পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

א"ל צ ১৩৪১ মিলিকে বুঝাইয়া মিছিলেন যে, "যেহেতু যে পচ্চয়ে পটগাছনায়ু, তস্য হেতু তল্ল পক্ষ উপরমে জানাতি সো—ন পটিসন্হিস্সামাতি ”—পুনর্জন্মের যাহা হেতু, যাহা কারণ তাহার উপরমের দ্বারাই সে জানিতে পরিবে যে, আর তাহার পুনর্জন্ম হইবে না। জন্মান্তরপরিগ্রাহী পুর্গলে কি প্রকারে পূৰ্ব্বজন্মের পাপকৰ্ম্ম সংক্রান্ত হয়, তৎপ্রসঙ্গে সেই গ্রন্থে উক্ত হইয়াছে যে, “কোন ব্যক্তি মরণ পৰ্য্যস্ত যেমন একপ্রকার নামরূপ, আবার তাহার পুনর্জন্ম হইলে তিনি অন্য প্রকার নামরূপ। তথাপি পরবর্তী নামরূপ পূৰ্ববৰ্ত্ত নামৰূপ হইতে উৎপন্ন হইয়া থাকে এবং তজ্জন্য সে পাপক হইতে মুক্ত হইবে না।” আরও উক্ত হইয়াছে— "প্রথম নামৰূপ যে পাপ পুণ্য কৰ্ম্ম আচরণ করে, তৎফলে পুনর্জন্মে পরবর্তী নামরূপও সেই কৰ্ম্ম হইতে মুক্ত হয় না।” বৌদ্ধদৰ্শনে কৰ্ম্মই যেন একমাত্র সত্য পদার্থ, ইহাই ছায়ার মত সৰ্ব্বদা জীবের অনুসরণ করিয়া থাকে। কৰ্ম্মবন্ধনই পুর্গলের স্কন্ধপঞ্চককে আটকাইয়া রাখিয়াছে—এই কৰ্ম্মফলবশতঃ স্বন্ধসমষ্টিরূপী পুর্গলের সংস্কৃতি বা পুনঃ পুন: জন্ম। এই জীবনপরম্পরায় জীব একও নয়, ভিন্ন নয়। হিন্দুদর্শনে জীব শরীরী ও ক্ষেত্ৰজ্ঞ নামেও পরিচিত—এবং সেই দর্শনের উপদেশ এই যে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জীবের পঞ্চভূতাত্মক ( যাটুকৌশিক ) শরীর বা ক্ষেত্র পরিত্যক্ত হইলে, জীব বা পুরুষ আমোক্ষস্থায়ী লিঙ্গশরীর বা সূক্ষ্মশরীর লইয়া সংস্কৃতি প্রাপ্ত হইতে থাকে। বৌদ্ধমতে যখন জীব বা পুর্গল পঞ্চস্কন্ধজুক সমষ্টিবিশেষ, তখন ইহার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকৃত নয়। তাই ইহা বড় কঠিন কথা, কেমন করিয়া পুর্গলের যোনিম্ৰমণ সম্ভাবিত হয়। দৃশ্যতঃ অনাত্মবাদী বুদ্ধদেব পাপ ও পুণ্যের ফলে সুখদু:খভোগী জীবের জীবনসমস্তার মীমাংসা করিতে উদ্যত হইয়া কৰ্ম্মফলের বলবত্ত সম্বন্ধে এক অভিনব বিচারের প্রবর্তন করিয়াছেন। কৰ্ম্মের আদি নাই—কিন্তু ইহার অন্ত হইতে পারে। আষ্টাঙ্গিক মার্গের অনুসরণ করিমু কৰ্ম্মফল নষ্ট করিতে পারিলে পুর্গলের নিরুপাধি নিৰ্ব্বাণ লাভ হয়। এই দর্শনে আমার আমিত্ব, তোমার তুমিত্ব ও তাহার তত্ত্ব কিছুই স্বীকৃত নাই। অথচ কোন অজ্ঞাত বা বা অজ্ঞেয় নিম্নমানুসারে কৰ্ম্মফল আমাকে তোমাকে ও তাঁহাকে পঞ্চস্কন্ধাত্মক শরীরধারী করিয়া পুন: পুনঃ স্বষ্টি করিতে পারে, এবং এইভাবে জীবনপ্রবাহও আমোক্ষ চলিতে থাকে । বৌদ্ধগণের উত্তর এই হইবে যে, পুর্গলের সমস্ত উপাদান নষ্ট হই। গেলেও তাহার কৰ্ম্মফল (হিন্দুর আত্মার মত ) অবিনাশী এবং বৈদ্যুতিক শক্তির ন্যায় সেই কৰ্ম্মশক্তি পুর্গলের বিশ্লেষিত স্কন্ধগুলিকে পুনঃ সংযোজিত করিয়া নব নব স্বষ্টিসাধনে সমর্থ হয়। ইহাই সংস্কৃতির অখণ্ড্য নিয়ম। প্রকৃতির বশে পড়িয় কৰ্ম্মকারী কোন পুরুষের বা নিতোপলব্ধিস্বরূপ আত্মার স্বাধীন বা স্বতন্ত্র অস্তিত্বস্বীকারের কোন প্রয়োজন বুদ্ধদেব অনুভব করেন নাই। তবে মোটামুটি এই মনে হয় যে, বৌদ্ধের শূন্ত', বৈদাস্তিকের ‘ব্রহ্ম, সাংখ্য ও পাতঞ্চলের পুরুষ ও ঈশ্বর’ এবং প্রথমের প্রতীত্য-সমুখপা জন্য স্কন্ধপ্রপঞ্চ, দ্বিতীয়ের ‘মামা ও তৃতীয়ের ‘প্রধান’ বা ‘প্রকৃতি প্রায় পরস্পর সমস্থানীয়। ললিতবিস্তরের একটি শ্লোক উদ্ধৃত করিয়া বক্তব্যের উপসংহার করিতেছি— “চিরাতুরে জীবলোকে ক্লেশ-ব্যাধি-প্ৰপীড়িতে। বৈদ্যা ত্বং সমৃৎপন্ন সৰ্ব্বাধিগ্রমোচৰঃ।" "হে বুদ্ধদেব, ক্লেশরাপ ব্যাধিদ্বারা প্ৰপীড়িত হইয়া বহুকাল জীবলোক আতুর অবস্থায় পতিত রহিয়াছিল, তুমিই সৰ্ব্বপ্রকার ব্যাধির এমোচন কারিরূপে বৈদ্যরাজ হুইয়া সমুৎপন্ন হইয়াছিলে।”