পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s হমাষাঢ় মরুপথে vువ সোমেন্দ্র বলিল, “আর বলে না, তার উপর ঘূণায় আমার মন যেন ভরে উঠছে।” শকুন্তল হাসিয়া থামিক্স গেল, নিঞ্জের পথোথান লইয়া নাড়াচাড়া করিতে লাগিল । তাঁহার পর বলিল, “এতে তার কোনোই দোধ ছিল না। তঁকে দেখবার আগেই আমি তাকে ভালবেসেছিলাম। অনেক চেষ্টায়, অনেক কষ্টে তার কাছে আমি গিয়ে পৌঁছেছিলাম। নিজের মৃত্যুদও আমি হাসিমুখেই নিয়েছিলাম।” সোমেন্ত্ৰ উঠয় দাড়াইম্বা বলিল, “আমি এইবারে ধাই। তোমার এখন একটু চুপচাপ থাকা উচিত, আমিও এখন আর সূস্থ করতে পারছি না।” শকুন্তলা হাসিমুখে তাহার দিকে একটি হাত বাড়াইম্বা দিয়া বলিল, “সত্যি, তিন সপ্তাহ ধরে এই ব্যাপার সহ করা কম কথা নয়। তোমার চেয়ে অনেক বেশী পাপীরও সব পাপের প্রায়শ্চিত্ত এতে হয়ে যেত।” সোমেন্দ্র তাহার হাতখানি ধরিয়া চেয়ারের পাশে মাটিতে বসিয়া পড়িল । বলিল, “তোমার কাছে থাকতে চাই, তাই আমি আছি। কলকাতায় তোমায় যখন প্রথম দেখি, তারপর থেকে কোনো নারীই আমার জীবনে প্রবেশ করতে পায়নি। তোমার আমার ভাগ্য একসূত্রেই গাথা আছে, ইচ্ছা করলেও তোমাকে আমি ফেলে যেতে পারি না।” শকুন্তলা সোমেন্দ্রের কাধের উপর হাত রাখিয়া বলিল, “ণ, ন, ও-কথা বলে না । জীবনে দুঃখবেদন দেখে দেখে আমার অরুচি ধরে গেছে। ওটা তোমার কিশোর বয়সের একটা ধারণ মাত্র, আমার দুর্দশ দেখে তোমার স্নেহপ্রবণ মনে আবার সেদিনের সুর ভেসে এসেছে এই মাত্র। যে মৃত্যুপথের যাত্রী, তাকে কেউ ওভাবে ভালবাসতে পারে না। আজ যাও এখন, কাল আবার এস।” তাহার নির্ভীক চোখের দৃষ্টির দিকে চাহিয়া সোমেন্ত্র বাহির হুইয়া গেল । কলিকাতাম যেদিন তেজেক্সের নূতন গীতিনাট্যের প্রথম অভিনয়, সেদিন স্বদুর উত্তর-পশ্চিমের এক অখ্যাত পল্লীগ্রামে বসিয়া সোমেন্দ্র মানবের দেহের এবং আত্মার শেষ সংগ্রাম দেখিতে লাগিল। এক-এক বার বোধ হইতে লাগিল শকুন্তলার অজে আস্থা চিরশান্তির দেশে চলিয়া গিয়াছে, আবার বোধ ইতে লাগিল—ন, তাহ! এখনও ঐ ক্ষণভঙ্গুর পিঞ্জরটিকে ত্যাগ করে মাই । শকুন্তলা তখন ধেন স্বপ্নের ঘোরে, সে এমন ভাবে কথা বলিতে লাগিল, সে যেন সারিয়া উঠিয়াছে, কলিকাতায় নিজের প্রিয় কাজের ক্ষেত্রে ফিরিয়া চলিয়াছে । দীনেশু ঘরে টিকিতে পারিতেছিলেন না, দরজার বাহিরে একথান খাট টানিয়া লইয়া শুইয়াছিলেন । সোমেন্দ্র এক দৃষ্টিতে মোমবাতির আলোটার দিকে চাহিয়া বসিয়াছিল, তাহার চোখ খেল ব্যথা করিতেছিল। ক্রমে তাহারও মাথ৷ ফুকিয় পড়িল, সে চেয়ারে বসিয়া বসিয়াই ঘুমাইতে লাগিল। সে স্বপ্ন দেখিতে লাগিল যেন তেজেক্সের নাটকের অভিনয় দেখিতেছে। দর্শকদের করতালির শব্দ সে শুনিতেছে, রাশি রাশি পুপবৃষ্টি সে দেখিতেছে । ফুলে স্বরের মেঝে পূর্ধান্ত যেন ঢাকিয় গেল। সেই ফুলগুলি মাড়াইতে মাড়াইতে তেজেন্দ্ৰ যেন অগ্রসর হইয়া আদিতেছে । তাহার পাশে সেদিনকার প্রধান গায়িক, একটি হরিপনমুনা তরুণী । নাস আসিয়া তাহার কাধে অল্প একটু ঝাকুনি দিল, সে চমকিয়া জাগিয়া উঠিল। নাস হাত দিয়া মোমবাতিটা আড়াল করিয়া গাড়াইয়া আছে । সোমেন্দ্র চাহিয়া দেখিল, শকুন্তলার মোহের ঘোর কাটিয়া গিয়াছে, সে সোমেন্দ্রের দিকেই তাকাইয়৷ আছে । তাছাকে নিজের বাহুর উপর ভর দিয়া বগাইয় লোমেন্দ্র ধীরে ধীরে বাতাস করিতে লাগিল। শকুন্তল৷ উজ্জল চোথে তাহার দিকে তাকাইম্ব বলিল, “তেজেঞ্জ, প্রিয়, প্রিয়তম আমার ” দীর্ঘশ্বাস ফেলিক্স সোমেন্দ্র তাহাকে শোয়াইম্ব দিল, দিয়া দীনেন্দ্রকে ডাকিতে গেল। ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, শকুন্তলার দুঃখের রাত্রির অবসান হইয়াছে। দুই দিন পরে এলাহাবাদ ষ্টেশনে লোমেন্দ্র ট্রেনের অপেক্ষায় দাড়াইয়া ছিল। দীনেন্দ্র তাহার পাশে দাড়াইয়া, কিন্তু দু-জনেই নীরব । সোমেন্দ্র অসহিষ্ণুভাযে রেলের লাইনের দিকে কেবলই তাকাইতেছে, পাশে তাহার জিনিষের ভূপ। দীনেন্দ্রও অস্থির হইয় উঠিয়াছেন, এই ছুটি মানুষ এখন পরম্পরের নিকট হইতে বিদায় লইতে পরিলে বাচে। ,