পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&=l>stlas হেঁটে আসচি–ছেলেপিলে ছেড়ে থাকৃতে পারলাম না –চলে এলাম । - একটু পরেই বোঝা গেল বাবা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছেন এবং যেমন পাগল তেমনি আছেন । এবার আমাদেরও রাগ হ’ল-মায়ের কথা বলতে পারিনে, কারণ তাকে রাগ প্রকাশ করতে কখনও দেখিনি–কিন্তু আমি সীতা দাদা শ্বিন ভাই বোনে খুবই চটলাম । আমাদের চটবার কারণও আছে—খুব সঙ্গত কারণই আছে । আমাদের প্রাণ এথানে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেচে । বাবা আবার পুরোমায়ায় পাগল হয়ে উঠলেন তিনি দিন রাত বসে বসে বকেন আর কেবল খেতে চান । মা দুটি বাসি মুড়ি, কোনো দিন বা ভিজে চাল, কোনো দিন শুধু একটু গুড়–এই থেতে দেন । তাও সব দিন বা সব সময় জোটনে কষ্টকর। আমরা দুপুরে থাই তো রাতে আর কিছু খেতে পাইনে— নয়ত সারাদিন পরে হয়ত সন্ধ্যার সময় খাই। মা কোথা থেকে চাল জোগাড় করে আনেন আমরা জানিনে কখনও জিগ্যেসূও করিনি। কিন্তু বাড়িতে আর আমাদের তিষ্ঠুবার ধে নেই। বাড়িমৃদ্ধ লোক আমাদের ওপর বিরূপ--ছ-বেলা তাদের অনাদর আর মুথনাড়া সহ করা আমাদের অসহ ইয়ে উঠেছে । . চা-বাগানের দিনগুলোর কথা মনে হয়, সেখানে আমাদের কোনো কষ্ট ছিল না—অবস্থা ছিল অত্যন্ত সচ্ছল— ছেলেবেলায় সীতাকে ভুটিয়া চাকরে নিয়ে বেড়াত আর থাপা মানুষ করেছিল আমাকে । ছ-বছর বয়েস পর্য্যস্ত আমি থাপার কাধে উঠে বেড়াতাম মনে আছে । আমাদের এই বৰ্ত্তমান দুরবস্থার জন্য বাবাকে আমরা মনে মনে দায়ী করেছি। বাবা কেন আবার ভাল হয়ে সেরে উঠুন না ? তা হ’লে আর আমাদের কোনো দুঃখই থাকে না । কেন বাবা ওরকম পাগলামি করেন ? ওতে লজ্জায় ষে ঘরে-বাইরে আমাদের মুখ দেখাবার যে নেই। সে-দিন সকালে সেজখুড়ীমা এসে আমাদের সঙ্গে খুব ঝগড় বাধালেন। মেজখুড়ীমাও এসে যোগ দিলেন। তাদের বাগানে বাতাবী নেবুগাছ থেকে চার-পাচটা পাকা নেবু চুরি গিয়েচে । খুড়ীমা এসে মাকে বললেন-এ আমাদেরই কাজ– আমরা খেতে পাইমে, আমরাই লেবু চুরি করে ঘরে রেখেচি। তারা সবাই মিলে আমাদের ঘর থানাতল্লালী করতে চাইলেন। 怒 দৃষ্টি-প্রদীপ ఇ { মা বললেন—এসে দেখে যান মেজদি, আমার ঘরে তো লোহার সিন্দুক নেই যেখানে আমার ছেলেমেয়ের নেবু লুকিয়ে রেথেচে—এসে দেখুন--- শেষ পৰ্য্যস্ত বাবা ঘরে আছেন বলে তারা ঘরে ঢুকতে পারলেন না, কিন্তু সবাই ধরেই নিলেন যে, নেবু আমাদের ঘরেই আছে, খানাতল্লাসী করলেই বেরিয়ে পড়ত। খুব ঝগড়ঝণটি হ’ল—তবে সেটা হ’ল একতরফ, কারণ এ-পক্ষ থেকে তার জবাব কেউ দিলে না । জ্যাঠাইম। এ-বাড়ির কত্রী, তাকে সবাই মেনে চলে, ভয়ও করে । তিনি এসে বললেন – হয় তোমরা বাড়ি থেকে চলে যাও নয়ত ঘরের ভাড়া দাও। সীতা এসে আমাকে বললে—জ্যাঠাইমা এবার বাড়িতে অfর থাকতে দেবে না, ন দেবে না দেবে, আমরা কোথাও চলে যাই চল দাদ। দিন দুই পরে জ্যাঠামশাইদের সঙ্গে কি একটা মিটমাট হ’ল। ঠিক হ’ল যে দাদা চাকুরির জোগাড় করতে কলকাতায় যাবে, ঘরে আমরা আপাততঃ কিছুকাল থাকৃতে পাব । কিন্তু বাড়ির ওপাড়ার সবাই বললে—পাগলটাকে আর বাড়ি রেখে দরকার নেই, ওকে জলে গুঞ্জলে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আয়ু । সত্যি কথা বলতে গেলে বাবার ওপর আমাদের কারুর আর মমতা ছিল না। বাবার চেহারাও হয়ে উঠেচে অদ্ভুত । একমাথা লম্ব চুল জট পাকিয়ে গিয়েচে– আগে আগে মা নাইয়ে দিতেন, আজকাল বাবা কিছুতেই নাইতে চান না, কাছে যেতে দেন না, কাপড় ছাড়েন নী-গায়ের গন্ধে ঘরে থাক অসম্ভব । মা এক দিনও রাত্রে ঘুমুতে পারেন না—বাব কেবলই ফাইফরমাজ করেন—-জল দাও, পান দাওআর কেবলই বলেন থিদে পেয়েচে । কখনও বলেন চা করে দাও। না পেলেই তিনি আরও থেপে ওঠেন— এক মা ছাড়া তখন আর কেউ সামলে রাখতে পারে না—আমরা তখন ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাই, মা বুঝিয়েকুঞ্জিয়ে শাস্ত করে চুপ করিয়ে রথেন, নয়ত জোর করে বালিশে শুইয়ে দিয়ে বাতাস করেন, পা টিপে দেন–কিন্তু তাতে বাবা সাময়িক চুপ ক’রে থাকেন বটে, ঘুমোন না। পাগল হয়ে পৰ্য্যস্ত বোধ হয় একদিনও বাবার ঘুম হয়নি । নিজেও