্বশুর-মহাশয়ের পশ্চাতে পশ্চাতে ক্লান্ত দেহখানি ও বিরক্তভর মুখখানি লইয়া বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করিলাম। শাশুড়ী-ঠাকুরাণীকে আর প্রণাম করাও হইয়া উঠিল না। নিতাস্ত অশোভন না হইলে হয়ত বেতখানি অনর্থক রজনী বেচারীর পিঠের উপর দিয়া চালাইয়া দিতাম । শাশুড়ী বলিলেন,—কি বাবা অমুথ-বিমুখ হয় নি ত ? চেহারা ত একেবারে ছাই হয়ে গেছে— —ইn—একটু থারাপই লাগছে—বলিয়া যেন কঁদিয়াই ফেলিলাম । বাধা দিয়া,—ও কিছু নয়, ষ্টীমারের বাকানিতে একটু খারাপ লাগেই-এক্ষুনি সেরে যাবে—তুমি না-হয় একটু চা থেয়ে আরাম কর গে, আমার আফিসের সময় হয়ে .এল—বলিয়া শ্বশুর মহাশয় সরিয়া পড়িলেন। ভিন্ন একখানি মুসজ্জিত কামরায় গুইয়া পড়িয়া আকাশপাতাল ভাবিতে লাগিলাম। মণিমালার আসিতে দেরি হইতেছিল। ভাবিলাম—কপাল ! এর বুঝি সবদিকেই সমান । মেয়েটিকে অফিসে নিয়ে যান নি ত? হঠাৎ অলঙ্কারের রুমুঝুম্ শব্দে চারিদিক মুখরিত হইল । বুঝিলাম—প্রিয়তমার আগমন । অভ্যর্থনা করিবার মত উৎসাহ আর হইল না, রাগ তখন ও পড়ে নাই । নিজেকে নিজেই ইণ্টে,াডিউস করিতে বা বোধ করি বিলম্বের কৈফিয়ৎ দিতে গিয়া সে হঠাৎ থামিয়া গেল, বলিল,—উঃ তাই ত মা বললেন তোমার শরীর থারাপ ! মাথা ধরেছে কি ? জলপটি বেঁধে দেব ? য়্যাসপিরীন আনৃব ? স্নান ক’রে নেবে ?—ন যাই, পখাটা নিয়ে আসি গে। ফিরিয়া আসিয়া হাওয়ার চোটে চাদর ও কুমাল উড়াইয়া দিয়া অভিমানের মুরে কহিল-কে বলেছিল তোম'য় অমুখ নিয়ে আসতে ? আমার পোড়া কপাল! নইলে এমন করে কেন ? অভিমানে অভিমান আনে, তাই এত ক্ষণে উত্তর দিলাম, —ম গে না, তোমাদের কড়া তলৰে আসতে হ’ল। শরীর ఎ98S ভালই ছিল, মনে করেছিলাম এখানে কারুর অমুথ-বিমুখ হয়েছে। কিন্তু তোমরা ত দেখছি দিব্যি চলাফেরা করছ। অমুখের অজুহাতে এক মাসের ছুটি নিয়ে এলুম, তা কারুর অমুখ-বিমুখ না থাকলে আমাকেই অসুস্থ হ'য়ে পড়তে হবে। না-হয় শিগগীর ফিরে যেতে হবে —তোমার বাবা হুকুম कुtझन् । —কেন, লোকে কি শুধু গাধার মত খাটবেই বার মাস ? বেড়াতে নেই, আমোদ-প্রমোদ নেই ? এ কি রকম ? না, তোমাকে একটি মাস থেকে যেতেই হবে। তুমি তার জষ্ঠে ভেব না । ক্ষণিকের জন্ত আশ্বস্ত হইয়া প্রিয়তমার অনভ্যর্থনার ক্ষতিপূরণ করিলাম। থাওয়া-দাওয়ার পরে দুপুরটা এক রকম ভালই কাটিল । শ্বশুর-মহাশয়ের প্রত্যাবর্তনের সময় হইয়াছে ঘোষণা করার অপরাধে রজনীকে তিরস্কার করিয়া উঠিলাম। আবার দুর্ভাবনা আসিয়া জুটিল। র্তাহার সহিত পূৰ্ব্বে এত আলাপের মুযোগ হয় নাই, এষার তার বৈষয়িক বুদ্ধির যে বহর দেখিলাম তাঁহাতে সমস্ত জটিল বলিয়াই মনে হইল । তবে মণিমালার অশ্বিাস ?—সে ত নিতান্ত মেয়েমানুষ । জজ-সাহেবের সেরেজদার ও থানার বড় দারোগার মধ্যকার ব্যাপারে তার হাত আর কত দূর থাকিতে পারে ? 6t শ্বশুর মহাশয় ঢুকিয়া কাপড় ছাড়িতে ছাড়িতে শাশুড়ী-মাতাকে বলিলেন,—দেথ, জামাই মাত্র দু-দিনই এখানে আছে—খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত যেন একটু ভালই হয় । আমি মনে মনে বলিলাম,—তার বদলে একটু বিষ থাইয়ে দিন না কেন ? চুটীস্থত পায়ে দিয়া চট-চট করিয়া এ ধারে আসিয়া বলিলেন,—ই্য, এখন ত বেশ লাগছে ? চেহারা দেখেই ত বুঝতে পাচ্ছি। বেশ, চল একটু চা থেয়ে নিই গে। সমস্ত শরীর তখন রাগে পুড়িয়া যাইতেছিল। দম বন্ধ করিয়া চক্ষু মুদিয়া সমস্ত মুখখনি জোরে বিকৃত করিয়া বলিলাম,–মোটেই নয়, মাফ করবেন। চা থাবার প্রবৃত্তি হচ্ছে না। খাবই না। অনেক পীড়াপীড়ি করিয়াও হারিয়া গিয়া শেষে চায়ের দোষকীৰ্ত্তন করিয়া বলিলেন,-চ থাই বলেই ষে ওটার প্রশংসা করব তা নয় । ওটার দোষ রয়েছে অনেক । বেশ, নাই খেলে এবেলা। রাত্রে একটু দুধ-কটর বন্দোবস্ত দেখা যাবে। কাল সকালে নিশ্চয় দেখবে দিব্যি সেরে গেছে । যদি না-যায়তবে—ও মণিমা, ও মণিমা আমার—বকৃত আর ভাল লাগিল না, ভাই তাড়াভাড়ি বাহির হইয় পড়িলাম।