পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মলন্তন পাইবার পিয়াসী হইয়াছে, তেমনি মহে প্রেমে আপনাকে বিলাইয়া দিবার জন্ত তিনি তৃষিত। খাওয়া শেষ করিয়া অরুণ বলিল—খুকু কি নতুন গান শিখেছ? এবার অরুণের প্রতিশোধের পাল । চন্দ্রী ছুটিয়া ঘর হইতে শীলার এসাজ লইয়া আসিল । —ছোটদের এস্রাজ সেরে এসেছে বাবা । —আচ্ছা, তোমার বড়দিকে ডাক । হেমবাবু নিজে হুকণ্ঠ গায়ক ন হইলেও, অত্যন্ত সঙ্গীতপ্রিয়। রোগশয্যায় সঙ্গীতানুরাগ অত্যন্ত প্রবল হইয়াছে । দিল্লীতে তিনি মেয়েদের সঙ্গীতশিক্ষার জন্ত ওস্তাদ রাখিয়া দিয়ছিলেন । সুস্থ বোধ করিলে কলিকাতাতেও মধ্যে মধ্যে ভ{ল গায়ক আহবান করিয়া জলসা হয় । প্রোয় প্রতি সন্ধাতেই কল্পীদের লইয়া পারিবারিক সঙ্গীতসভা বসে । উমরি গলা ভাল, কিন্তু কলিকতীতে আসার পর প্রায়ই তাহার সর্দি-কাশি হয়, নিয়মিত ভাবে গান শিখিতে পারে না । শীলা গান ভাল গায় না, তবে সেতার এস্রাজ সকল প্রকার বাদ্যাম্ব বজাইতে সুনিপুণ । চন্দ্রা নে কোন দিন গায়িকা হইবে এ আশ! তাহার পিতাও করেন না ; তবে কল্প পিতাকে সাধ্যমত গান গাহিয়া আনন্দ দিতে তাহার অত্যন্ত উৎসাহ । সে উৎসাহ কেহ দমন করিতে চায় ন; } চন্দ্রর গান দিয়াই সে সন্ধার জলস আরম্ভ হইল । বড়দিদির সাহায্যে সে সুর-সমুদ্র অকুতোভয়ে পাড়ি দিল । শীলার এস্রাজ বাজান শেষ হইলে উমা বলিল—কোন গান করব, বাবা ? —আজি সকালে কি গানটা গুন-গুন করছিলে ? —ও, তিমির-দুয়ার খোল এস, এস নীরব চরণে— --ई] । —সে ত ভোরবেলার গান বাবা । জীবনয়ন ՊՋՏ ধীরে সন্ধা ঘনাইয়া আসিতেছে ; চারি দিকে মায়াময় আবছায়া ; পশ্চিমাকাশে নরিকেল বৃক্ষগুলির অন্তরালে স্বৰ্য্যাস্তের সুবর্ণচ্যুতি প্রকৃতি-লক্ষ্মীর ললাটে রক্তচন্দনের মত। হাস্নাহানীর গন্ধভর বাতাস মৃদু বহিতেছে। - অরুণ গান শুনিতে লাগিল । উমা প্রতিমার মত অত চমৎকার গায় না । দু-জনের গান গাঁহিবার ভঙ্গীর কত প্রভেদ । প্রতিম। যদি এ গানটি গাহিত, মনে হইত, নীড়ে-জাগ ভোরের পার্থী সহজ উচ্ছসিত আনন্দ সুরে অরুণোদয়ের অভ্যর্থনা করিতেছে । উমা গাহিতেছে, যেন শ্রান্ত পথিক ক্লান্ত চরণে অন্ধকার রাত্রে পথহারা হইয়া আলোর জন্ত বাকুল প্রার্থনা করিতেছে । উমরি কণ্ঠ এমন করুণ উদাস কেন ? উমা তাহার মাতার সুন্দর রং পাইয়াছে বটে, কিন্তু তাহার মুখের সামঞ্জস্যপূর্ণ সুগঠিত রূপ পায় নাই। মুখখানি লম্বী, অনতিপক্ক পেয়ার-ফলের মত ; প্রশস্ত উন্নত ললাটে একটি টিপ জলঙ্গল করিতেছে, যেন উথার গগনে শুকতারা ; টানা দর নীচে আয়ত নয়ন নীচু করিয়া বসান, সে নয়নে কখনও নিষ্কাষিত অসি-লতার দীপ্তি, কখনও অীষাঢ়ের নবীন মেঘের ছায়াস্নিগ্ধতা ; অপরিপুষ্ট অধর একটু শীর্ণ, সে শীর্ণত রোগশয্যর সেবাক্লিষ্টতা, রাত্রি জাগরণের ক্লাস্তি ; গও দুইটিতে কথনও উষার পাণ্ডুরতা, কখনও সন্ধার রক্তিমা; প্রশস্ত চোয়াল হইতে কমনীয় চিবুকের রেখার ছন্দ ঔদান্তে ভরা ; যেন সমুদ্রের একটি তরঙ্গরেখা ললাটে উচ্ছসিত, নয়নে অনিত, কপোলে প্রবাহিত হইয়া চিবুকের দিগস্তে কোন অসীমে মিশিয়া গিয়াছে। স্বর্ণাভ প্রদোষান্ধকারে পটভূমিকায় গায়িক কিশোরীর মূৰ্ত্তি । তিন বোনের মধ্যে দেহরূপে কত প্রভেদ | শীলার মুখ উমর মত লম্বী নয়, গোল হইয়া আসিয়:ছ, তার পর চন্দ্রার মুখ ত চাদামাছ। শীলার রং উজ্জ্বল শুীমবৰ্ণ, —ওই গানই ত রাতে বসে গাইবার গান মা, যখন বয়সের তুলনায় স্থূলকায় , সহজেই আবেগে উচ্ছসিত হইয়া আলো শেষ হ’ল, অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, “তিমির-দুয়ার গোল—” এ যে অন্ধকারে আলোর জন্ত প্রার্থনা ! উমা ধীরে গান ধরিল, তিমির-দুয়ার খোল এস, এস নীরব চরণে জননি আমার দাড়াও এই নবীন অরুণ কিরণে ? ওঠে, যেন এক সতেজ বনলতা নিজের চারি দিকে ভাবের কুঞ্জ রচনা করিতে চায়। উমার দেহের গঠন পরিমিত, মুখে পরিণত বুদ্ধির গাম্ভীৰ্য্য, ঠোঁটের টানে স্থিরসঙ্কল্প, কণ্ঠের সুরে শাণিত ভাব, স্ত্রী ও ধীশক্তি অন্তরাবেগকে সংযত করিয়া তহিকে শ্ৰীমণ্ডিত