পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ না। ঐশ্বর্য্যে ও বিলাসসামগ্রীতে কিষ্কিন্ধ্যা অযোধ্যার নিকটে পরাজয় স্বীকার করিত না। হনুমান শুধু বল বুদ্ধি ও পরাক্রমে বিখ্যাত ছিলেন, তাহা নহে ; তিনি দেশ, কাল বুঝিয়া কাৰ্য্য করিতে জানিতেন এবং নীতিশাস্ত্রেও র্তাহার গভীর জ্ঞান ছিল , এজন্য সুগ্ৰীব তাহাকে “নয়পণ্ডিত” বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। ( কিষ্কিন্ধ্য। ৪৪৭ ) ইন্দ্রপুত্র বালী ইন্দ্রের তুলাই পরাক্রমশালী ছিলেন ( ১৯২৩) । তিনি ইন্দ্রপ্রদত্ত রত্নখচিত স্বর্ণহারে অলঙ্কত হইয়ু যুদ্ধ করিতে আসিয়াছিলেন ( ১৭৫ ) । বানরেরা বস্ত্র পরিধান করিত (১২।১৫) ; বালী স্ব গ্রীব প্রভৃতি মহাৰ্হ পর্যাঙ্ক, মণিমুক্ত ব্যবহার করিতেন। (৩৩১৯,১০,২৩) । বালীর অস্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও দশরথের অস্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মধ্যে বিশেষ প্রভেদ নাই । রামের উক্তি হইতেও প্রতিপন্ন হয়, তিনি বালীকে মানুষ বলিয়াই দণ্ড দিয়াছিলেন। কিন্তু রাম অন্যের সহিত যুদ্ধরত বালীকে বধ করিয়া ধৰ্ম্মযুদ্ধের একটি নিষেধবাণী পদদলিত করিয়াছেন, এই অভিযোগের উত্তর দিতে গিয়া তাহাকে বালীর মনুষ্যত্ব ভুলিয়া গিয়া বানরত্বের আশ্রয় লইতে হইয়াছে। প্রাণদণ্ড সহিবার সময় বালী মানুষ ; অধৰ্ম্মযুদ্ধে নিহত হইবার সময় বালী বানর বা পশু । ইহার পোষকতার জন্য বালীর দ্বারাও কবি একবার বলাইয়াছেন, তিনি বানর। এই অসঙ্গতি বানরবর্ণনায় পূৰ্ব্বাপর রক্ষিত হইয়াছে। একটা দৃষ্টান্ত দিতেছি। হনুমান জ্ঞানে ও গুণে কোনও মানুষ অপেক্ষা হীন ছিলেন না ; কবি যেন তাহার চিত্র আঁকিতে আঁকিতে আত্মহারা হইয়া গিয়াছেন। সহসা তাহার মনে পড়িল, "ও, হনুমান তো বানর," সুতরাং বহু বিলম্বে হঠাৎ একবার হনুমানের লাঙ্গুলটি উল্লেখ করিতে হইল। ( কিষ্কিন্ধা ৬৭৪)। মহাকবিদিগের অসঙ্গতি ধৰ্ত্তব্য নহে। মিণ্টন র্তাহার রাম ও বালী >> মহাকাব্যে দেবাত্মা ও দুষ্টাত্মাদিগকে শরীরী ও অশরীরী, দুই প্রকারই বর্ণনা করিয়াছেন। ইয়ুরোপীয়েরা আমেরিকার আদিম অধিবাসীদিগকে পশু জ্ঞান করিত। তথাকার যুক্তরাজ্যের একটি প্রদেশে ( Pennsylvaniaতে ) তাম্রবণ জাতির এক এক জনের মস্তকের উপরে বয়ঃক্রমানুসারে মূল্য নিৰ্দ্ধারিত হইয়াছিল। এদেশে যেমন বিষাক্ত সৰ্প মারিতে পারিলে লোকে পুরস্কার পাইয়া থাকে, তেমনি তথায় এক একটা রেড ইণ্ডিয়ানের মাথা আনিতে পারিলে শিকারীর রাজসরকার হইতে যথেষ্ট অর্থ লাভ করিত। রামক্ষেণের কবি কি বালী-বধের কাহিনীদ্বারা ইঙ্গিত করিলেন, আর্য্যগণ অনাযাদিগকে পশুর অপেক্ষ উচ্চতর শ্রেণীর জীব বলিষ্ক মনে করিতেন না ? কাহিনীটির উপসংহার চমৎকার। রামের উত্তর শুনিস্থ। বালীর প্রবোধ জন্মিল ; তিনি আপনার ভ্রম বুঝিতে পারিয়া রামের নিকটে ক্ষম প্রার্থনা করিলেন । বালীর প্রবোধ জন্মিল বটে, কিন্তু প্রাচীন কালে ধৰ্ম্মনিষ্ঠ ব্যক্তিগণের সকলের প্রবোধ জন্মে নাই। দ্রোণাচাৰ্য্য যুধিষ্ঠিরের মুখে "অশ্বথামা হত ইতি গজ:”—এই কথা শুনিয়া অস্ত্র ত্যাগ করিলে ধৃষ্টদ্যুম্ন তাহার শিরচ্ছেদ করিলেন। অর্জন তখন দূরে সংশপ্তকগণের সহিত যুদ্ধ করিতেছিলেন। আচাৰ্য্যদেবের এই নৃশংস বধের বৃত্তাস্ত শুনিয়া বিলাপ করিতে করিতে তিনি যুধিষ্ঠিরকে বলিলেন, চিরং স্থাগুতি চাকষ্ট্রিস্থেলোকো সচরাচরে । রামে বালিবধাযুদ্ধদেব দ্রোণে নিপাঠিতে ॥ দ্ৰোণপৰ্ব্ব । ১৯৫{৩৫ “বালী-বধে রামের যেরূপ অকীৰ্ত্তি হইয়াছিল, দ্রোণবিনাশের জন্য আপনারওঁ সেইরূপ অকীৰ্ত্তি চিরকাল সচরাচর ত্রিভূবনে বিদ্যমান থাকিবে ।"