পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b^రీశ్రీ fডকেল, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের নানা গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ, প্রাচীন সংস্কৃত পুথি ; ফার্দী, হাফেজ, মানা ফারসী কবির গ্রন্থ । দেওয়াল জুড়িয়া অক্ষণের প্রপিতামহের অয়েল পেপ্টিং—মাথায় কাজ-করা শামলা, গায়ে শালের চৌগাচাপকান, বীৰ্য্যব্যঞ্ছক মুখ, ওষ্ঠাধর পাতলা ও চাপ, টানা চোখ দুটি জল জল করিতেছে। অঙ্গণের পশ্চিমে দপ্তরখানা । ময়লা ফরাসের ওপর সরকার-মহাশয় সকালে হিসাব লেখেন, দুপুরে গড়গড় টানিতে টানিতে নিদ্রা ধান । অঙ্গনের দক্ষিণে দুইটি বৈঠকখানা-বর । একটিতে তক্তার ওপর ফরাসপাতা, মোটা মোট তাকিয়া সাজান । সে ঘরে কেহ বসে না । সরকার-মহাশয় রাত্রে নিদ্রা যান । অপর বৈঠকখানায় চেয়ার-টেবিল সঞ্জান । ষোড়শ লুই চেয়ারগুলির বাক পায় নড়বড় করে, কাপেটগুলির চিত্র মলিন । ইহাদের মধ্যে নুতন হলিফ্যাসানের চেয়ারগুলি বড় বেমানান দেখায়। প্রয়োজন হইলে অরুণের সাহেককাকাই ধরে মাঝে মাঝে বসেন । তাহার ঘর ধৈঠকথানা-মুরগুলির উপর দোতলায় । শিবপ্রসাদ দিনের বেলায় বাড়িতে অল্প সময়ই থাকেন । আইয়োনিক থামওয়ালা প্রশস্ত বীরাঙ্গায় যখন প্রভাতের রৌদ্র আপিয়া পড়ে, তাহার শোবার ঘরের জানালা বন্ধ থাকে। সকাল আটটার সময় ছকু খানসাম চায়ের পেয়ালা ও দাড়ি-কামাইবার গরম জল লইয়া শিবপ্রসাদের শয়নগৃহে প্রবেশ করে । নয়টার সময় স্নান করিয়া তিনি ব্রেকফাষ্ট খান | দপ্তরখানার উপর দোতলায় তাহীর খাবার ধর । মেহগনী কাঠের লম্ব বড় সাইডবোর্ড, দেওয়ালে অনেকগুলি বtধানো ছবি, ঘরটি মুসজ্জিত। ছবিগুলি তাহার ইউরোপের যৌবনের আনন্দন্মুতি, অধিকাংশই উপহার—রেনোয়ার “স্নানরতা তরুণী,"রসেটির “দান্তের স্বপ্ন," দেগার “নর্তকী,” নানা ছবি ; ইংলণ্ডের সামাজিক জীবনের খেলাধূলা, পিকনিক, নিশীথোৎসবের চিত্র, প্রাশোল্লাসপূর্ণ বিtি ৰেশগজ্জিত নর-নারীদের কটাে। . - সকাল সাঁড়ে দশটার সময় শিবপ্রসাদ বাহির হইয়া বান। ক্লাৰ হইতে ফিরিতে রাত এগারটা হয়। তার পর সাপার । ঠাণ্ডা মাংস ও সবজী খাওয়া উপলক্ষ্য গাত্র, মদ $నీeS খাওয়াই উদ্দেশু। গভীর রাত্রে তাহার গ্রন্থপাঠের সময় । তিনি বহুভাষাবিত । ইংলণ্ডে থাকিৰার সময় জাৰ্ম্মাণ, ইতালীয়ান, রুশ ও সুইডিস ভাষা আয়ত্ত করেন । দেশে আসিয়া শিক্ষক রাখিয়া সংস্কৃত ও ফারসী শিখিয়াছেন । এখন তন্ত্রশাস্ত্র ও ইতালীয় কবি কারদুচি পাঠে নিমগ্ন । বারানায় লম্বা বেতের চেয়ারে হেলান দিয়া বসিয়া মদ ও বই লইয়া রাত একটা কাটিয়া যায় । কিন্তু কোন কোন রাতে কালিদাস বা কারুক্কুচি, হাফেজ বা পুস্কিন, কোন দেশের কোন কবিই তাহার চিত্তকে শান্ত করিতে পারে না । তাহার শয়নগৃহে টেযিলের উপর রূপার ফ্রেমে বাধানে ছুইখানি ফটাে পুৰ্ব্বে ছিল। একটি, এক সমুদ্ৰনীলনয়ন মুরূপ ইংরেজ ললনার, মাথায় কৃত্রিম ফুলভরা টুপি, কলকাওয়াল কাশ্মীরী শাল হইতে তৈরি জামা ও স্কাট, মুখখানি কৃত্রিম ফুলের মত, শোভনতা আছে, প্রাণের দীপ্তি নাই। আর একটি ফটো একটি ছোট মেয়ের, তাহার নীলনয়ন স্নিগ্ধ, চুলগুলি একটু কালে, ফুটন্ত গোলাপের মত মুখখানি, হাসিটি চমৎকার। এখন সে নীলনয়না ইংরেজ-দুহিতার ফটো নাই, কোথাঃ অন্তহিত হইয়াছে । আর বেবীর ফটো থাটের মাথা দেওয়ালে ঝুলন। নিদ্রাহীন অশাস্ত রাত্রে কখনও কখনও শিবপ্রসাদ খুকীর ফটোট হুক হইতে খুলিয়া হাতে ধরিয়া বারানায় পদচারণা করেন । তার পর ফটোটি যথাস্থানে রাখিয়া চেয়ারে বসিয়া অন্ধকার গলির দিকে চাহিয়া থাকেন চৈত্রের জ্যোৎস্না । পলাশ বৃক্ষের শাখায় শাখায় রক্তি পুষ্পগুচ্ছ পুঞ্জিত ; নারিকেল বৃক্ষগুলির আড়ালে শুভ্ৰ মেঘ শুপে চক্রম যেন স্বপ্নতরী। শিবপ্রসাদের রক্তে বসন্ত-রাত্রিঃ মত্ততা লাগে। মনে পড়ে ইংলণ্ডের বসস্তাগমন । আপেল পিয়ার চেষ্ট্ৰীগাছে নবপুপস্তবকের কি অপরূপ সৌন্দর্য্যোচ্ছসি | শিশুমুখের মত কচি পাতাগুলি এল বৃক্ষের ডালে। - * শিবপ্রসাদ ভাবের্ন সেই বেবী এখন কত বড় হইয়াছে । তাহার বয়স এখন প্রতিমার সমান হইৰে । - গলির অন্ধকারের দিকে শিবপ্রপদ চাহিয়া থাকেন কোথায় কোন নিশাচর পাখী ডাকি ওঠে। **