পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ ৰৌদ্ধধৰ্ম্মে ৰূদ্ধ ও জন্মাস্তরবাদ ›ꬃማ কারণ, কিন্তু ত্রীহিষবাদির বৈষম্য তত্তদ-বীজগত-কারণ জন্য ঘটিয়া থাকে । জীবের কৰ্ম্মকে অপেক্ষা করিয়াই পরমাত্মা অনাদিকাল হইতে বিভিন্ন প্রকার সংসারের বিধান করিতেছেন । কর্শের পারতন্ত্র্য জীবের পক্ষে ত্যাগ করা বড়ই দুরূহ ব্যাপার। কৰ্ম্মই বন্ধনদুঃখের ও বার-বার জন্মাস্তরপরিগ্রহের হেতু । তবে কি পুনর্জন্ম নিরোধ করিতে হইলে কৰ্ম্মের নিরোধ বা সন্ন্যাস করিতে হইবে ? মানুষের চেষ্টা থাকিবে কেমন করিয় তাহার আত্মা –‘ত্যক্ত দেহং পুনর্জন্ম নৈতি”— দেহত্যাগের পর আবার দেহাস্তরগ্রহণদ্বারা সংসারে ফিরিয়া না আসেন এবং আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক দুঃখ বা ত্রিতাপের হস্ত হইতে, অর্থাৎ জন্ম, জরা, রোগ,মৃত্যু ও পুনর্জন্মের কঠোর ও কর্কশ শৃঙ্খলবন্ধন হইতে নিজকে মুক্ত করিবার উপায় খুজিম্বা লইতে পারে । কিন্তু, কোন জীবের পক্ষেই সৰ্ব্বতোভাবে ‘অকৰ্ম্মকুৎ থাকা সম্ভাবিত নহে । কৃষ্ণ, জনক, বুদ্ধ, চৈতন্য প্রভৃতি অবতার ও মহাপুরুষগণের জীবনচরিত লক্ষ্য করিলে দেখা যায় যে, র্তাহারা জীবের উদ্ধারকল্পে কৰ্ম্মসন্ন্যাস অপেক্ষায় কৰ্ম্মযোগের, অর্থাৎ কৌশলপূর্বক কৰ্ম্মের আচরণের, পথ প্রদর্শন করিয়া গিয়াছেন । কৰ্ম্মের পরিসমাপ্তি জ্ঞানে, স্বতরাং কৰ্ম্মের জ্ঞান দ্বারাই মুক্তি সম্ভাবিত হয়। পরলোকে অধিকতর স্বখের ও আনন্দের আশা না থাকিলে, মানুষ ইহলোকে দুঃখ এড়াইবার জগু আত্মঘাত দ্বারা নিজের ও হত্যাদিদ্ধারা শিশুসস্তানের প্রাণনাশ অবিধেয় মনে করিত না । স্বর্গাদিতে সুখভোগের আশা, অথবা ঐকাস্তিক ভাবে অপবর্গ লাভ, করিতে হইলে, কৌশলে কৰ্ম্মসাধন করিতে হইবে । হঠাৎ কৰ্ম্মত্যাগ করিয়া বসিতে চাহিলেও তাহা কাহারও সম্ভবপর হইয় উঠে না। যে কৌশলদ্বার। —“রুত্বাপি ন নিবদ্ধতে, কুৰ্ব্বন্নপি ন লিপ্যতে”— কৰ্ম্ম করিয়াও মানুষ নিবদ্ধ বা লিপ্ত হুইবে না এবং সংস্থতির কবল হইতে মুক্ত হইতে পারিবে, হিন্দু ও বৌদ্ধশাস্ত্রে সেই কৌশলের শিক্ষা উপদিষ্ট রহিয়াছে । জলে ও বায়ুতে অদৃশ্যম্ভাবে অনেক রোগৰীজাণু বিদ্যমান থাকে, কিন্তু তজস্ক যেমন সেই ভয়ে আমরা জীবনরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় এই প্রধান স্বৰ্যম্বমের ব্যবহার ত্যাগ করিয়া আত্মঘাতী ছই না, কেৰল বুদ্ধির কৌশলে