পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ পঞ্চভূত হইতে উৎপন্ন দেহ রূপাদি পঞ্চস্বন্ধের সমষ্টি (এবং) প্রতীত্য-সমুৎপাদ-সভূত সব বস্তুই অনাত্মক । বৌদ্ধগণ৪ পরলোক মানেন, দেব-দেবীর কল্পনা করেন, স্বৰ্গ-নরকভোগের কথাও বলেন –কিন্তু তাহাদের মতে দেবদেবীর স্থান বড় নীচে । অতু্যচ্চ স্থান কেবল কৰ্ম্মের । কৰ্ম্মকেই তাহারা পুনর্জন্মের কারণ বলিয়া মানেন । ভববন্ধ-বিমুক্তির জন্য দুঃথমূলক অবিদ্যার সংছেদ করিতে হইবে ; তাহা করিলেই সংসারের নিবৃত্তি ও পুদগলের নির্বাণপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে। এই নিৰ্ব্বাণের লক্ষণ এই যে, ইহা নিম্প্রপঞ্চ, অনুৎপাদ, অসংভব ও অনালয়,—ইহা বিবিত্ত, প্রকৃতিশুষ্ঠ ও অলক্ষণ – ইহ “আকাশেন সদাতুল্যং নিৰ্ব্বিকল্পং প্রভাস্বরং”—ইহ 'অস্তি-নাস্তি-বিনিমুক্ত আত্ম-নৈরাত্মা-বর্জিত । হিন্দুদিগের ন্যায় বৌদ্ধগণ সালোক্য, সারূপ্য বা সাযুজ্য প্রভৃতি নামে অভিহিত মুক্তির আকাজী নহেন। তাহারা নির্বাণাস্তে শূন্তে শূন্য হইয়া যাইতে ইচ্ছা করেন । র্তাহীদের মতে এই শূন্ত ব্যতিরেকে আর যাহা কিছু আছে, তাহা সবই— “মায়া-মরীচি-স্বপ্নভং জলেন্দু-প্রতিনাদবৎ’ “মায়া বা মরীচিকার স্যাম, তাহ স্বপ্লের দ্যায়, জলচন্দ্রের যায়, অথবা প্রতিধ্বনির ন্যায় প্রতীয়মান হয় ।” পূৰ্ব্বেও স্বচিত হইয়াছে যে, বৌদ্ধধৰ্ম্মে প্রকৃতিপুরুষের সংযোগে হষ্টি বা সংসারের কোন কথা লক্ষিত হয় না । স্নেহ বা তৈলের অভাবে প্রদীপ নিবিয়া গেলে, তাহ যেমন অস্তরীক্ষ বা অবনী বা অন্য কোন দিগ বিদিকে গমন করে না, সেইরূপ কৰ্ম্মজনিত ক্লেশক্ষয়ে পঞ্চস্কন্ধাত্মক ( নাম-রূপী ) পুদগলও কেবল শাস্তিই লাভ করে এবং তাহার অস্তিত্ব পূর্ণভাবে লোপ পাইয়া যায় মাত্র। পরবর্তীকালে আচাৰ্য্য নাগাজুন রচিত চতুস্তব পাঠেও জানা যায় যে, এই শূন্ততার উপলব্ধিরই নামান্তর পরমার্থ। এই অবস্থায় বোদ্ধা ও বোন্ধব্যের কোন ভেদ থাকে না, এমন কি সংসারের অপকর্ষদ্বারা নিৰ্ব্বাণলাভের কোন কথাই খাটে না, সংসার ও নিৰ্ব্বাণ এই দ্বন্ধটি পর্য্যস্ত অভিন্ন হইয়া দাড়ায়। বেদাস্তের ব্রহ্মের স্যায়, কেবল লোকাহুবৃত্তি ও লোকানুকম্পার জন্তই শূন্ততার লৌকিকী ক্রিয়া ও “কৰ্ম্মপুতি” প্রদর্শিত হইয়া থাকে। কোন বস্তুর নাশ না হইলে, তাহা হইতে নুতন জন্ম হয় না । বৌদ্ধদের মতে “বমধম্মা সংখারা”—“অনিচ্চ সংখার” I” < * :---...