পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ মান সেরে আসি ৷ এখনি ত পথঘাট লোকে ভরে উঠবে। Fাপড় গামছা ও জলের ঘড়া জোগাড় করিয়া দুই জনেই পথে Iাহির হইলেন, সদর দরজায় শারদ তালা বন্ধ করিয়া গেলেন। তাহার পর দিনের কাজ একই চিরস্কন স্বত্র ধরিয়া লিতে লাগিল, বিরাম নাই, বৈচিত্র্য নাই। সন্ধ্য হইবার মাগে শারদ। ব্যস্ত হইয়া ক্রমাগত ঘর-বাহির করিতে লাগিলেন, উমাগতি আসেন কি-না। রুগ্ন, দুৰ্ব্বল মামুব নতান্তই দারে ঠেকিয় তাহাকে বাহিরে পাঠাইতে হইয়াছে, কন্তু প্রাণ র্তাহার ছটফট করিতেছে । যাহা হউক, প্রায় স্থৰ্য্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ফিরিয়া আসিম টমাগতি শারদার চিস্তার তখনকার মত অবসান ঘটাইম দলেন । তাহার হাত হইতে ছাতা, লাঠি লইমা অম্ব জিজ্ঞাসা করিল, “পা ধোয়ার জন্তে একটু গরম জল দেব, বাবা ?” উমাগতি বলিলেন, “দাও ম৷ ” অম্বা জল আনিতে মান্নাঘরে ঢুকিবামাত্র শারদ জিজ্ঞাস করিলেন, “কিছু করতে পারলে ?” উমাগতি মৃদুস্বরে বলিলেন, “ঠিক ত একরকম ক’রে এলাম। তাদের খাই বড় বেশী, বুঝেছে কি না যে আমাদের বড় দায় । তা আমি রাজী হয়ে এসেছি ।” শারদ বলিলেন, “বেশ করেছ, আমাদের ত আর ঐ একটি বই নেই ? কোনোমতে দু-হাত এক হয়ে যাক, তারপর এ পাপপুরী ছেড়ে দু-জনে কাশীবাস করব।” এই সময় অম্বা জল লইয়া ফিরিয়া আসিল । সেই দিন হইতেই বাড়ির শাস্ত, ধীর, মন্থর গতিটা বদলাইয়া গেল। ভোরে সন্ধ্যায় চুপি চুপি লোক আসে, কিসব পরামর্শ হয়, আবার চলির যায়। জিনিষপত্র আসে কতরকম, বাসনকোসন, শাড়ী, গহনা। অম্বাকে কিছুই বুঝাইতে হয় না, সবই সে বোঝে। অনেক বার সহিয়াছে, আরও কতবার সহিতে হুইবে কে জানে ? ভগবান কি চিরদিনই তাহার বাপ মাকে দুঃখ দিবেন ? হঠাৎ শীতের রাত্রে, ঘোর অন্ধকারের ভিতর তাহার গ্রাম ছাড়িয়া কোথায় চলিল। দুইখানি গরুর গাড়ীতে জিনিষপত্র বোঝাই, একখানিতে তাহার তিন জন । গাড়ীতে উঠিৰার পর অম্বা জিজ্ঞাস করিল, “ম, কোথায় যাচ্ছ ?” শারদা সংক্ষেপে বলিলেন, “তোর মামার বাড়ি ।” میw-سسدبیab অস্থ্যপূৰ্ব্ব৷ ২১৭ ভোরের আলোর সঙ্গে সঙ্গে তাহারা আর একটি গ্রামে প্রবেশ করিল। মামার বাড়ির লোকেরা সবই জানে দেখা গেল । আজই সকালে গায়ে হলুদ, রাত্রে বিবাহ। অম্বার বুকের ভিতরটা একবার মাত্র বিপুল বেগে ছলিয়া উঠিল, তাহার পর অসাড় হইয়া গেল। এ ব্যথা ত নূতন নয়, সে ত জানে ইহা তাহার জন্য জীবনপথে অপেক্ষা করিয়াই আছে ? যাক, বাবা মা ত মুক্তি পাইবেন। গ্রামেরই জনকতক এয়ে আসিয়া জুটিলেন, বরের বাড়ি হইতে হলুদ আসিল, কন্যাকে তাহ দিয়া স্বান করান হইয়া, গেল । তখনকার দিনে এত ঘটার তত্ত্ব ছিল না । তেল হলুদ ছাড়া অতি সামান্য কিছু জিনিষই আসিত । এক্ষেত্রেও তাহাই আসিয়াছিল । অম্বা একলা একটা ঘরে মাদুর পাতিষ গুইয়া দুপুরট কাটাইয়া দিল । উপবাসক্লিষ্ট দেহ, ব্যথাক্লিষ্ট মন লইয়া কখন ষে ঘুমের কোলে ঢলিম পড়িয়াছিল, তাহা নিজেই জানিত ন। বিকালের দিকে কয়েকটি যুবতী ও বালিকা আসিয়া হাসির কল্লোলেই তাহাকে জাগাইয়া দিল । মহা ঘটা করিম সকলে কস্ত সাজাইতে বসিয়া গেল । রক্তাম্বর, চন্দনচর্চিত অস্বী যেন রূপের জ্যোতিতে প্রদীপের ক্ষীণ আলোক মান করিয়া দিল । বর আসিল । শারদ। আশা-আশঙ্কাপূর্ণ হৃদম্বে এম্বোদের সঙ্গে করিম উঠানে অপেক্ষা করিতে লাগিলেন, এইবার বর আসিবে, স্ত্রীআচার আরম্ভ হইবে । ওদিকে নির্জন ঘরে অম্ব আশ্রহীন শুষ্ক চোখে নক্ষত্র-বিভূষিত আকাশের দিকে চাহিয়া বসিমা রহিল । হঠাৎ বাহর বাড়িতে একটা প্রচণ্ড কোলাহল শোনা গেল । বর ভিতরে আসিতেছিল, কে একজন লোক তাহার গতিরোধ করিয়া দাড়াইল, এবং চীৎকার করিয়া বলিতে লাগিল, “চলেছেন ত বিয়ে করতে, কিন্তু কাকে বিয়ে করছেন তা ভাল ক'রে খোজ করেছেন ? কষ্টার নিজের পিসী বিধবা হবার পর কলকাতায় বিদ্যেসাগরী মতে আবার বিবাহ করেছিলেন, তা জানেন ?” সঙ্গে সঙ্গে সভাস্কন্ধ লোক হৈ হৈ করিম উঠিয়া পড়িল । “কি অন্যায়, কি পাপিষ্ঠ ! ব্রাহ্মণের জাত মারবার চেষ্টা ।” উমাগতি অভিভূতের মত চাহিয়া রহিলেন, ভিতরবাড়িতে শারদা কাদিয়া মাটিতে লুটাইম্বা পড়িলেন, বরণডালা তাহার হাত হইতে খসিয়া পড়িল । -