পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সকালে উঠিয়া কাজের ভীড়ে লটারীর ভাবনা চাপ৷ পড়িয়া ষায়, কিন্তু দ্বিপ্রহরের নিশ্চিস্ত অবসরে আবার তাহা বিনোদিনীকে পাইয়া বলে। কত কল্পনাই করে, কত ভাঙাগড়াই ষে তাহার মনে চলিতে থাকে। স্বামীর কাছে বেশী কিছু বলিতে সাহস হয় না, সে যা ঠাট্টা করে । প্রকাশও যে কথাটা মন হইতে ঝাড়িয়া ফেলিয়াছে তাহা নয়, কিন্তু সেও বিনোদিনীর সঙ্গে এসব কথা আলোচনা করে না, আবার পাছে ঝগড়া-বাটি বাধিয়া যায় । এমনি করিয়া দিনের পর দিন কাটিয়া যায়, লটারীর ফলাফল জানিবার দিন ক্রমাগত অগ্রসর হইয়া আসিতে থাকে । উভয়েই উগ্রীব হইয়া অপেক্ষা করিয়া থাকে, কিন্তু পরম্পরের কাছে ধরা পড়িতে চায় না । কিন্তু সন্ধ্যার সময় প্রকাশ স্নানমুখে বাড়ি ফিরিয়া জাগিয়া বলে, “ন গো, ও সব আমাদের জুটষে কেন ?” ৰিনাদিনী নিজের আশাভঙ্গের দুঃখ ভুলিয়া প্রকাশকে সান্ধন দিড় বলে, বলে, “খ, ও কি আর কেউ পায় ? কই কথনও ত চেনাগুনের মধ্যে কাউকে পেতে দেখি নি ?” তাড়াতাড়ি করিয়া কড়াইল্পটির কচুরি ভজে, স্বামীকে যত্ন করিয়া খাওয়ায় । বিকালে কাজের অজুহাতে কখনও সে ఏ38) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হইয়া ছেলে ময়ে ছুটিকেও পরিষ্কার কাপড় পরাইয়া, স্বামীর সঙ্গে বাহির হয়। ট্রাম চড়িয়া গড়ের মাঠে গিয়া খুব খানিক বেড়াইয়া আসে । বিধাতার একটু খেন ইহাদের দিকে দৃষ্টি পড়িয়াছিল। পরদিন আপিস হইতে আসিয়া প্রকাশ হাসিতে হাসিতে বলিল, “ও গো জান, আমরা একটা কঁছনে প্রাইজ, পেরেছি, ৫০০ টাকার ” বিনোদিনীর মুখ উৎফুল্ল হইয়া উঠিল। সে বলিল, “কঁাদুনে প্রাইজ কেন ?” প্রকাশ বলিল, “এই স্কুলের প্রাইজে ছোট ছেলেগুলোকে কান্নার ভয়ে প্রাইজ দেয় দেখ নি ? সেই রকম আর কি ? তা সরস্বতী-হারের আর বেনারসীর ফরমাস দেয ত ? বিনোদিনী বিজ্ঞভাবে মুখ নাড়িয়া বলিল, “যা বলেছ, টাকা ক’টা আমনি ক’রে জলে দিই আর কি ? ও থাক, ওর একটি টাকাও তুমি ছুতে পারবে না।” প্রকাশ বলিল, “কি হবে একটু শোনাই যাক না ?” বিনোদিনী বলিল, “ডাক্তারের দেনটি দিয়ে দিই, তার পর শ্বশুরের ভিটেয় একখানা ঘর তুলব। মাঝে মাঝে এই ঘিঞ্জি থেকে বেকলে ছেলেমেয়েগুলো বাচে, আমিও বাহির হইতে চায় না, আজ নিজের থেকে কাজ সারিয়া বাচি ।”