পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

81&e সামনের ‘সেটিতে এক মধ্যবয়স্ক নারী ব’সে, শুষ্ক মুখ, শীর্ণ দেহ, চোখ দুটি অস্বাভাবিক জলজল করছে। কোণে গদিজাট চেয়ারে এক তরুণ যুবক, কালে কোকড়াল চুল, কবির মত স্বপ্নভর চোখ । রজনীগন্ধ-ভরা ফুলদানির পাশে দোলানে-চেয়ারে এক তরুণী, বর্ষামাত শ্বেতকরবীর মত করুণ সুন্দর। অপর দিকে এক কিশোরী মহু রঙের শাড়ী প’রে শ্রাবণ-জ্যোৎস্নায় অপরাজিত লতার মত মধুর উদাস । আরও অনেক বিচিত্রবেণী বিভিন্ন বয়সের নরনারী । মনে হ’ল, তাদের যেন কোন স্বপ্নে দেখেছি, চেনা হয়েছিল, কিন্তু জান হয় নি, সব ভুলে গেছি। মোট লোকটি পরিহাসের সুরে হেসে উঠল,—ভয় নেই, চেয়ারটায় ব’স, ‘ভারতী’তে ক্লাউন’ ব’লে একটি গল্প লিখেছিলে মনে পড়ে ? —ই, সে ত তিন বছর আগে হবে । . —আমি সেই ক্লাউন, আমার কথাই তুমি লিখে নাম করেছিলে । আমার আ সিার বিশেষ ইচ্ছা ছিল ন}, কিন্তু এরা, বিশেষ ক’রে ইনি, কিছুতেই ছাড়লেন না । রঙ্গভর চোখ নাচিয়ে সে শীর্ণ নারীটির দিকে চাইল । ক্লাউন বলতে লাগল, ‘ম।’ গল্পট মনে পড়ে, ইনি সেই ম{ ; তোমার গল্পে এর সাত বছরের ছেলে টাইফরেডে মার! যায়, চার বছর ধ’রে ইনি মৃত ছেলের জন্য শোক করছেন, প্রতীক্ষা করছেন, এখন এসেছেন তোমার কাছে, তার প্রতি কেন এ অবিচার, কেন তার ছেলে মারা যাবে, তুমি ত তার ছেলেকে বাচিয়ে দিতে পারতে। আর এর সব তোমার গল্প উপস্তাসের নায়ক-নায়িকার। —ওই হচ্ছে বিশু পাগল কোণে গুম হয়ে ব’সে আছে, ওই তোমার তরুণ কবি রেবস্ত, ওই মাধবী কেশে শ্বেতকরবীর মাল জড়িয়েছে, ওই চিরবিরহিণী অপরাজিত—এর এসেছেন তোমার বিচার করতে, তুমি তোমার খুশীমত র্তাদের জীবন গড়েছ, ভেঙেছ, কেন তার এত দুঃখ পাবেন চিরদিন, তুমি কি ওঁদের স্বাধী করতে পারতে না ? হা, হা, এবার বড় মুস্কিলে পড়েছ, লেখক । ব্যঙ্গের সুরে সে উচ্চৈস্বরে হেসে উঠল, যেন জীবনটা একটা অট্টহাস্ত । ধীরে বললুম,—আমি লেখক মাত্র, মানৰ-সংসারে যদি "প্রবাসীস্ট ఏSBS দুঃখ, মৃত্যু, বিচ্ছেদ না থাকত আমিও সে-কথা লিখতুম ন, আমার কি অপরাধ ? শীর্ণ নারী ব্যথিত স্বরে ব’লে উঠল, কার কি অপরাধ আমি জানি না, বুঝি না, আমি চাই আমার ছেলেকে, আমার মাণিককে ফিরিয়ে দাও । - --আমি চাই আমার স্বামীকে, কেন তিনি আমার ত্যাগ ক’রে চলে যাবেন এক ঘণিত নারীর সঙ্গে । —-আমি চাই আমার প্রেমিক, আমার অজিতকে, সে ত সত্যি আমায় ভালবাসত, আমায় বিবাহ করবে বলেছিল, তুমি কি আমার মুখ-মিলন কথা লিখে তোমার উপন্যাস শেষ করতে পারতে ন ? কেন তুমি আনলে ইন্দ্রাণীকে, অজিত তার রূপ দেখে ভুলে গেল, আমাকে তাগি ক’রে চলে গেল—আমাদের প্ৰেম-মিলনপথে তুমি কেন আনলে ইন্দ্রাণীকে ? --আর আমি ? হৈমন্তীকে আমার মত কে তালৰাসত, কে ভালবাসে, নিজ হাতে তাকে আমি খুন করলুম, হৈমন্তী শরৎ-শেফালির মত পবিত্র নিষ্পাপ, তাকে আমি সন্দেহ করলুম ; কেন তুমি শরতকে আনলে আমাদের জীবনে, সে শুধু আমার মনে সন্দে জাগতি, নিজ স্ত্রীকে ভাবলুম, অবিশ্বাসিনী, তুমি লেখক শরতের চরিত্র একে পেলে বাহব, আমি লুম স্ত্রী-হত্যাকারী ! বললুম,—দেথ তোমরা যদি একে একে তোমাদের কথা বল, তাহলে তোমাদের নান প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করতে পারি । শীর্ণ নারী ব’লে উঠলেন, আগে অামার উত্তর দাও কেন আমার ছেলে মরবে, টাইফয়েড রোগ থেকে ত কত ছেলে সেরে ওঠে, তুমি কি গল্পে লিখতে পারতে না আমার ছেলে সেরে উঠল ? বললুম, ম, তুমি কি ভাবে, তোমার ছেলের মৃত্যুতে আমার অস্তরের বাথ, তোমার ব্যথার চেয়ে কিছু কম ; তুমি জানে, আমিও তোমারই মত তোমার রুগ্নশিশুর শিয়রে রাতের পর রাত ভয়ব্যাকুল চক্ষে জেগেছি ; তুমি জানে, আমিও তোমারই মত তার রোগমুক্তির জন্য প্রার্থন করেছি। মনে পড়ে, যে-রাতে তোমার ছেলের মৃত্যু হয়সন্ধ্যায় ডাক্তার ব’লে গেল, খোক অনেকটা ভাল আছে, সেই