- . বৌদ্ধধৰ্ম্মে কৰ্ম্ম ও জন্মাস্তৱবাদ هيستطيع —-যাহ কিছু সংস্কার বা আধ্যাত্মিক ও আধিভৌতিক বস্ত (all mental and physical constituents of being) আছে, তাহাই নাশশীল, তাহাই অনিত্য । নাশ ও অনিত্যতা আছে বলিয়া সেগুলিরই পুনরাগমন বা পুনর্জন্ম সম্ভাবিত । এগুলি সবই মৃত্যুর অধীন, কেবল ব্যতিক্রম কৰ্শ্বের বেলায় । বৌদ্ধ-মতে কৰ্ম্মের উপর মৃত্যুর হাত নাই । মল্পণের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চস্বন্ধের পরস্পর বিয়োগ ঘটিলেও কৰ্ম্মফলে সেগুলির পুনঃসংযোগের সম্ভাবনা থাকে । নুতন পুগেলে যেন পূর্বের কৰ্ম্মেরই সংযোগ বা আবৰ্ত্তন ( transfer ) ঘটিয়া থাকে । নূতন স্বফ্ট ব্যক্তির পূৰ্ব্বজন্মের জ্ঞান আবৃত থাকে মাত্র, কিন্তু তিনি পূৰ্ব্বজন্মের ব্যক্তিরই প্রবাহস্বরূপ । বৌদ্ধগণ এই স্থলে এরূপ দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেন, যেমন—এক প্রদীপ হইতে জালিত অন্য প্রদীপ, এবং শেষোক্ত প্রদীপ হইতে জালিত অপর এক প্রদীপ এবং তাহ হইতে জালিত আর একটি ইত্যাদি ; এবং এক আত্মবীজ হইতে নুতন বৃক্ষ এবং তৎফলের বীজ হইতে অপর বৃক্ষ ইত্যাদি । মিলিন্দ-পঞ হে? পাঠ করা যায় যে, রাজা মিলিন স্থবির নাগসেনকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন—“ভস্তে নাগসেন, যে উল্পজতি সে এব সে, উদাহু অঞঞোতি” ?—ভদস্ত নাগসেন, যিনি উৎপন্ন হন, তিনি কি তিনি ( অর্থাৎ পূৰ্ব্বেকার তিনি ) অথবা অন্য কেহ ? স্থবিরের উত্তর হইল-“ন চ সো, ন চ অঞ এেগতি”—তিনিও নহেন, অন্যও নহেন। রাজা মিলিন্দ নাগসেনকে কথাটি উপমাস্বার বুঝাইয়া দিতে অমুরোধ করায়, নাগসেন রাজন, শিশু অবস্থার তুমি এবং যুবক অবস্থার তুমিই যে বৃদ্ধ অবস্থার তুমিই রহ, ন—ও তুমি রহ ; প্রথম প্রহরের প্রদীপ যেমন মধ্যম ও পশ্চিম বা শেষ প্রহরের প্রদীপও রহে, না-ও তাহ রহে ; দুগ্ধ যেমন দধি, নবনীত ও স্থতও রহে, না-ও তৎসমুদয় রহে ইত্যাদি রূপ দৃষ্টান্তদ্বারা বুঝাইয়৷ দিলেন যে, যিনি উৎপন্ন হন, তিনি তিনিও নহেন, অন্যও নহেন । দেখা যাইতেছে যে, যাহা ধৰ্ম্মসস্ততি বা বস্তুর ধৰ্ম্মপ্রবাহ তাঁহাই বস্তুতে সম্মিলিত হয় । যাহার নিরোধ ঘটে তাহারই ঠিক উৎপত্তি হয় না, কিন্তু নিরুধানানের ধৰ্ম্মপ্রবাহ উৎপদ্যমান বস্তুতে সংক্রাস্ত হয় মাত্র । নিজের পুনর্জন্ম আর হইবে কি-না, মানুষ তাহা কিরূপে জানিতে পারে ? এইরূপ প্রশ্নের উত্তরে নাগসেন রাজা