পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ নানাস্থানে বিচরণ করিয়া নানাবিধ রোগের উৎপত্তি করিত, এইরূপ কথার অনেক উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেক সময়ে এই সমস্ত প্রাণীর সহিত ব্যাধিকে অভিন্ন বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। অপচিৎ নামক ক্ষতের কথা উল্লেখ করিয়া এরূপ কথিত আছে যে, তাহারা বাতাসে উড়িয়া বেড়াইত এবং মানুষের দেহে আশ্রয় লইয়া মানুষকে আক্রমণ করিত । কোন-কোন স্থানে এই অপচিংকে একরকম কীট বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে । একজাতীয় ক্রিমির আক্রমণে নানাবিধ ব্যাধি উৎপন্ন হয়, ইহাও উল্লিখিত হইয়াছে । এই সমস্ত দেখিলে মনে হয় যে, নানাবিধ ক্রিমিদ্বারা যে ব্যাধি উৎপন্ন হইত তাহা অথৰ্ব্ববেদ স্বীকার করিয়াছেন । বুদ্ধের সমসাময়িক আত্ৰেয়শিষ্য জীবকের সম্বন্ধে যে সমস্ত উপাখ্যান লিখিত আছে তাহাতে দেখা যায় যে, তিনিও মনে করিতেন যে, নানা প্রকার জীবাণু বা ক্রিমি হইতে নানা প্রকার ব্যাধির উৎপত্তি হইয়া থাকে। জীবকের সম্বন্ধে ইহাও লিখিত আছে যে, তাহার এক প্রকার মণি ছিল, সেই মণি শরীরের রুগ্নস্থানে রাখিলে শরীরের অভ্যস্তর দেখা জীবক অনেক সময়ে সেই মণি দিয়া রুগ্নস্থানের অভ্যস্তরবর্তী জীবাণুগুলি প্রত্যক্ষ করিয়া শস্ত্রোপচারের দ্বারা সেই স্থান ছেদন করি এই জীবাণুগুলি নিষ্কাসিত করিয়া দিয়া পুনরায় সেই স্থান সীবন করিয়া দিয়া লোককে রোগমুক্ত করিতেন । যু হত । অথৰ্ব্ববেদে ‘তক্সন’ বলিয়া যে রোগের উল্লেখ আছে তাহার লক্ষণ পড়িয়া মনে হয় যে, তাহ আধুনিক কালের ম্যালেরিয়া জর । এই তক্সনের প্রায়ই শরৎকালে প্রাদুর্ভাব হঠত ও ইহা হইতে কামল উৎপন্ন হইত। ইহা ছাড়া কাসিক ( কাল ), যক্ষ্ম ( যক্ষ্ম ), পামন ( পাচড়া ), অক্ষত ত্রণ বা টিউমার ), বিদ্রধ, কিলাস ( কুষ্ঠ ), গণ্ডমালা, জলোদর, আশ্ৰাব ( অতিসার ), বলাস ( ক্ষয় ), শীর্ষক্তি ( শিরঃপীড়া ), বিশল্যক (স্নায়ুবেদনা বা নাড়ীবেদনা ), পৃষ্ঠাময়, বিলকন্দ ( বাভব্যাধি ), আশরীক, বিশারীক অঙ্গভেদ ( বাতব্যাধিরই রূপান্তর ), অলজী (চক্ষুরোগ), বিলোহিত (রক্তস্রাব), অপস্মার, গ্ৰাহি ( ভূতেধর) প্রভৃতি বহুবিধ রোগের উল্লেখ আছে। ইহা ছাড়া, বংশানুক্রমে যে-সমস্ত রোগ হইয়া থাকে তাহাদিগকে ক্ষেত্ৰীয় বলিয়া ধরা হইয়াছে । পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, অথৰ্ব্ববেদেয় সময়ে