পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাম ও বালী ( আর্য্য ও অনায্যে সংঘাত ) শ্রীরজনীকান্ত গুহ দুষ্মথের বলে, শ্বেতাঙ্গ রাজপুরুষগণ প্রাচ্য ভূখণ্ডে আসিবার কালে তাহদের ধৰ্ম্মগ্রন্থ বাইবেলথানি মুয়েজ প্রণালীতে নিঃক্ষেপ করেন ; তাহার কারণ এই যে, ঐ শাস্ত্রের উপদেশগুলি স্বদেশেই অচল হইয় উঠতেছে, বিজিত দেশগুলিতে উহার এক বর্ণও ব্যবহারে আসিতে পারে না । এই নিদা শুধু শ্বেতবর্ণ খ্ৰীষ্টশিযদিগেরই প্রাপ্য নয় । প্রাচীন ও আধুনিক কোন যুগেই জম্বুগৰ্ব্বিত প্রবলতর জাতি দুৰ্ব্বলতর জাতির সহিত আদানপ্রদান করিতে গিয়া ধৰ্ম্মাতুশাসন গ্রাহ করিয়া চলে নাই। পরাজিত জাতির শাসন-সংরক্ষণে বিশুদ্ধ ধৰ্ম্মনীতি মানিয়া চলিয়াছে, এমন জাতির নাম ইতিহাসে খুজিয়া পাওয়া যায় না। ভারতের আর্য্যজাতি যদি এই সাধারণ নিয়মের বর্হিভূত হইতেন, তবে আজ এদেশে অস্পৃষ্ঠাতা-দূরীকরণের জন্য মহা সংগ্রাম আরম্ভ হইত না । আর একটা কথা । সকল সভ্য দেশেই শাস্ত্রে উৎকৃষ্ট বিধি-ব্যবস্থা লিপিবদ্ধ আছে ; কিন্তু কাজের বেলায় সেগুলি পদে পদে লঙ্ঘিত হইতেছে । বর্তমান কালের ইতিহাস আলোচনা করিবার প্রয়োজন নাই-বাহা সকলেই প্রতিনিয়ত চক্ষুর সম্মুখে দেখিতে পাইতেছে, তাহা দেখাইয়া দিবার প্রয়াস নিরর্থক । মহাভারত হইতে একটা দুষ্টাস্ত দেওয়া যাক । কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধের প্রাক্কালে কুর, পাণ্ডব ও সোমকগণ যুদ্ধের কতকগুলি নিয়ম নিৰ্দ্ধারণ করিলেন-- “আরব্ধ যুদ্ধ নিৰ্ব্বাপিত হইলে আমাদের পরপর গ্রীতি সংস্থাপিত হইবে। সমযোগ্য ব্যক্তিরাই পরম্পর ন্যায়ানুসারে যুদ্ধ করিবে কদাচ প্রতারণ করা হইব না। যাহারা বাগ যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছে, তাহাদিগের সহিত বাক্য দ্বারাই যুদ্ধ করিবে । যাহার সেনার মধ্য হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়াছে, তাহাদিগকে কদাপি প্রহার করিবে না। রধী রথীর সহিত, গজারোহী গঙ্গারোহীর সহিত, অশ্বারো অশ্বারোঙ্গীর সহিত এবং পদাতি পদাতির সহিত যোগ্যতা, অভিলাষ, উৎসাহ ও বল অনুসারে যুদ্ধ কfরবে। অগ্ৰে বলিয়া পরে ( প্রতিপক্ষকে ) প্রহার করিবে । বিশ্বস্ত ও ভীত ব্যক্তিকে প্রন্থার কপ্লিবে না । যে একজনের সহিত যুদ্ধে নিযুক্ত রহিয়াছে যে শরণাগত ; যে সংগ্রামে পরাভূখ, যাহার অস্ত্রশস্ত্র নিঃশেষ হইয়াছে, যে ধৰ্ম্মবিহীন, তাহাকে কখনও প্রহার করা হইবে না। সারণি, ভারবাহী শস্ত্রেীপঞ্জাবী, ভেরীবাদক ও বাদককে কদাপি আঘাত করিবে না ।” ( ভীষ্মপদল । મૂ-િ ১।১৭-৩২ । প্রতাপ রায়ের অনুবাদ, স্থানে স্থানে পরিবর্হিত । ) কুরুপাণ্ডবগণ ধৰ্ম্মযুদ্ধের নিয়মাবলি অঙ্গীকার করিয়া লইলেন, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে সব নিয়ম মানিয়া চলিলেন কি ? কৌরবেরা ছয় রর্থীতে মিলিয়া কিশোর অভিমত্যুকে সংহার করিলেন। পাণ্ডবপক্ষে যুধিষ্ঠির, ভীম, অৰ্জ্জুন, তিন জনেই কোন-না-কেনিও নিয়ম পদদলিত করিয়া জয়ের পথ সুগম করিয়া তুলিলেন । “কদাচ প্রতারণ করা হইবে না,” এই নিয়ম ভঙ্গ করিয়া ধৰ্ম্মপুত্র যুধিষ্ঠির দ্রোণাচার্য্যেব বধসাধনে সহায় হইলেন । “যে এক জনের সহিত যুদ্ধে নিযুক্ত বহিয়াছে. তাহাকে কদাপি আঘাত করিবে না,” এই নিয়ম অগ্রাহ করিয়া অজ্জন সাত্যকির শিরশেদোদ্যত ভূবিশ্রবার বাহু ছেদন করিয়া পরাজিত শত্রুর দ্বারা তাহাকে হত্যা করাইলেন । ভীম অন্যায়পূৰ্ব্বক দুৰ্য্যোধনের উরু ভঙ্গ করিয়া যুধিষ্ঠিরকে সসাগর পৃথিবীর অসপত্ন অধিকার প্রদান করিলেন । ক্রোধান্ধ অশ্বথামা গভীর নিশীথে সুপ্ত শত্রুশিবিরে উৎপতিত হইয়া এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী, দ্রৌপদীর পঞ্চ পুত্র প্রভৃতি বীরগণকে সংহার করিয়া এই অধৰ্ম্মের প্রতিশোধ লইলেন ; মাতুল রুপাচায্যের “ন বধ: পূজ্যতে লোকে সুপ্তানামিছ ধৰ্ম্মতঃ”—( প্রন্থপ্ত ব্যক্তিদিগের বধ ইহলোকে ধৰ্ম্মামুগত কাৰ্য্য নহে )—এই নিষেধ বাক্যে কর্ণপাত করিলেন না। পরিশেষে, হস্তশস্ত্রভীষ্মবধে ধৰ্ম্মযুদ্ধের কোন কোন নিয়ম অটুট ছিল, তাহা নির্ণয় করা এক দুরূহ সমস্যা। ইহাও লক্ষ্য করিবার বিষয় যে, “সারথিকে প্রহার করা হইবে না,” এই নিম্নম দুই পক্ষই প্রতিদিন লঙ্ঘন করিয়াছেন। তবেই দেখা যাইতেছে, ধৰ্ম্মশাস্ত্রের উপদেশগুলি তত্ত্বের দিক্ দিয়া উপাদেয় হইলেও ব্যবহারে, যুদ্ধক্ষেত্রে, সেগুলি