পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তি ঐআশালতা দেবী

যামিনীর স্বভাবের গতি ছিল অত্যন্ত বেগবান এবং চঞ্চল । নিজেকে লইয়া সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করা, নিজের মনকে টানাহেঁচড়া করিয়া তাহ হইতে চুনিয়া চুনিয়া চিরিয়া চিরিয়া তত্ত্ব উদঘাটন করা এ-সকল তাহার ধাতে সয় না । তাহার সমস্তই দ্বিধাহীন, সোজাস্বজি। যাহা তাহার ভাল লাগে ন, তাহা হইতে পবল বিতৃষ্ণায় সে মুখ ফিরাইস্কা লয় এবং লইবার সময়ে কোন ছলে কোন মিহি এবং মিষ্ট বাক্য দিয়া তাহা ঢাকিবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে না। আবার ইহার উণ্ট দিকেও সে ঠিক এমনি জোরের সঙ্গে চলে। যেখানে তাহার মন আকৃষ্ট হয় সেখানেও এতটুকু রাখিয়-ঢাকিয় চল। তাহার অসাধ্য । সেই সে মবারের প্রাম সপ্তাহখানেক পরে যামিনী বিকালবেলায় চন্দ্রকাস্তের লাইব্রেরী-ঘরে ঢুকিয়া দেখিল, নিৰ্ম্মলা দরজার দিকে পিছন ফিরাইয়া আলমারী খুলিয়৷ কি বই বাহির করিতেছে। ঘন কালো চুলের রাশি হাতে, পিঠের উপর, কপোলে সমস্ত জায়গায় অবিন্যস্ত হইয়া ছড়ান। পিছনে পামের আওয়াজ পাইয়। সে মুখ ফিরাইয়া কহিল, "ও, আপনি এসেছেন । বাবা লেই কখন বেরিয়েছেন, তার কোন এক বন্ধু তাকে দুপুরের খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছিলেন । এবারে তো তার আসার সময় হ’ল । হয়ত এখনি এসে পড়বেন।” আচ্ছা আমি ততক্ষণ বসছি।’ স্থ্য, একটু বক্ষন। এই আলমারীটা গোছান শেষ হ’লেই আমি চায়ের জল চড়াব। বাবার জন্তে আর পনের মিনিট অপেক্ষ করব। তার পর তিনি না এলেও চা করব, এত অস্তমনস্ক প্রকৃতির লোক ! এই যে আলমারীটা দেখছেন এইটে আমি ছদিন অন্তর গোছাই, আবার বেমনকার তেমনি নোঙর হয়ে যায়।’ যামিনীর কাছ হইতে কোন উত্তর আসিল না। নিৰ্ম্মল আপনার হাতের কাজে মন দিল। হঠাৎ ধামিনী কহিল, “আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব ?” “কি কথা ?” “আচ্ছা, আপনার সঙ্গে ব্যবহারে আমি কি কোন দিন কোন অসঙ্গত আচরণ করেছি বা অন্যায় কিছু " বিস্মিত দৃষ্টিতে চাহিয়া নিৰ্ম্মল বলিল, “আপনি কি বলছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি নে। যামিনী নিৰ্ম্মলার মুখের দিকে চাহিম বলিল, “অন্ত কেউ হ’লে এইটুকুতেই বুঝত। আপনি বলেই পারছেন না। কিন্তু আমিও আর সঙ্কোচ করব না, আরও স্পষ্ট করে বলছি। ধরুন, আপনার বাবার সামনে আপনার সঙ্গে যেমন ব্যবহার করি সকল সময়েই আমার তা-ই করা উচিত । কিন্তু আমি তা পারিনে। আপনি যখন একলা থাকেন তখন আমার ইচ্ছে করে শুধু আপনার দিকেই একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকি। আর তাই থাকিও। আরও অনেক কিছুই ইচ্ছে করে, অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে নিই। কিন্তু আপনার বাবার স্বমুখে আপনাকে একদৃষ্টি চেয়ে দেখিনে। তাই, যদি মনে করেন কোথাও কোনখানে আমার অন্যায় হচ্ছে তাহলে আমাকে সাবধান ক’রে দিন। আপনার উপর কোন দিক থেকে এতটুকু অন্যায় করব তা আমি ভাবতেও পারিনে।” নিৰ্ম্মল! বিমনা হইয়া যামিনীর দিকে চাহিল। আলমারীর পাল্লাট তখনও খোল, কালো চুলে তাহার মুখখানি অর্ধ আবৃত। কি একটা অজানা ভয়ে তাহার গলাটা একবার কাপিয়া উঠিল। তারপরই আর একটু স্পষ্ট করিয়া সে বলিল, “আপনার কথা জামি এখনও খুব স্পষ্ট করে বুঝতে পারছি নে। কি হয়েছে বলুন ত! আপনি যে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকেন তা অপরেও লক্ষ করেছে।" যামিনীর মনে হইল নিৰ্ম্মল এমন সহজ গতিতে কুণ্ঠাহীন ভাবে কথা বলিতেছে, যেন এ আর কাহারও কথা। অন্ত