পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bobo স্ট্রে প্রবাসী ; ఎ98S সযত্নে একটি কঁাচপোকার টিপ পরিল । টিপ পরিক্স পান চিবাইতে চিবাইতে পানের রসে ঠোট দুইটি লাল করিয়া যখন যুথিকা-সাহিত্য-মন্দিরের একটি বই হাতে বিছানায় একটু গড়াইয়া লইবার উপক্রম করিতেছে, ঠিক তখনই জানালা হইতে দেখিল নিৰ্ম্মগা হাতে খাতা বই লইয়া কলেজের জন্য প্রস্তুত হইয়া বাসের অপেক্ষায় বারান্দায় দাড়াইয় আছে । প্রতিমার অবাক লাগিল । বুঝিতে পারিল না, মেয়েমানুষ হইয়া এই বয়সে এতখানি কষ্ট করিয়া লেখাপডা শেখার প্রয়োজনট কোনখানে ? বড় হইয়া আর কিছু তাহাকে জজিয়তী করিতে হইবে না। পানের বেঁটামু করিয়া একটু চুণ লইয়৷ এই কথাটাই ভাবিতে ভাবিতে সে উপন্যাসের প্রথম পাতাখানা খুলিয়াই একবার শেষের পাতাটা দেখিয়া লইল । বিকালবেলায় কলেজ হইতে ফিরিয়া আসিয়া গা ধুইয়৷ নিৰ্ম্মল যেই বাহিরে আসিয়া দাড়াইয়াছে, প্রতিমা তাঙ্গকে একেবারে জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “ঠাকুরঝি ভাই, আমার মাথ৷ খাস, একটা টিপ পৰ্ব ।” নিৰ্ম্মলা অবাক হইয় তাহার মুথের দিকে চাহিমু রহিল। এই কয়েকদিন দূর হইতে কি যেন লক্ষ্য করিয়া প্রতিমার মন ভিতরে ভিতরে রহস্যসমাকুল ও পুলকিত হইয়া উঠিয়াছিল । মুখ টিপিয়া হাসিয়া সে বলিল, “অবাক হয়ে অমন করে মুখের পানে চাইছিল কেন ভাই ? আমি বলচি একটা টিপ পর আর একটা পান খা । অমন রাঙা দুটি ঠোটে পান না খেলে কি মানায় ?...তাছাড়া যামিনী বাবু দেখলে কত খুশী হবেন, বল ত ?” নিৰ্ম্মলা কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিল ; তাহার পরে প্রতিমার দিকে চোখ তুলিয়া কহিল, “যামিনী বাৰু কেন খুশী হবেন । তিনি কি আমার মুখের দিকে চেয়ে দেখতে যাবেন যে, আমি টিপ পরেছি কি ন-পরেছি।” প্রতিমা অবাক হইয় গেল। সে আশা করিয়াছিল যামিনীবাবুর নাম শুনিবামাত্ৰ নিৰ্ম্মলা লজ্জাম লাল হইয় উঠবে, ভিতরে ভিত্তরে খুশী হইবে, কিন্তু উপরে কৃত্রিম কোপ দেখাইয়া বলিবে, যাও!” কিন্তু তাহার ধারণার সহিত কিছুই মিলিল না। প্রতিমা অবাক হইল, সঙ্গে সঙ্গে গুহার একটু রাগও হইল। ‘মেয়ে অনেক লেখাপড়া শিথিয় মনে করিয়াছেন যেন পুরুষ হইয়া গিয়াছেন - مهم নিৰ্ম্মলাকে উদ্দেশ করিয়া সে মনে মনে বলিল, “ছাই অমন লেখাপড়ায় ! যাহার একটু ঠাট্ট বুঝিবার ক্ষমতা নাই, হৃদয়ের রস জীবনের সহজ আনন্দ-কৌতুক সমস্তই বর্জন করিয়া আগাগোড়া যে ঠিক ঐ ছাপার বইয়ের মতই ঝরঝরে হইয়া উঠিয়াছে, সে কেবল দশটা পাচট কলেজই করিতে পারে, আর কিছু পারে না।’ এমন রসবোধহীন মানুষের কাছে প্রতিমা আর তাহার দুলভ টিপের বাক্স খুলিতে কোন উৎসাহ বোধ করিল না । সেথান হইতে নিজের ঘরে চলিয়া গেল। নিৰ্ম্মল প্রতিদিনকার মত তেতলার ছাদে বেড়াইতে বেড়াইতে ভাবিতে লাগিল, নীটশের যে বইখান বাব| পড়িতে দিয়াছেন তাহার অনেক স্থল সে ভাল করিয়া বুঝিতে পারে নাই, সেই সব জায়গাগুল বাবাকে দিয়া বুঝাইয়ু লইতে হইবে । তথন একেবারে সর্বনিম্নতলায় সংসারের খরচ বঁাচাইবার জন্য তাহার মা মুশীলা একরাশ কয়লার গুড়া একত্র করিয়া তাহাতে মাটি মিশাইয় গুল প্রস্তুত করিতেছিলেন । এমনি করিয়া নিৰ্ম্মল মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হইয়া জন্মিয়াও মধ্যবিত্ত পরিবারের সমস্ত দুঃখ দৈন্য সঙ্কীর্ণত অভাব অনটন হইতে একেবারে দূরে রহিল । তাহার রাজ্যে কেবল নীটুশের শক্ত অধ্যায়গুলা বুঝিতে না পারার ক্ষোভ, তাহার পৃথিবীতে কেবল রবীন্দ্রনাথের পূরবী আর মহুয়ার কবিতাগুলির সম্পূর্ণ রস হৃদয়ঙ্গম না করিতে পারার অতৃপ্তি । ویه সে বছর পূর্ববঙ্গে বন্যা হইয়াছিল। বন্ত রিলীফ কমিটির সাহায্যের জন্য কলেজের মেয়েরা নিজেদের মধ্যে কিছু ছোটখাট অভিনয় ইত্যাদি করিবে স্থির করিয়াছিল । মাসাধিক কালব্যাপী উদ্যোগ আয়োজন এবং রিহাসালের পর অবশেষে সেই বিশিষ্ট দিনটি আসিয়া পৌছিয়াছে। স্থির হইয়াছে ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী সভায় উপস্থিত থাকিবেন । অভিনয় অন্তে যাহাদের অভিনয় ভাল হইবে ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী তাহদের নিজে হইতে কতকগুলি প্রাইজ এবং মেডেল দিবেন বলিয়াছেন। নিৰ্ম্মলা কলেজের মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল গান