পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిఖిః د8دتاد ছবিখানার সামনে ধাড়াইয় তাহার বুকের ভিতরট। কাপিতে লাগিল। কি অপূৰ্ব্ব মহিমা তার ধাড়ানোর ভঙ্গীতে, তার চোখের দৃষ্টিতে। সোমেন্দ্র কতক্ষণ যে ছবিখানার সম্মুখে দাড়াইয়াছিল, তাহা সে নিজেই ভুলিয়া গিয়াছিল। দরজা খোলার শব্দে চমকিয় সে ফিরিয়ু চাহিল। পর্দা ঠেলিয়া একটি দীর্ঘাঙ্গী তরুণী ঘরে চুকিল, এবং সোমেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হইয়া আসিল। সেমেক্সকে নমস্কার করিয়া কি যেন বলিতে গেল কিন্তু হঠাৎ কাশিয়া মুখ ফিরাইল । তাহার পর আবার তাহার দিকে ফিরিয়া বলিল, “বেশ পুরো নাটকীয় প্রথায় আমার প্রবেশটা হ’ল । আপনি অনুগ্রহ ক’রে ষে এসেছেন, এতে আমি কত স্বধী ত বলতে পারি নে।” শকুস্থলী তাহাকে লক্ষ্য করিম কথা বলিতেছে বটে, কিন্তু দেখিতেছে যেন অঙ্ক কাহাকেও। নিজেকে এই অবসরে সোমেন্দ্র একটু সামলাইয়া লইল । নিষ্ঠুর ব্যাধি ষে সেই অসাধারণ সৌন্দৰ্য্যকে এতখানি ধ্বংস করিষ্কাছে তাহা সে ভাবিতে পারে নাই । শকুন্তলার পরিচ্ছদটি যথেষ্ট আলগা ও চিলাঢ়াল, তবু তাহার সর্বাঙ্গের অস্থিপঞ্জর তাহার ভিতর দিয়া ফুটিয়া উঠিআছে, সেগুলিকে লুকাইবার উপায় নাই। তাহার কমনীয় দেহুলত বাকিয়া ঝুকিয় পড়িম্বাছে, প্রতিপদক্ষেপে সে টপিতেছে, বাছ দুইটি বেন অস্বাভাবিক রকম লম্বী, হাড় দু-খানি পাথরের মত শাদা ও তুষারশীতল । মুখের পরিবর্তন তত ফেণী হয় নাই, মাথাটি তেমনি রাণীর মত গৰ্ব্বিত ভাবে উন্নত, চক্ষু ছুটি জ্যোতিঃপূর্ণ, গণ্ডদেশে পূৰ্ব্বেরই মত উজ্জল রক্ৰোচ্ছাস । সবই আছে, অথচ যেন জরা ও ব্যাধির ছায়ায় আচ্ছন্ন । সে একটি সোফাম্ব বসিয়া কুগুনগুলি নাড়াচাড়া করিতে লাগিল। তাহার পর বলিল, “আমার চেহারা একেবারে বদলে গেছে তা আমি জানি, কিন্তু আপনি সেটা নিয়ে বেশী ভাববেন না, ওটা ধরেই নিন। ও-সব সামান্য বিষম্বে সময় নষ্ট করতে আমরা পারব না। আর আমি বদি অকারণেও বিরক্ত হুই তা হলেও কিছু মনে করবেন না, ও-টাও রোগের একটা লক্ষণ ? - সোমেশ্র বলিল, “আজ যদি আপনার শরীর ভাল ন৷ থাকে, ত থাকু না ? আমি কাল আসব না-হয় ?” শকুন্তলা ব্যস্ত হইয়া বলিল, “আরে না, না, কি ষে বলেন । আমি নির্জনে থেকে-থেকে আর ধে লোকগুলোকে চাই না, অবিমিশ্র তাদেরই সঙ্গমুখ উপভোগ করে করে একেবারে হাড়ে জালাতন হয়ে গেছি। এই গ্রামে আবার একটি প্রচারক আছেন, তিনি আজ সকালে এসেছিলেন। তিনি সৰ্ব্বদা এমন ভাবে কথা বলেন যেন আমার গত জীবনটা পাপে ভরপুর ছিল। কিন্তু তার কথাও থাকৃ। আমাকে একটু কলকাতার কথা বলুন ; দাদা বলছেন যে আপনি সোজা কলকাতা থেকেই আসছেন । কলকাতাটা এখন কেমন ? ভোরের বেলা গড়ের মাঠে ফুল পাতা জার শিশির-ভেজা ঘাসের যে-গন্ধটা পাওয়া যায়, তা একবার বুকভরে নিঃশ্বাসের সঙ্গে যদি টেনে নিতে পারি তাহলে এক-শ বোতল কণ্ডলিভার অয়েল থাওয়ার কাজ আমার হয়ে যায়। বালীগঞ্জের মাঠের ধারের সেই যে রাস্তাটা তার গাছগুলি তেমনি “সোনালী রূপালি সবুজে স্বনীলে’ ঝলমল করছে কি, না পাতা ঝরে গেছে ? আপনার দাদা সেই যে বাড়িটায় থাকতেন, সেটায় এখন কে আছে ? গানের স্কুলটা আছে কি, না উঠে গেছে ? থিয়েটারে এখন কোন নাটকটা সবচেয়ে নাম করেছে ? কলকাতার থাওয়া পরা প্রভৃতির নুতনতম ফ্যাশান কি ? আঃ, সেখানে যদি মরতে পারতাম ! হঠাৎ একটা কাশির ধমক আসিয়া তাহার কথাবলা বন্ধ হইয়া গেল। তাহার কথার উত্তরে সোমেশ্র কলিকাতায় সম্প্রতি কাহাকে কাহাকে দেখিয়াছে, নূতন কি কি গান খুব জনপ্রিয় হইয়াছে, তাহারই গল্প ঘুড়িয়া দিল। নূতনতম থিয়েটারের ষ্টেজটা কি রকম অদ্ভুত আকারের হইয়াছে তাহ পেন্সিল দিয়া স্ট্রাকিম দেখাইতে দেখাইতে হঠাৎ এক সময় সোমেন্দ্ৰ বুঝিতে পারিল যে, শকুন্তলা তাহার কথার এক বর্ণও শুনিতেছে না, সে শুধু একদৃষ্টিতে তাহার মুখের দিকে চাহিমা আছে। সোফার বুগুণগুলিতে ভর দিম্ব সে একটু পিছন হেলিয়া ধসিন্ধা আছে, তাহার চোখ ছুটি অৰ্দ্ধমূদ্রিত। তাঁহারই ভিতর দিয়া সে সোমেন্দ্রকে দেখিতেছে, যেমন ভাবে চিত্রকর তাহার চিত্রের দিকে তাকায় । সোমেন্দ্র নিজের না হঠাৎ সমাপ্ত করিয়া, পেন্সিলটা পকেটে ঢুকাইয়া রাখিল "শকুন্তল বলিল, “তেজেন্দ্র বাবুর সঙ্গে আপনার কি অদ্ভুত সাদৃশ্ব !"