দ্রব্যদ্বন্ধকে নির্দোষ করিয়া تنسيد تناة পান ও সেবন করি, তেমনই জ্ঞানদ্বারা কৰ্ম্মকেও নির্দেশষ করিয়া লইতে পারিলে জীবকে আর কৰ্ম্মবশতঃ পুনর্জন্মবন্ধনে পড়িয়া অনস্ত দুঃখ ভোগ করিতে হয় না। ছানোগ্য উপনিষদের সেই মহাবাক্য এস্থলে স্মরণীয় যাহাতে শ্রতি বলিতেছেন—“যখা পুষ্করপলাশ আপো ন গ্নিৰ্য্যস্ত এবমেবংবিদি পাপং কৰ্ম্ম ন শ্লিষ্কাতে”—যেমন পদ্মপত্রে জল শ্লিষ্ট হয় না, তেমন তত্ববিৎ জ্ঞানীতে পাপকৰ্ম্মও শ্লিষ্ট হয় না। কৰ্ম্ম করিব, অথচ তৎফলদ্বারা বদ্ধ হইয়৷ পুনর্জন্মের জন্য সংস্থতি লাভ করিব না—এমন কোন উপায়ের কথা শাস্ত্রে উপদিষ্ট আছে কি ? গীতার কৰ্ম্মযোগ-অধ্যায়ে উক্ত আছে যে, যে-কৰ্ম্ম করণীয়, তাহ অনাসক্ত ও নিরভিমান হইয়া তৎফলাকাঙ্ক্ষা বর্জন করিয়া ভগবদর্পণপূর্বক সম্পাদন করিতে পারিলে ভদ্বারা জীব ভববন্ধন প্রাপ্ত হয় না, বরং তাহা হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারে। মনে রাখিতে হইবে যে, সৰ্ব্বপ্রকার কৰ্ম্ম প্রশংসাই নহে ; স্বার্থপরতায় প্রণোদিত হইয়া কৰ্ম্মাচরণ বিধেয় নহে, কিন্তু কৰ্ম্মের মূলে পরার্থপরতা নিহিত রাখিয়া কৰ্ম্ম করিলে তবেই জগতের কল্যাণার্থ কৰ্ম্ম অমৃষ্ঠেয় হইল—এরূপ বলা যাইতে পারে। কৰ্ম্মের ফলে আকাঙ্কা রাখার অর্থ কি ? ইহার অর্থ এই যে, জগতের প্রাণীর জন্য হিতকর কৰ্ম্ম করিব, তাহাতে আমার নিজের লাভ, ক্ষতি, সিদ্ধি, অসিদ্ধি কিছুতেই উৎফুল্ল বা বিষন্ন হইব না। হিন্দুদর্শনের মতে কৰ্ম্মফলভোগের প্রধান কারণ এই যে, জীব মায়াপ্রভাবে নিজের উপর কর্মের কর্তৃত্বাভিমান করিয়া থাকেন, তিনি যে ‘অকৰ্ত্তা’ তাহা তিনি যেন বিস্মৃত হন। ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতির অত্যাচারে বা মায়াপ্রভাবে যে সৰ্ব্বকৰ্ম্ম আহুষ্ঠিত হয়, জীব তাহ যেন সৰ্ব্বদাই ভূলিলা যান। তাই নিষ্কাম-কৰ্ম্ম-কৰ্ত্ত ইহা সৰ্ব্বদা স্মরণ রাখিয়া কাম কৰ্ম্মের সন্ন্যাস বা পরিহারপূর্বক সৰ্ব্বভূতের হিতার্থে কৰ্ম্ম করিয়া তৎফলত্যাগী হন। ইহারই অপর ব্যাখ্যা পরমাত্মা বা ভগবানের প্রীতির জন্য তাপণপূর্বক কৰ্ম্ম-সম্পাদন । এই ত গেল ব্ৰাহ্মণ্য ধৰ্ম্মের উপদেশমত কৰ্ম্মফলের আলোচনা । বৌদ্ধগণের ধৰ্ম্মশান্ত্রেও পুণ্যকৰ্ম্মের সঞ্চয়ইহ-পরলোকে স্বখের নিদান ও পাপকর্মের সঞ্চয় ফুঃখের আকর বলিয়া উঘোষিত হুইয়াছে। তবে আমরা অনেক সময় দেখিতে পাই নে এই