পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আয়ুৰ্বেদের ইতিহাস ডক্টর ঐশ্বরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত আয়ুৰ্ব্বেদ অনাদি । যতদিন ধরিয়া মনুষ্যজীবন আরম্ভ হইয়াছে, ততদিন ধরিয়াই জীবনকে জানিবার চেষ্টা চলিয়াছে । এমন কি পশুপক্ষীর মধ্যেও আহারবিহারের একটা নিয়ম আছে ; রুগ্ন হইলে তাহারাও রোগ-প্রশমনের কোন-না-কোনও উপায় অনেক সময়েই অবলম্বন করিয়া থাকে। অত্যস্ত অসভ্য জাতিদের মধ্যেও রোগ-নিবারণের নানাবিধ যাদুমন্ত্র, নানাবিধ প্রক্রিয়া ও ভেষজ-সেবনের ব্যবস্থা দেখা যায়। প্রাচীন সভ্য জাতিদের বিষয়ে আলোচনা করিলে প্রত্যেক জাতির মধ্যে নানারূপ ব্যাধি, তাহার লক্ষণ ও সেই রোগ নিবারণের বিবিধ উপায় দেখা যায়। প্রাচীন মিশরীয়গণের মধ্যে নানারূপ তৈল ঘৃত ব্যবহারের কথা শুনা যায়, নানারূপ ধাতব বস্তু ও বৃক্ষভৈষজ্যের প্রয়োগের কথাও শুনা যায়। প্রায় সাড়ে চারি হাজার বৎসর পূর্বের চীনাগ্রন্থে দশ হাজার রকম জর ও চৌদ্দ রকম আমাশয়ের উল্লেখ আছে, নাড়ীবিজ্ঞানের প্রতি তাহদের প্রধান দৃষ্টি ছিল। পিয়ানো বাজাইবার মত আঙ্গুল বাজাইয় তাহার নাড়ী পরীক্ষা করিতেন। চীন ভৈষজ্যগ্রন্থে আদা, বেদানার মূল, বৎসনাভ ( একোনাইট ), আফিং, সেকোবিষ ( আসেনিক ), গন্ধক, পারদ, বহুবিধ প্রাণীর মলমূত্রাদি ও অসংখ্য বৃক্ষের পত্রমূলাদি ঔষধরূপে ব্যবহৃত হয় । চীনাদেশে লক্ষ লক্ষ টাকার গাছগাছড়ার ঔষধ প্রতি বৎসর বিক্রয় হয়। প্রাচীন চীনারা বসন্তের টীক দিতে জানিতেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাস প্রণেত গ্যারিসন বলেন যে এই তথ্যটি র্তাহারা ভারতবর্ষ হইতে শিথিয়াছিলেন। খৃষ্টপূৰ্ব্ব এগার-শ অব্দ হইতে চীনদেশে প্রতিবর্ষে কি কি জাতীয় রোগ কি কি পরিমাণে হয় তাহার তালিকা প্রস্তুত হইত। প্রাচীন গ্রীকদের মধ্যেও খৃষ্টীয় ৫ম শতাব্দীর হিপোক্রেটিসের পূর্ব হইতেই চিকিৎসাশাস্ত্রের উদ্ভব দেখা যায়। কিন্তু হিপোক্রেটিসের সময়েই তাহার সমধিক উন্নতি হয়। হিপোক্রেটিস নিজে রোগী দেখিবার সমক্ষে নাড়ী দেখিতেন, তাহার খাগপ্রশ্বাস শুনিতেন, মূলমূত্ৰাদি পরীক্ষা করিতেন ও তাহার মুখচোখের বিকারাদি লক্ষ্য করিতেন। নানাবিধ শস্ত্রোপচারেও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। হিপোক্রেটিসের পূৰ্ব্ব হইতেই অনেক ক্ষতস্থান আগুন দিয়া পোড়াইয়া সারাইবার ব্যবস্থা ছিল । পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা মনে করেন যে এই পদ্ধতি গ্রীকের হিন্দুদের নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াছিল। ঋগ্বেদে ১ম মণ্ডলের ৩৪শ স্থক্তে ত্ৰিধাতুর উল্লেখ আছে। সায়নাচার্য এই ত্ৰিধাতুতে বায়ু পিত্ত ও কফ বুঝিয়াছেন। স্বশ্ৰুত বলেন, আয়ুৰ্ব্বেদ অথৰ্ব্ববেদের উপাঙ্গ এবং সহস্ৰ অধ্যাম্নে লক্ষ শ্লোকে ইহা ব্ৰহ্মার দ্বারা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। ডহলণ র্তাহার নিবন্ধসংগ্ৰহ নামক টীকায় বলেন যে, আল্লাঙ্গ বলিয়া আয়ুৰ্ব্বেদকে উপাঙ্গ বলা হইয়াছে, কিন্তু অথৰ্ব্ববেদে মোট ছয় হাজার মন্ত্র আছে, লক্ষশ্লোকাস্মক আয়ুৰ্ব্বেদ তাহার উপাঙ্গ হইতে পারে না। চরক বলেন যতদিন হইতে প্রাণ ততদিন হইতে আয়ুৰ্ব্বেদ, যতদিন হইতে দেহ ততদিন হইতেই দেহবিদ্যা । আয়ুৰ্ব্বেদের উৎপত্তি বলিতে এইটুকু বোঝা যায় যে কোন সময়ে কোনও মনীষী কোনও একটি বিশেষ নিয়মশৃঙ্খলার দ্বারা রোগ রোগহেতু ও আরোগ্যোপামুকে বিধিবদ্ধ করিয়াছেন। চরক আয়ুৰ্ব্বেদকে স্বতন্ত্ৰ বেদ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন এবং ইহাদ্বারা জীবন পাওয়া যায় বলিয়া এবং জীবনের উপরেই ইহলোক ও পরলোকের মঙ্গল নির্ভর করে বলিয়া ইহাকে সকল বেদ অপেক্ষ শ্রেষ্ঠ বেদ বলিয়াছেন। ন্যায়স্থত্রে ও তাহার টীকাভাষাদিতে আয়ুৰ্ব্বেদের প্রামাণ্যদ্বারাই অন্য সকল বেদের প্রামাণ্য নিৰ্দ্ধারিত হইয়াছে। জয়ন্ত তাহার স্থায়মঞ্জরীতে বলিতেছেন প্রত্যক্ষীকৃতদেশকালপুরুষদশীভেদামুসারিসমস্তব্যস্তপদার্থসার্থশক্তিনিশ্চয়াশ্চরকাদয় । এই আপ্তোক্তত্ব নিবন্ধন আয়ুৰ্ব্বেদের ধেমন প্রামাণ্য বেদাদি গ্রন্থেরও সেইরূপ আপ্তোক্তত্বনিবন্ধন প্রামাণ্য স্বীকার করিতে হয় । বুদ্ধ বাগভট আয়ুৰ্ব্বেদকে অথৰ্ব্ববেদের উপবেদ বলিয়াছেন। অথৰ্ব্ববেদের সহিত আয়ুৰ্ব্বেদের বোধ হয় অতি প্রাচীনকাল হইতেই কোনও বিশেষ ৰোগ ছিল। কৌশিক স্বত্রের টাকা