পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sobo মাখে না, কারুর কথা গ্রাহের মধ্যে আনে না—চিরকালের একগুয়ে স্বভাব তার। আমার মনে মাঝে মাঝে কষ্ট হয়, আমাদের তো পয়সা নেই, সীতাকে তেমন ভাল ঘরে বিশ্বে দিতে পারব না—এই সব পাড়াগায়ে আমার জ্যাঠামশাহ্মদের মত বাড়িতে, আমার জ্যাঠাইমার মত শাশুড়ীর হাতে পড়বে—কি দুর্দশাটাই যে ওর হবে । ওর এত বইপড়ার ঝোক যে, এ-পাড়ার ও-পাড়ার বোঁঝিদের বাক্সে যত বই আছে চেয়ে-চিন্তে এনে এ-সংসারের কঠিন কাজের ফঁাকে ফঁাকে সব পড়ে ফেলে দিয়েচে । জ্যাঠাইম তো এমনিই বলেন, “ও-সব জলুক্ষণে কাও বাপু—মেয়েমানুষের আবার অত বই পড়ার সখ, অত সাজগোজের ঘটা কেন ? পড়বে তেমন শাশুড়ীর হাতে, ঝাটার আগায় বই পড়া ঘুচিয়ে দেবে তিন দিনে ৷” সীতার বুদ্ধি খুব । শতগল্প বলে একথান বই ও কোথা থেকে এনেছিল, তাতে ‘সোনামুখী ও ছাইমুখী বলে একটা গল্প আছে, সৎমার সংসারে গুণবতী লক্ষ্মীমেয়ে সোনামুখী ঝাট। লাথি খেয়ে মানুষ হ’ত--তারপর কোন দেশের রাজকুমারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গেল ভগবানের দয়ায়— সীতা দেখি গল্পটার পাতা মুড়ে রেখেছে। ও-গল্পটার সঙ্গে ওর জীবনের মিল আছে, এই হমুণ্ড ভেবেচে । কিন্তু সীতা একটি কথাও মুখ ফুটে বলে না কোনো দিন । ভারি চাপ । সীতা বই থেকে চোখ তুলে পথের দিকে চেয়ে বললে—ঐ হীরুঠাকুর আসূচে দাদা জামি পালাই— আমি বললাম—“বোস, হীরুঠাকুর কিছু বলবেন । ও ঠিক আজ এখানে খাবার কথা বলবে দ্যাখ_।” হীরুঠাকুরকে এ-গায়ে আসা পৰ্য্যস্ত দেখছি । রোগ কালো চেহারা, খোচা খোচা একমুখ কাচ-পাকা দাড়ি, পরণে থাঙ্কে আধমৰ্ম্মল থান, খালি পা, কাধে ময়লা চাদর, তার ওপরে একখানা ময়ল গামছা ক্ষেলা । নিজের স্বরদোর নেই, লোকের বাড়ি বাড়ি খেয়ে বেড়ানো তার ব্যৰস । আমরা যখন এখানে নতুন এলাম, তখন কত দিন ইরুঠাকুর এসে জামাকে বলেছে, “তোমার মাকে বল খোক, আমি এখানে স্বাঞ্জ দুটো খাবো।” মাকে বলতেই গুনি স্কিনি রাজী হতেন—ম চিরকাল এমন ছিলেন না, লোককে খাওয়াতেমাখাতে চিরদিনই তিনি জ্ঞালবাসতেন। * & ot-to it of ఫైని8ు সীতার কথাই ঠিক হ’ল। হীরূঠাকুর এসে বললে—“শো খোক, তোমার মাকে বলে আমি এখানে সাজ দুপুরে চাট ভাত খাবো।” সীতা বই মুখে দিয়ে খিল খিল করে হেসেই খুন। আমি বললাম, “হীৱ-জ্যাঠা, আজকাল তো আমরা আলাদা খাইনে ? জ্যাঠামশায়দের বাড়িতে থাই বাবা মারা গিয়ে পৰ্য্যস্ত । আপনি সেজকাকাকে বলুন গিয়ে । সেজকাক কাটালতলায় নাপিতের কাছে দাড়ি কামাচ্ছেন।” সেজকাক লোক ভাল। হীরুঠাকুর আশ্বাস পেয়ে আমাদেরই ঘরের বারান্দায় বসল। সীতা" উঠে একটা কম্বল পেতে দিলে। হীরুঠাকুর বললে, “তোমার দাদা কোথায় ?” দাদার সঙ্গে ওর বড় ভাব । হীরুঠাকুরের গল্প দাদা শুনতে ভালবাসে, হীরুঠাকুরের কষ্ট দেখে দাদার দুঃখ খুব, হীরুঠাকুর না খেতে পেলে দাদা বাড়ি থেকে চাল চুরি করে দিয়ে আসে। এখানে যখন খেতে আসত, তখুনি প্রথম দাদার সঙ্গে ওর আলাপ হয়, এই বারান্দায় বসেই । হীরুঠাকুরের কেউ নেই— একটা ছেলে ছিল, সে না-কি আজ অনেকদিন নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। হীরুঠাকুরের এখনও বিশ্বাস, চুেলে এক দিন ফিরে আসবেই এবং অনেক টাকাকড়ি আনবে, তখন তার দুঃখ ঘুচবে। দাদা হীরুর ওই সব গল্প মন দিয়ে বসে বসে শোনে। আমন শ্রোতা এ-গামে বোধ হয় হীরুঠাকুর আর কখনও পায়নি। খেতে বসে হীরুঠাকুর এক মহা গোলমাল বাধিয়ে বস্তু । জ্যাঠামশায়ের ছোট মেমে সরিকে ডেকে বললে, (হীর কারুর নাম মনে রাখতে পারে না ) “খুকী শোনে, বাড়ির মধ্যে জিগ্যেস কর তো ডালের বাটীতে র্তারা কি কিছু মিশিয়ে দিয়েছেন ? আমার গা যেন ঘুরচে।” সবাই জানে হীরুঠাকুরের মাথা খারাপ, সে ও-রকম একবার আমাদের বাড়ি খেতে বসেও বলেছিল, কিন্তু বাড়িম্বন্ধ মেয়েরা বেজায় চটুল এতে। চট্‌বারই কথা । জ্যাঠাইম বললেন— “লেজঠাকুরপোর খেয়ে-ক্ষেয়ে তো আর কাজ নেই, ও জাপদ মাসের মধ্যে দশ দিন আসে এখানে খেতে । তার ওপর আবার বলে কি-না ভালে বিষ মাখিয়ে দিইচি আমরা । অ৷ মরণ মডুইপোড়া বামুন, তোকে বিষ খাইয়ে মেরে কি তোর লাখে টাকার তালুৰু হাত করব ? সাজ থেকে বলে দাও সেঙ্গঠাকুরপে, এ-বাড়ির জোর বন্ধ হয়ে গেল, কোনো দিন সদরের চৌকাঠ মাড়ালে ঝাটা মেরে তাড়াবে। ”