পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ ঐবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় পরিচ্ছেদ জ্যাঠামশাইদের বাড়ির শালগ্রামশিলার ওপর আমার ভক্তি ছিল না। ওঁদের জাকজমক ও পূজার সময়কার আড়ম্বরের ঘটা দেখে মন আরও বিরূপ হয়ে উঠল। আগেই বলেছি আমার মনে হ’ত ওঁদের এই পূজাঅর্চনার ঘটার মূলে রয়েছে বৈষয়িক উন্নতির জন্যে ঠাকুরের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখান ও ভবিষ্যতে যাতে আরও টাকাকড়ি বাড়ে সে-উদ্দেশ্যে ঠাকুরের কাছে প্রার্থন জানান । তাকে প্রসন্ন রাখলেই এদের আয় বাড়বে, দেশের খাতির বাড়বে—আমার জ্যাঠাইমাকে সবাই বলবে ভাল, সংসারের লক্ষ্মী, ভাগ্যবতী—র্তার পক্ষেতে এ-সব হচ্ছে, সবাই থোশমোদ করবে, মন জুগিয়ে চলবে। পাশপাশি অম্নি আমার মায়ের ছবি মনে আসে। মা কোন গুণে জ্যাঠাইমার চেম্বে কম ? মাকে চা-বাগানে দেখেছি কল্যাণী মৃত্তিতে—লোকজনকে খাওয়ানে-মাখানে, কুলীদের ছেলেমেস্কেদের পুতির মালা কিনে দেওয়া, আদর্যত্ন করা, আমাদের একটু অমুখে রাত ঃে গে বিছানায় বসে থাকা । কাছাকাছি কোনো চ-বাগানের বাঙালীবাবু সোনাদায় নেমে যখন বাগানে যেত, আমারে বাসায় ন-খেয়ে যাবার উপাম ছিল না। আর সেই মা এখানে এদের সংসারে দাসী, পরণে ছেড়া ময়লা কাপড়, কাজ পারলে স্বখ্যাতি নেই, না পারলে বকুনি আছে, গালাগাল আছে—সবাই হেনস্থ করে, কারও কাছে এতটুকু মান নেই, মাথা তুলে বেড়াবার মুখ নেই। কেন, ঠাকুরকে ঘুম দিতে পারেন না বলে ? আমার মনে হ’ত জ্যাঠাইমাদের শালগ্রামশিলা এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছেন, তিনি ষোড়শোপচারে পূজো পেয়ে জ্যাঠাইথাকে বড় করে দিয়েছেন, অন্ত সকলের ওপর জ্যাঠাইম যে অত্যাচার অবিচার করচেন, তা চেয়েও দেখচেন না ঠাকুর। এক দিন সন্ধ্যাবেলা ঠাকুর ঘরে আরতি স্বরু হয়েছে; নরু, সীতা, সেজকাকার ছেলে পুলিন আর আমি দেখতে গেছি। পুরুত্ঠাকুর ওদের সবারই হাতে একটা করে রূপোবাঁধানে চামর দিলে- আরতির সময় তার চামর ঢুলুতে লাগল। আমার ও সীতার হাতে দিলে না। সীতা চাইতে গেল, তাও দিলে না। একটু পরে ধূপ ধুনোর ধোয়ায় ও স্বগন্ধে দালান ভরে গিয়েছে, বুলু ও ফেণী কাসর বাজাচ্ছে, পুরুতঠাকুরের ছোট ভাই রাম ঘড়ি পিটচে পুরুতষ্ঠাকুর তন্ময় হয়ে পঞ্চপ্রদীপে ঘিয়ের বাতি জেলে আরতি করচে– আমি ও সীতা ছিটের দোলাইমোড়া ঠাকুরের আসনের দিকে চেয়ে আছি—এমন সময় আমার মনে হ’ল এ-দালানে শুধু আমরা এই ক’জন উপস্থিত নেই, আরও অনেক লোক উপস্থিত আছে, তাদের দেখা যাচ্চে না, তারা সবাই অদৃশ্ব । আমার গা ঘুরতে লাগল, আর কানের পেছনে মাথার মধ্যে একটা জায়গায় যেন কতকগুলো পিপড়ে বাস ভেঃে বেরিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে গেল। আমি জানি, এ আমার চেন জানা, বহুপরিচিত লক্ষণ, অদৃশ্ব কিছু দেখবার আগেকা অবস্থা—চ-বাগানে এ-রকম কতবার হয়েচে । শরীরে মধ্যে কেমন একটা অস্বস্তি হয়— সে ঠিক বলে বোঝানে যায় না, জর আসবার আগে যেমন লোকে বুঝতে পাে এইবার জর আস্যে, এও ঠিক তেমনি । আমি সীতা:ে কি বলতে গেলাম, পিছু হঠে গিয়ে দালানের থাম ঠেস দি দাড়ালাম, গা বমি-বমি করে উঠলে লোকে যেমন সে ভাব কাটাবার চেষ্টা করে, জামিও- সেই রকম স্বাভাবিক অবস্থ থাকৃবার জন্যে প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগলাম—কিছুতেই কি হ’ল না, ধীরে ধীরে-পূজার দালানের তিন ধারের দেওয়া আমার সাম্নে থেকে অনেক দূরে.অনেক দূরে সরে যে লাগল-কাসর ঘড়ির আওয়াজ জীশ হয়ে এল•••কতকগু:ে বেগুনী ও রাঙা রঙের আলোর চাক যেন একটা অ একটার পিছনে তাড়া করেছে...লারি সারি বেগুনী রাঙা আলোর চাকা খুব লম্বা সারি আমার চো:ে সামনে দিয়ে গেলে যাচ্ছে...তারপর আমার বঁ