একদিকে যেমন শাস্তি-স্বস্ত্যয়ন মন্ত্রপাঠ আয়ুৰ্ব্বেদের ইতিহাস $st কবচধারণাদির ব্যবস্থা ছিল, অপর দিকে তেমন বহুবিধ ঔষধ ব্যবহারের কথার উল্লেখ আছে । কিন্তু অথৰ্ব্ববেদে মন্ত্রচিকিৎসারই প্রাধান্ত দেখা যায় এবং অথর্ববেদের অনেক স্থান পড়িলে মনে হয় যে, মন্ত্রবাদী ও ভেষজবাদীদের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব ছিল । কিন্তু গোপথব্রাহ্মণ ও কৌশিকস্থত্রের সময়ে এই উভয় বাদীদের মধ্যে একটা সন্ধিস্থাপন হইয়াছিল বলিয়। মনে হয়। কৌশিক সূত্রে বহুবিধ ঔষধের উল্লেখ আছে, যথা— পলাশ, কাম্পিল, বরণ, জঙ্গিড়, অৰ্জ্জুন, বেতস্, শমী, শমকা, দর্ড, দূৰ্ব্ব, যব, তিল, ইঙ্গিড় তৈল, বরিণ, উষীর, ক্ষদির, ত্রপুস, মুঞ্জ, ক্রিমুক, নিতন্ত্রী, জীবী, অলাক, লাক্ষা, বিল, হরিদ্রা, পিপ্পলী, সদ্যপুষ্প, কুষ্ঠ অলাবু, খলতুল, করার, শিগ রু, বিভীতক, নিকট, শামৗবিম্ব, শীর্ণপণ, প্রিয়জু, হরীতকী, পুতিকা, ইত্যাদি । কৌশিকসূত্রে ক্ষতস্থানে জলেীক লাগাইবার বিধি দেখা যায় এবং সর্পদষ্ট স্থান অগ্নিকৰ্ম্মম্বারা পুড়াইয়া দিবারও বিধি দেখা যায়। ঋগ বেদ প্রভৃতিতে অশ্বিনীকুমারের চিকিৎসানৈপুণ্যের যে পরিচয় পাওয়া যায় তাহাভে দেখা যায় যে তিনি বিপলার একটি পদ যুদ্ধে ছিন্ন হওয়াতে তাহার বদলে একটি লোহার পা জুড়িয়া দেন । ঋজাখ ও পরাবৃজের আন্ধা দূর করেন । ঘোষাকে কুষ্ঠব্যাধি হইতে মুক্ত করেন। কল্প ও কক্ষিবংকে নবদৃষ্টি প্রদান করেন, বামদেবকে মাতৃকুক্ষি হইতে প্রসব করান, বন্ধ্যা নারীদিগকে স্বপ্রজা করিতে পারিতেন। যজ্ঞীয় পশুর ছিন্নশিরকে প্রতিসন্ধান করিতে পারিতেন এবং এই রুতিত্ব দেখাইয়। তিনি পূৰ্ব্বে শস্ত্রচিকিৎসকদিগকে লোকসমাজে সমাদৃত করেন । তাহাদের নামে অশ্বিনীকুমারের সংহিতা নামক গ্রন্থের কথা শুনা যায়। ব্রহ্মবৈবৰ্ত্ত পুরাণে লিখিত আছে যে, তিনি চিকিৎসাসার নামে গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়াছিলেন । ডাক্তার কর্ডিয়ান লিখিয়াছেন যে, তিনি এই গ্রন্থের খণ্ডবিশেষ পাইয়াছেন । ইহা ছাড়া তাহার নামে বহু ঔষধ প্রচলিত আছে। কাশুপের নামেও কাশ্যপতন্ত্র কাশুপসংহিতা নামে প্রাচীন গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। শতপথব্রাহ্মণ পড়িলে জানা যায় যে, সে সময়েও মুশ্রীতের শাস্ত্র সমাজে প্রচলিত ছিল । শতপথব্রাহ্মণের রচনাকাল ইউরোপীয় পণ্ডিতের অন্ততঃ খ্ৰীঃ পূঃ ৭০ ও বলিয়া মনে করেন । কাজেই দেখা যাইতেছে যে,