পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ সীতা বললে--এস না, ছুটির আর দেরি বা কত ? তিনটে বেজেচে । আমার মনে হ’ল একটা কি যেন হয়েচে । স্কুল থেকে বেরিয়ে একটু দূর এসেই সীতা বললে— বাবা মারা গিয়েচে ছোড়দা । আমি থমকে দাড়িয়ে গেলাম—সীতার মুথের দিকে চেয়ে , সে যে মিথ্যে কথা বলচে এমন মনে হ’ল না । বললাম—- কখন ? সীতা বললে বেল একটার সময়— নিজের অজ্ঞাতসারে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল-নিয়ে গিয়েচে তো ? অর্থাং গিয়ে মৃতদেহ দেখতে ন হয় । কিন্তু সাত বললেন, নিয়ে এখনও কেউ যাইনি। মা এক কি করবে ?... একবার এসে দেখে পাড়ায় জ্যাঠামশাই বাড়ি নেই-– ছোটকাকা চলে গেলেন--আর আসেন নি। মেজকাকা লোক ৬াকৃতে গেছেন । বাড়িতে ঢুকতেই মা বললেন—ঘরের মধ্যে আয় —মড় টুয়ে বসে থাকৃতে হবে, বোস এখানে । কেউই কাদচে ন । আমারও কান্না পেল না— বরং একটা ভয় এল—একা মড়ার কাছে কেমন ক’রে কতক্ষণ বসে থাকৃব ন জানি ! অনেকক্ষণ পরে শুনতে পেলুম আমাদের পাড়ার কেউ মৃতদেহ নিয়ে যেতে রাঙ্গী নয়, বাবা কি রোগে মার গেছেন কেউ জানে না, তার প্রায়শ্চিত্ত করানো হয়নি মৃত্যুর পূৰ্ব্বে- এ অবস্থায় কেউ সৎকার করতে রাজী নয়। প্রায়শ্চিত্ত এখন না করলে কেউ ও-মড় ছোবে না । প্রায়শ্চিত্ত করাতে পাচ-ছ টাকা না-কি খরচ । আমাদের হাতে অত তো নেই ? মা বললেন। কে যেন বললে—ত এ অবস্থায় হাতে না থাকূলে লোকের কাছে চেয়ে-চিস্তে আনতে হয়, কি আর করা ? দাদাকে মা ও-পাড়ায় কার কাছে যেন পাঠালেন টাকার জন্তে । খানিকটা পরে ও-পাড়া থেকে জনকতক ঘণ্ডামত লোক এল—শুনলাম তারা গালাগালি দিতে দিতে বাড়িতে ঢুক্চে—এমন ছোটলোকের পাড়াও তো কখনও দেখিনি ? কোথায় পাবে এরা যে প্রাচিত্তির করাবে ? প্রাচিত্তির না হ’লে মড় কি সারা দিন রাত ঘরেই পড়ে থাকৃবে ? যত দৃষ্টি-প্রদীপ 는 ছোট লোক স্ব-কোনো ভয় নেই, দেখি মড় বার হয় কিনী । আমি উত্তেজনার মাথায় মড়া ছুয়ে বসে থাকার কথা তুলে গিয়ে তাড়াতাড়ি দোরের কাছে এসে দাড়ালাম। এদের মধ্যে আমি এক জনকে কেবল চিনি-মাঠবাড়ির ফুটবল খেলার ময়দানে দেখেছিলাম । ওরা নিজেরাই কোথা থেকে লাশ কেটে নিম্নে এল— পাট নিয়ে এসে দড়ি পাকালে, তারপর বাবাকে বার করে নিয়ে গেল দাদা গেল সঙ্গে সঙ্গে শ্মশানে। একটু পরে সন্ধ্য। হ’ল । সেজখুড়ীমা এসে বললেন—মুড়ি খাবি জিতু ? আমি ও সীতা মুড়ি খেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । 兴 웃. -န္ဟုိင္ငံး তিন বছর আগেকার কথা এ-সব । তারপর থেকে এই বাড়িতেই আছি । জ্যাঠামশাইর প্রথমে রাজী হননি, দাদ৷ ষষ্ঠীতলায় বটগাছের নীচে মুদীথানার দোকান করেছিল — সামান্য পুজি, আড়াই সের চিনি, পাচ সের ডাল, পাচ সের আটা, পাচ পোয় পালি-মসলা-এই নিয়ে দোকান কতদিন চলে ? দাদ ছেলেমান্তন, তা ছাড়া ঘোরপেচ কিছু বোঝে ন, এক দিক থেকে সব ধারে বিক্রী করেচে, যে ধারে নিয়েচে সে আর ফিরে দোকানের পথ মাড়ায় নি । দোকান উঠে যাওয়ার পরে দাদা চাকুরির চেষ্টায় বেরুলে! সে তার ছোট মাথায় আমাদের সংসারের সমস্ত ভাবন-ভার তুলে নিয়ে বাবার প্রতিনিধি রূপে আমাদের খাওয পরানোর দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমুতে না, সারা দিন চাকবি জে বেড়াত । নস্তির কারখানায় একট। সাত টাকা শঙ্কনের চাকুরি পেলেও— কিন্তু বেশ দিন রইল না, মাস দুই পরে তারা বললে – ব্যবসার অবস্থা খারাপ, এখন লোকের দরকার নেই । মৃতরাং জ্যাঠামশায়ুদের সংসারে মাথা গু জে থাকা ছাড়া আমাদের উপায়ই বা কি ? নিতান্ত লোকে কি বলবে এই ভেবে এর রাঙ্গী হয়েছেন । কিন্তু এখানে আমাদের খাপ খাম্ব না-এখানে মাত্র যে স্বধু এ বাড়িতে তা নয়, এ দেশটার সঙ্গেই খাপ খায় না । বাংলা দেশ আমাদের কারও ভাল লাগে না— আমার না, দাদার না, সীতার না, মায়েরও না । না দেশট দেখতে ভাল, না এখানকার লোকের ভাল । আমাদের চোখে এ দেশ বড় নীচু, আটাসটি,