পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩e এতই গোড়া সভ্য যে কোরের সনাতন নিয়ম অনুসারে নানা রঙের ট্রাইপওয়াল টুপি আর ব্যাজ না প'রে কখনও রাস্তায় বার হ’ত না । দু-জনেই জাৰ্ম্মান ছাত্রের নিয়ম যথাবিহিত পালন করেছে অর্থাৎ ডুএল লড়ে কয়েকটি তরোমালের খোচার দাগ গালে চিরস্থায়ী করে নিয়েছে । ফু-জনে একই অধ্যাপকের সেমিনারে নাতসনাল ও্যকোনোমি অর্থাৎ সমাজতত্ত্ব অধ্যয়ন করে। দু জনেই গোড় হিটলারভক্ত । দু-জনেই কাল মার্কস্ ও লাসালের নিছক নিন্দক । দু-জনেই রডবেতুসের স্তাবক—আর দু-জনেই ছিল একান্তরূপ মুগ্ধ ঐ রূপসী লুইসের । এ ছাড়া আর সব ব্যাপারেই ছিল তাদের চরম বৈষম্য | কাল ছিল প্রাচীন সন্ত্রান্ত বংশীয় । তার পিতার ব্যারণ পদবী গণ-তন্ত্রের যুগে অর্থহীন হ’লেও তার জমিদারীর ক্ষীণ আয়টুকু এখনও তাকে আভিজাত্যের গৌরবে মণ্ডিত ক’রে রেখেছে অর্থাৎ তাকে খেটে খেতে হয় না। আর হানসের পিত্ত হঠাৎ-ধনী—প্রকাণ্ড কারখানাওয়ালা : হ্যর্ণবের্গ ফ্রাঙ্কফুর্ট ইত্যাদি বহু শহরে তার সসেজের কারখানা আছে-এ ছাড় পেন্সিল, খেলন, নকল রেশম ইত্যাদি বহু দ্রব্যের কারখানার তিনি মালিক। হ্যর্ণবের্গের এক গলিতে তিনি বাল্যকালে সসেজ বিক্রী করতেন এবং সেই অবস্থা থেকে নিজ বুদ্ধি, পরিশ্রম ও ভাগ্য গুণে এখন কোটিপতি হয়েছেন । কালের দেহ ছিপছিপে পাতল ; দৈর্ঘ্যে ছয় ফুট আড়াই ইঞ্চি ! প্রকাও লম্বা মুখ, প্রকাও উচু নাক, কেউ তাকে স্বপুরুষ বলবে না। কিন্তু তার শাস্ত চক্ষুর স্নিগ্ধ দৃষ্টি পরম তৃপ্তিদায়ক, দেখলেই মনে হবে এ সেই ধীর, সমাহিত-চিত্ত ব্যক্তি যে মনে করে “মননেন সহ যঃ জীবতি স: এব জীবতি ।” আর হান্স-কে প্রাচীন গ্রীসের নিখুত প্রস্তরমূৰ্ত্তি বললেও অত্যুক্তি করা হয় না। জাৰ্ম্মানীর মতন দেশেও তার মত অত বলিষ্ঠ যুবক আর অত নিখুঁত পুরুষের রূপ অল্পই দেখা যায় । তার মুখের দীপ্ত আভা দেখলেই মনে হয় ওর মধ্যে কি প্রচণ্ড প্রাণশক্তি ! সামাজিক ব্যাপারে কাল মনে করে শ্রমজীবী আর আভিজাত্যের মধ্যে একটা সত্যিকারের মিলন আন প্রয়োজন । কালের মুখে এই রকম प्रख्शं শুনলে হান্‌স কুদ্ধ হয়ে উত্তর করে, “রেখে দাও তোমার প্যানপেনানি ! శిERTI; ఏ983 ঐ কুত্তাগুলোকে নাই দিলেই ওরা চড়ে মাথায়—ওদের সব সময়ে শাসনে না রাখলে রক্ষে আছে ?” কাল বলে, “তার পরিণামে যে জাতীয় সঙ্কট উপস্থিত হবে।” হান্স বলে “ই্যা ; জাতীয় সঙ্কট আনবে ঐ কুত্তার দল ! কি করবে ওরা ? ধৰ্ম্মঘট । কাজ বন্ধ করলেই শুয়োরগুলোকে সঙ্গীনের খোচ মেরে কাজ আদায় করবো না !” প্রবৃত্তির ব্যাপারে হান্‌স ভালবাসে তীব্রতা ও উজ্জলত, আর কাল ভালবাসে স্নিগ্ধতা ও গভীরতা। নাচের আসরে গিয়ে হানস খোজে যত চটকদার সুন্দরী আর অ্যামেরিকৃ জ্যাজ ব্যাণ্ডের উন্মত্ত সুর। তার সঙ্গে সে মত্ত হয়ে নাচতে ভালবাসে চালর্সটন, ব্রাকৃবটম আর রাস্বা। কাল ভালবাসে ইউরোপের নিজস্ব নাচ–“ভালতস’ আর তার সঙ্গে ট্রাউসে’র মুর । যদি মোজাট’ বাজলে বা তার সঙ্গে মিতুন্ত্রেত’ বা ‘পোলক’ নাচ হ'ল তাহলে তো সে মুগ্ধ ৷ তার মুর্ছনার আনন্দে সে বিভোর হয়ে যায়। হানম ভালবাসে ‘স্যাম্পেন’ বা কড়া ‘লিকার’ ! কাল ভালবাসে বহু পুরাতন রাইন ওয়াইন’ । কিন্তু তাদের আরুতি ও প্রকৃতি এত বিপরীত হলেও তাদের কোথায় কোন মিলনস্বত্র ছিল কে জানে, তারা ছিল পরম বন্ধু, আর তারা ছিল এক বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত যে ঐ শহরের অদ্বিতীয় সুন্দরী আর কেউ নয়, শুধু ঐ লুইসে ! প্রতি অপয়াহ্লের নির্দিষ্ট সময়ে দুই বন্ধুতে ঐ ফুলের দোকানের দোরগোড়ায় আসত—আর হানস খুলত দরজা- শব্দ হ’ত টুং-ং-২ ৷ লুইসেও ঠিক সেই সময়ে অন্ত সব কাজ ফেলে দোকানে থাকত-কোন দিন তার ভুল হ’ত না। শত শত ক্রেতার দরজা খোলার 'টুং' শব থেকে ঐ শব্দটির পার্থক্য সে অনুভব করত, তাই ঐ টুং-ই-ই কানে বাজলেই তার অত লালিত্যের উপরেও দুই গণ্ডে নতুন নতুন রঙের ঢেউ খেলে তাকে আরও স্বন্দর ক'রে তুলত। ওরা প্রায়ই কিছু কিনত না, শুধু লুইসের সঙ্গে আলাপ করতেই আসত। লুইসেও তা ভাল রকম বুঝত, কিন্তু তবু প্রতিদিম তাদের কাছে দোকানের প্রতি ফুলটি, প্রতি পাতাটির পরিচয় দিত। যতক্ষণ তার। সেখানে থাকত হান্সই লুইসের সঙ্গে কথা বলত। আর কাল থাকতো চুপ করে, শুধু লুইসে যখন তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করত তখন তার মুখ ফুটত। ন৷ হ’লে সে শুধু দেখত ঐ অনিন্যমুন্দরী লুইসে ।