পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আছিস-ঐ-ই ভাল । কি জানি, কে কি ভাবকে—ৰে গ্রহণ করেছেন । ওর জন্মের রাশি-নক্ষত্র বড় চমৎকার । দিনকাল হয়েছে - ওকে তুমি পাবে না মা। . বৈচিবন, বাশ, সারি সারি গোট তিন-চার ছাতিম গাছ। সেইখানে জঙ্গলের মধ্যে বাপ ও ছেলে চুরি করিয়া বসিয়া রছিল। সেদিনের সেই অমাবস্তার অন্ধকার রাত্রে আকাশ ভরিয়া মেঘ করিয়া আছে, একবিন্দু বাতাস নাই, গাছের পাতাটি নড়ে না । মুকেশী ঘুমাইতেছিল, ঘুমের মধ্যে শুনিতে লাগিল গুন্‌-গুৰু করিয়া গান হইতেছে— ও সুকেশী দেখনহাসি,—ভাল-ও-বাসি-ই-ইগে— মাথা হইতে পা পৰ্য্যন্ত তার থর-থর করিয়া কঁাপিতে লাগিল । চোখ বন্ধ আছে, কিন্তু সে দেখিল, অস্পষ্ট ছায়ার মত একধানা মুখ—সে মুখ দুলিতে তুলিতে কাছে—খুব কাছে—তার চোখ দুটির চুল-পরিমাণ ব্যবধানে এক-একবার আসিয়া দাড়ায়—আবার ভাসিয়া চলিয়া যায়। ঘুম ভাঙিয়া কতবার মুকেশী উঠিয়া বসে—তখন আর মুখখানি নাই, গানের গুঞ্জন নাই, কিছু নাই—নীরন্ধ, অন্ধকার, শূন্ত বিছানা। চোখ বুজিতেই সঙ্গে-সঙ্গেই আবার—ও মুকেশী ও মুকেশী । মনে হইতে লাগিল, যেন এই রাত্রে জানালা দিয়া কত জ্যোৎস্না আর কত বকুলফুল তার বিছানায় আসিয়া পড়িয়াছে { খুব তোরকেল, অল্প অল্প অন্ধকার আছে, কেহ কোন দিকে জাগে নাই। সন্ন্যাসী কেবল খট করিয়া বৈঠকখানার দরজা খুলিলেন, অমনি কুকেশ স্বপ্নমুৰ্বির মত সামনে একেবারে মুখোমুখি দাড়াইল । —সন্ন্যাসী-ঠাকুর, শ্বশানে-মশানে ছোট ছেলে নিয়ে যেতে আছে—আর অমন রাজিযেল ? সন্ন্যাসী অবাক হইয়া চাছিলেন। মুকেশী বলিল—রতন তোমার সঙ্গে আর কোথাও যাবে না। ও এখানে থাকবে । —কেন ? “...--. -ও আমার ছেলে। । ४५ - -* • বা নাড়িয়া সয়ালী বলিলো—ীে চড়িক ওকে ক্ষণকাল চুপ থাকিয়া মুকেশী প্রশ্ন করিল—পাব না ? দৃঢ়কণ্ঠে সন্ন্যাসী বলিলেন—ন । কোন আশা নেই। আমার চিরজীবনের সমস্ত সাধনা ওর উপর নিয়োগ করেছি। ঐ ছোট ছেলে দেখছ—কিন্তু ও ক্ষণজন্মা, অদ্ভুত | স্থিরদৃষ্টিতে চাহিয়া চাহিয়, হঠাৎ মৰ্ম্মভেদী আকুল কণ্ঠে হকেশী বলিয়া উঠিল—তবে আমার গোপুত্রকে এনে দাও । সন্ন্যাসী বলিলেন—বসে৷ তুমি মা । রোয়াকের চাতালে সন্ন্যাসী বসিলেন, নীচে মুকেশী । ভোরের স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া বহিতে লাগিল ; মেঘ আর বড় বেশী নাই, প্রায় স্বচ্ছ হইয়া আসিয়াছে । সন্ন্যাসী প্রশ্ন করিলেন-গোপাল—তোমার খোকা ? স্নান ছলছল চোখে মুকেশী বলিল—শত্তর । তিন বছর আগে চলে গেছে। সে-ও গেল,—উনিও ছন্নছাড়া । তারপর এই দশা । এক সন্ন্যাসী এসে সোনা-তৈরির খেয়াল ধরিয়ে দিল, এখন রাত-দিন কেবল বনে-জঙ্গলে— আর সন্ন্যাসী দেখলেই তার পেছনে পেছনে ছুটে বেড়ান। সে থাকলে উনি কি আমনি ক’রে সর্বস্ব ভাসিয়ে দিতে পারতেন ? হুকেশী আঁচলে মুখ ঢাকিল। নিঃশ্বাস ফেলিয়া সন্ন্যাসী উঠিয়া দঁাড়াইলেন। বলিলেন—মৃত্যু অমোঘ, ওর হাত থেকে ত্রাণ নেই । কেউ তোমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না মা —তবে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দাও । মুকেশী কাদিয়া ফেলিল। বলিল-সন্ন্যাসীঠাকুর, উনি ত বেঁচে আছেন, আবার ওঁকে আগেকার গত ক’রে জাও— সুতীক্ষ দৃষ্টিতে চাহিয়া সন্ন্যাসী বলিলেন—আমাদের শক্তিতে বিশ্বাস আছে তোমার ? --- মুকেশী বলিল-না। কিন্তু বিশ্বাস আমি স্কু তা ছাড়া উপায় যে নেই। আমার কেউ নেই, ঈ আমি থাকি কি ক’রে ? গতি নাকী কানার ভাৱে আৰাৱ ভাঙ্গি পড়িল।